পশুত্ব বিসর্জন দিয়ে তাকওয়া অর্জনই কোরবানির শিক্ষা
যাবীন তাসমিন ছানা
প্রকাশ: ৩০ জুলাই ২০২০, ০১:৫৭ পিএম
ছবি: সংগৃহীত
আল্লাহর প্রতি ভালোবাসা লাভের উদ্দেশ্যে কিছু বিসর্জন দেয়াকে কোরবানি বলা হয়। আর্থিকভাবে সামর্থ্যবান (ছাহেবে নিসাব) ব্যক্তির উপর কোরবানির হুকুম পালন ওয়াজিব।
সামর্থ্য থাকা সত্ত্বেও কেউ যদি কোরবানির মতো ইবাদত থেকে বিরত থাকে, তাহলে সে ব্যক্তি গুনাহগার হবেন। আল্লাহর হুকুমের আনুগত্যের মধ্যে কোরবানি একটি বিশেষ আমল। যার সম্পর্কে নামাজের পাশাপাশি আয়াত নাজিল হয়েছে।
আল্লাহ বলেন, তোমার প্রভুর নামে সালাত আদায় কর এবং কোরবানি কর। (সূরা কাউসার, আয়াত নম্বর : ২)
ঈদুল আজহার কোরবানির পশু কিনে হাট থেকে বের হওয়ার সময় কিছু প্রশ্নের সম্মুখীন হতে হয়। ভাই কতো দিয়ে কিনলেন? বাহ্ জিতেছেন অথবা আহ্ ঠকেছেন।
কথাগুলো শুনে ক্রেতা কখনো খুশি কখনও হতাশ হন। অথচ কোরবানির পশুকে আল্লাহ তার মহিমার প্রতীক করেছেন এবং বলেছেন তোমাদের জন্য এতে রয়েছে বিপুল কল্যাণ।
সুতরাং দাম কম দিয়ে কিনতে পারলেন বলে জিতেছেন ভেবে খুশি হবেননা। বরং আপনার তাকওয়া ঠিক রাখতে পারলেই আপনি জিততে পারবেন।
কোরবানির সময়কাল আল্লাহর নৈকট্য লাভের জন্য উত্তম সময়। কোরবানির পশু জবেহ করার সঙ্গে বান্দার তাকওয়া অর্জনের সম্পর্ক থাকে। আল্লাহর কাছে উৎসর্গকৃত পশুর রক্ত মাংস কোনো কিছুই পৌঁছায় না। শুধুমাত্র বান্দার তাকওয়া পৌঁছায়
পবিত্র কোরআনে বর্ণিত হয়েছে, এসব পশুর রক্ত, গোশত আল্লাহর কাছে কিছুই পৌঁছে না। বরং তোমাদের পক্ষ থেকে তোমাদের তাকওয়াই তার কাছে পৌঁছে। (সূরা হজ্জ, আয়াত নম্বর: ৩৭)
সমস্ত কাজের ফলাফল নিয়তের উপর নির্ভর করে। লোক দেখানো কোরবানি বা আমল কখনো আল্লাহপাক কবুল করেন না। একমাত্র আল্লাহকে ভয় এবং খুশি করার নিয়তে কোরবানি হলে তা কবুল হয়।
কালামে পাকে বলা হয়েছে, নিশ্চয়ই আমার নামাজ, আমার কোরবানি, আমার জীবন, আমার মরণ সবই সারা জাহানের প্রতিপালক আল্লাহর জন্য নিবেদিত। তার কোনো শরীক নেই। (সূরা আনআম, আয়াত: ১৬২-৬৩)
কোরবানির পশুর গোশতের মধ্যে অফুরন্ত কল্যাণ নিহিত রয়েছে। এ গোশত নিজের পরিবার পরিজন আত্মীয়স্বজন অসহায় গরিব মানুষদের মধ্যে বিলি বন্টন করে খাওয়ার কথা বলা হয়েছে।
ধনীর সম্পদে যেভাবে অসহায় মানুষের অধিকার রয়েছে, অনুরূপ কোরবানির পশুর গোশতেও অসহায় গরিব দুস্থ প্রতিবেশীর অধিকার রয়েছে। পশুর গোশত দুস্থদের মধ্যে বিলি বণ্ঠন করে ধনী গরিবের ঈদ আনন্দ ভাগাভাগী করে গ্রহণ করতে হবে।
কোরবানির পশু জবাই করার মধ্য দিয়ে ত্যাগ ও মহিমার উৎকৃষ্ট উদাহরণ দেখা যায়। সব আবেগ অনুভূতিকে বিসর্জন দিয়ে কোরবানি পালন করতে হয়।
দুনিয়ার সব লোভ লালসা মায়া মমতা ও আমিত্বকে বিসর্জন করে একমাত্র আল্লাহর নৈকট্য প্রেমে কোরবানিকে উৎসর্গ করতে হয়।
মূলত কোরবানির বাস্তব হাকিকত হলো তাই। মানবের ভিতর যে পশু শক্তি লুকিয়ে আছে তা বিসর্জন দিয়ে একমাত্র তাকওয়া অর্জনই হলো কোরবানির শিক্ষা।
লেখক: শিক্ষার্থী, জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়