
প্রিন্ট: ২৫ এপ্রিল ২০২৫, ০৫:১৩ এএম
চলতি বছর ৮৫ হাজার ভারতীয়কে ভিসা দিল চীন, বন্ধুত্বের বার্তা শি জিনপিংয়ের

অনলাইন ডেস্ক
প্রকাশ: ১৬ এপ্রিল ২০২৫, ১২:৫৪ পিএম

আরও পড়ুন
২০২৫ সালের প্রথম চার মাসে মোট ৮৫ হাজার ভারতীয়কে ভিসা দিয়েছে চীন, যা এককথায় অভূতপূর্ব বলে মনে করছেন কূটনীতিবিদেরা। ট্রাম্পের শুল্কারোপের মধ্যে বন্ধুত্বের বার্তা দিলেন চীনের প্রেসিডেন্টে শি জিনপিং।
একদিকে যখন যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে তীব্র কূটনৈতিক লড়াই চলছে চীনের, ঠিক তখনই ভারতীয়দের ভিসা দেওয়ার ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ নিলো চীন। পরিসংখ্যান বলছে, ২০২৫ সালের ১ জানুয়ারি থেকে ৯ এপ্রিলের মধ্যে মোট ৮৫ হাজার ভারতীয়কে ভিসা দিয়েছে চীন, এক কথায় যা অভূতপূর্ব।
শুধু ভিসা দেওয়াই নয়, ভারতে বসবাসকারী চীনের রাষ্ট্রদূত সু ফেইহং এক্স হ্যান্ডেলে লিখেছেন, ‘আমরা চাই আরও বেশি ভারতীয় বন্ধু চীনে যান। চীনের মুক্ত, নিরাপদ, প্রাণবন্ত সংস্কৃতির সঙ্গে পরিচিত হোন।’
ভারতীয়দের জন্য বিশেষ সুবিধা
আরও বেশি ভারতীয় যাতে চীনে যেতে পারেন, তার জন্য বেশ কিছু ছাড় দিয়েছে চীনের প্রশাসন। ভারতীয়দের এখন আর অন লাইন অ্যাপোয়েন্টমেন্ট চাইতে হবে না। চীনের দূতাবাস বা কনসুলেটে গিয়ে সরাসরি ভিসার দরখাস্ত জমা দেওয়া যাবে। অল্প দিনের জন্য চীনে গেলে ভারতীয়দের বায়োমেট্রিক তথ্য দিতে হবে না। এর ফলে অনেকটাই সময় বাঁচবে। সবচেয়ে বড় কথা, ভিসার মূল্য আগের চেয়ে অনেকটাই কমিয়ে দেওয়া হয়েছে।
ভারতের লাদাখ সীমান্তে ঢুকে পড়ছে চীন?
চীনের দূতাবাস থেকে জানানো হয়েছে, ভিসা প্রসেস করার সময় আগের চেয়ে অনেক কমিয়ে ফেলা হয়েছে। বিজনেস এবং পর্যটন দুই ক্ষেত্রেই অনেক কম সময়ে ভিসা দেওয়া হচ্ছে।
এছাড়াও ভারতীয় পর্যটকদের আকর্ষণ করার জন্য চীনের দূতাবাস এবং কনসুলেটগুলো বেশ কিছু প্রমোশন শুরু করেছে। দেশের বিভিন্ন শহর এবং উৎসবগুলি নিয়ে বিশেষ পর্যটন প্যাকেজ তৈরি করা হচ্ছে।
ভারত-চীন সম্পর্ক
ভারত এবং চীন এশিয়া-প্যাসিফিকে একাধিক মঞ্চ এবং ব্লকে আছে। তবে গত বেশ কিছু বছরে দুই দেশের সম্পর্ক ক্রমশ খারাপ হয়েছে। লাদাখে গালওয়ান লড়াইয়ের পর দুই দেশ কার্যত যুযুধান দুই পক্ষে পরিণত হয়েছিল। কোভিড পরবর্তীকালে দুই দেশ কিছুটা কাছাকাছি এলেও সম্পর্ক এখনো সম্পূর্ণ স্বাভাবিক হয়নি। এই পরিস্থিতিতে চীনের এই অবস্থান গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে করা হচ্ছে।
ট্রাম্পের সঙ্গে লড়াই
শুল্ক নিয়ে কার্যত এক অর্থনৈতিক লড়াই শুরু হয়েছে চীন এবং যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে। যুক্তরাষ্ট্র চীনা পণ্যের উপর ১৪৫ শতাংশ পর্যন্ত শুল্ক ধার্য করেছে। পাল্টা শুল্কনীতি নিয়েছে চীনও। এই পরিস্থিতিতে ভারতে চীনা দূতাবাসের মুখপাত্র ইউ জিং বলেছেন, ‘চীন এবং ভারতের অর্থনৈতিক এবং বাণিজ্যিক সম্পর্ক পরস্পরের পরিপূরক। যুক্তরাষ্ট্র যে শুল্কনীতি নিয়েছে, তার মোকাবিলায় দুই দেশ পরস্পরকে সাহায্য করতে পারে।’ ইউ জিং বলেছেন, ‘যুক্তরাষ্ট্র যে শুল্ক-যুদ্ধ শুরু করেছে তাতে কারও হার বা জিত হবে না।’
সীমান্তে লাইন অব অ্যাকচুয়াল কন্ট্রোলে ভারত-চীন উত্তেজনা পুরোপুরি স্তিমিত হয়ে যায়নি। লাদাখ এবং অরুণাচলে এখনো নিয়মিত স্ট্যান্ডঅব হচ্ছে। তবে চীনের এই পদক্ষেপ দুই দেশের মধ্যে সম্পর্ক কিছুটা হলেও নরম করবে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।
ভিসা ইস্যুর এই বৃদ্ধি ভারত ও চীনের মধ্যে সাংস্কৃতিক, শিক্ষাগত, ব্যবসায়িক এবং পর্যটন বিনিময়কে উৎসাহিত করার জন্য নতুন করে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ হওয়ার প্রতিফলন। চীন দীর্ঘদিন ধরে ভারতীয় শিক্ষার্থীদের, বিশেষ করে যারা মেডিকেল ডিগ্রি অর্জন করছেন তাদের জন্য একটি জনপ্রিয় গন্তব্য। হাজার হাজার শিক্ষার্থী চীনা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হয়েছেন। মহামারির কারণে ভ্রমণে নিষেধাজ্ঞা জারি হওয়ার কারণে অনেক ভারতীয় শিক্ষার্থী তাদের পড়াশোনা চালিয়ে যেতে অক্ষম হয়ে পড়েছিলেন। ভ্রমণ পুনরায় শুরু করার বিষয়টিকে অনেকেই স্বাগত জানিয়েছেন।
সূত্র: ডয়চে ভেলে