
ছবি: সংগৃহীত
আজ ৪র্থ তারাবিতে সুরা নিসার ১২তম রুকুর শুরু থেকে সুরার শেষ রুকু; অর্থাৎ ৮৮ থেকে ১৭৬ নম্বর আয়াত পর্যন্ত পড়া হবে। সঙ্গে সুরা মায়েদার প্রথম রুকু থেকে ১১তম রুকুর মাঝামাঝি অংশ, ১ থেকে ৮২ নম্বর আয়াত পর্যন্ত পড়া হবে। পারা হিসেবে আজ পড়া হবে পাঁচ পারার শেষার্ধ থেকে শুরু করে ছয় পারার পুরো অংশ।
৪. সুরা নিসা: ৮৮-১৭৬
১২তম রুকু। ৮৮ থেকে ৯১ নম্বর আয়াত পর্যন্ত আল্লাহতায়ালা মুমিনদের উদ্দেশ্য করে মোনাফিকদের সম্পর্কে বলেছেন- মোনাফিকদের ব্যাপারে কোনো দ্বিধায় থাকা যাবে না। পাক্বা ইমান আনলে তারা মুমিনদের ভালোবাসা ও সহযোগিতা পাবে, নয়তো তাদের সঙ্গে মুমিনদের কোনো সম্পর্ক নেই।
১৩তম রুকু। ৯২ থেকে ৯৬ নম্বর আয়াতে ভুলক্রমে কোনো মুমিন অন্য মুমিনকে হত্যা করলে কী ক্ষতিপূরণ দিতে হবে সে সম্পর্কে বলা হয়েছে। আরও বলা হয়েছে, যুদ্ধের ময়দানে বুদ্ধিমত্তার সঙ্গে শত্রুমিত্র পার্থক্য করা জানতে হবে। আর যারা সক্ষম হওয়া সত্ত্বেও জিহাদের ডাকে সাড়া না দিয়ে ঘরে বসে থাকে, তারা কখনব মর্যাদাবান মুমিনদের কাতারে শামিল হতে পারবে না।
১৪তম রুকু। ৯৭ থেকে ১০০ নম্বর আয়াতে নির্যাতনে অসহ্য হয়ে কেউ যেন নিজেই নিজেকে হত্যা না করে বসে। বরং সে যেন অন্য কোথাও হিজরত করে সে নির্দেশ দেয়া হয়েছে।
১৫তম রুকু। ১০১ থেকে ১০৪ নম্বর আয়াতে ভয়কালীন নামাজ ও যুদ্ধকালীন নামাজ পড়ার বিধান ও নিয়ম বলে দেয়া হয়েছে। বলা হয়েছে- শত্রুর সঙ্গে মোকাবেলায় কোনো ধরনের শিথিলতা বা দুর্বলতা দেখানো যাবে না।
১৬ থেকে ১৮তম রুকু। ১০৫ থেকে ১২৫ নম্বর আয়াতে মুমিনদের উদ্দেশ্য করে বিভিন্ন নসিহত করা হয়েছে। অপরাধীদের পক্ষ নিয়ে ওকালতি নয়, বরং তাদের জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করাই মুমিনদের কর্তব্য। গোনাহ করার পর কেউ ক্ষমা চাইলে অবশ্যই আল্লাহ তাকে ক্ষমা করবেন। তবে মনে রাখতে হবে, কেউ যদি গোনাহ করে, সে আসলে নিজেরই ক্ষতি করে। তাই গোনাহ থেকে দূরে থাকতে হবে। পাশাপাশি নিজের গোনাহর দায়ভার অন্যের ওপর চাপানো থেকে মুক্ত থাকতে হবে।
১৯তম রুকু। ১২৭ থেকে ১৩২ নম্বর আয়াতে নারীদের ব্যাপারে কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ পারিবারিক বিধান দেয়া হয়েছে। কোনো নারী যদি তার স্বামী থেকে অবজ্ঞা-অবহেলা পেয়ে থাকে- তা হলে তার করণীয় কী এ সম্পর্কে বিজ্ঞানভিত্তিক যৌক্তিক পরামর্শ দিয়েছেন আল্লাহতায়ালা।
২০ ও ২১তম রুকু। ১৩৫ থেকে ১৫২ নম্বর আয়াতে মুমিনদের সত্যের ওপর অটল থাকার হেদায়েত করা হয়েছে। আর মোনাফিকদের ব্যাপারে সজাগ-সতর্ক থাকার নির্দেশ দেয়া হয়েছে। মোনাফিকরা আল্লাহ ও মুমিনদের ধোঁকা দিতে চায়। কিন্তু তারা নিজেরাই ধোঁকার মধ্যে পড়ে রয়েছে। তাদের জন্য রয়েছে জাহান্নামের সর্বনিম্ন স্তর।
২২ থেকে ২৪ রুকু। ১৫৩ থেকে ১৭৬ নম্বর তথা শেষ আয়াত পর্যন্ত কাফিরদের প্রশ্নের জবাবে মুসা (আ.) ও অন্যান্য নবীর দৃষ্টান্ত তুলে ধরা হয়েছে। বলা হয়েছে- ওই সব নবীও সত্যের বাণী প্রচার করতে গিয়ে আরও কঠিন ও জটিল সমস্যার মুখোমুখি হয়েছেন। এসব সমস্যা মোকাবেলার জন্য হেকমতের সঙ্গে কাজ করতে হবে। আরও কিছু নির্দেশ ও আইনি বিধান দিয়ে সুরার ইতি টানা হয়েছে।
৫. সুরা মায়েদাহ : ১-৮২
সুরা মায়েদাহ অবতীর্ণ হয়েছে মদিনায়। এর আয়াত সংখ্যা ১২০ এবং রুকু ১৬টি। আজ পড়া হবে ১১তম রুকু পর্যন্ত।
সুরার প্রথম রুকু। ১ থেকে ৫ নম্বর আয়াত পর্যন্ত ইহরাম অবস্থায় শিকার করা নিষিদ্ধ এবং কোন প্রাণী খাওয়া হারাম ও কোন প্রাণী খাওয়া হালাল এসব নির্দেশনা দেয়া হয়েছে।
দ্বিতীয় রুকু। ৬ থেকে ১১ নম্বর আয়াতে অজুর বিধান এবং মুমিনদের আল্লাহর অনুগত ও কৃতজ্ঞ বান্দা হওয়ার নির্দেশ দেয়া হয়েছে।
তৃতীয় রুকু। ১২ থেকে ১৯ নম্বর আয়াতে বিভিন্ন ধর্ম বিশ্বাসী, ইহুদি-খ্রিস্টানদের দল-উপদলের বিভিন্ন আকিদার অসারতা সংক্ষিপ্ত ও যুক্তিসঙ্গতভাবে প্রমাণ করা হয়েছে।
৪র্থ রুকু। ২০ থেকে ২৬ নম্বর আয়াতে নির্দিষ্ট করে ইহুদিদের হঠকারিতা সম্পর্কে বলা হয়েছে। তারা মুসা (আ.)-এর সঙ্গে কত নিচু আচরণ করেছে তা এই রুকুতে বিস্তারিত বলা হয়েছে।
পঞ্চম রুকু। ২৭ থেকে ৩৪ নম্বর আয়াতে আদম (আ.)-এর দুই পুত্র হাবিল ও কাবিলের ঘটনা বলা হয়েছে। কীভাবে এক ভাই অন্যায়ভাবে আরেক ভাইকে হত্যা করে জাহান্নামি হয়ে গেছে- তা বিস্তারিত বলা হয়েছে।
ষষ্ঠ রুকু। ৩৫ থেকে ৪৩ নম্বর আয়াতে মুমিনদের আল্লাহভিরু হওয়ার নির্দেশ দেয়া হয়েছে। চোরের হাত কাটার বিধান এবং মোনাফিকদের আচার-আচরণে কষ্ট না পাওয়ার পরামর্শ দেয়া হয়েছে।
সপ্তম রুকু। ৪৪ থেকে ৫০ নম্বর আয়াতে ইহুদি ও খ্রিস্টানদের বিষয়ে বিস্তারিত বলা হয়েছে। বলা হয়েছে- তাওরাত ও ইঞ্জিলের বিধান ছিল আল্লাহ প্রদত্ত বিধান। আর কোরআন হলো ওই দুই কিতাবের সত্যায়ক। তাই তাওরাত ও ইঞ্জিলের মতো এই সময়ও আল্লাহর কিতাব কোরআন অনুযায়ী পরস্পরের মাঝে ফায়সালা করতে হবে।
ধর্ম নিয়ে বাড়াবাড়ি নয়; বরং প্রত্যেকে ভালো কাজ করতে থাকুক। কে সত্যবাদী আর কে মিথ্যাবাদী সে ফায়সালা করবেন আল্লাহতায়ালা।
অষ্টম রুকু। ৫১ থেকে ৫৬ নম্বর আয়াতে ইসলাম বিরোধীমনা ইহুদি ও খ্রিস্টানদের বন্ধু না বানানোর নির্দেশ দেয়া হয়েছে। বলা হয়েছে, এ ধরনের কাজ অন্তরে রোগ আছে এমন মোনাফিকরাই করে থাকে। আরও বলা হয়েছে, ইমানদের আসল বন্ধু আল্লাহ এবং তার রাসুল। যারা আল্লাহ, আল্লাহর রাসুল এবং মুমিনদের বন্ধু বানায়, তারাই দুনিয়া ও আখেরাতে সফল হয়।
নবম রুকু। ৫৭ থেকে ৬৬ নম্বর আয়াতেও আহলে কিতাব ও মোনাফিকদের নানান আচরণ ও চরিত্র সম্পর্কে আলোচনা করা হয়েছে। মোনাফিকরা মুখে বলে আমরা নবীর কথা মেনে নিয়েছি, আর অন্তরে তারা নবীর বিরুদ্ধে, ইসলাম ও কোরআনের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করে। এদের অনেকেই জুলুমবাজ ও হারামখোর। আলেমরা তাদের এসব কাজ নিষেধ না করে বড় ধরনের গোনাহ করছে।
দশম রুকু। ৬৭ থেকে ৭৭ নম্বর আয়াতে আহলে কিতাবদের পক্ষ থেকে বিশেষ করে হজরত ঈসা (আ.)-এর অনুসারীরা যে ধরনের ভ্রান্ত আকিদা পোষণ করে থাকে, তার অসারতা তুলে ধরা হয়েছে। আরও বলা হয়েছে, আহলে কিতাব অর্থাৎ ইহুদি ও খ্রিস্টান এবং সাবেয়িদের মধ্যে যারাই আল্লাহ এবং পরকালের জবাবদিহিতায় বিশ্বাস করবে, সে অনুযায়ী সৎজীবনযাপন করবে, তাদের কোনো ভয় নেই, তাদের কোনো চিন্তাও নেই।
১১তম রুকুর প্রথমার্ধে অর্থাৎ ৭৮ থেকে ৮২ নম্বর আয়াতে খ্রিস্টানদের মধ্যে যারা হজরত ঈসা ও মরিয়ম (আ) সম্পর্কে ভ্রান্ত আকিদায় বিশ্বাসী, তাদের নিন্দা করে বলা হয়েছে- এ ধরনের কাজে না ঈসা মসিহ (আ.) সন্তুষ্ট, না তার মা মরিয়ম (আ.) তোমাদের ওপর সন্তুষ্ট। এভাবে আহলে কিতাবদের ঘুমন্ত বিবেকের দরজায় কশাঘাত করা হয়েছে।