
প্রিন্ট: ২৫ এপ্রিল ২০২৫, ০৩:০৯ এএম
এফ-১৬ চুক্তিতে গতি কমিয়ে এফ-৩৫’র দিকে ঝুঁকছে তুরস্ক

আন্তর্জাতিক ডেস্ক
প্রকাশ: ১৬ এপ্রিল ২০২৫, ১১:০৪ এএম
-67ff3a7406531.jpg)
আরও পড়ুন
এফ-১৬ চুক্তিতে গতি কমিয়ে এফ-৩৫’র দিকে ঝুঁকছে তুরস্ক
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র থেকে বিলিয়ন ডলারের এফ-১৬ যুদ্ধবিমান কেনার চুক্তিতে গতি কমিয়ে নতুন করে এফ-৩৫ প্রকল্পে ফিরে যাওয়ার উদ্যোগ নিচ্ছে তুরস্ক। ঘনিষ্ঠ সূত্রের বরাতে মধ্যপ্রাচ্যভিত্তিক সংবাদমাধ্যম মিডল ইস্ট আই এই তথ্য জানিয়েছে।
তুর্কি প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইয়েপ এরদোগান গত মার্চে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সঙ্গে এক ফোনালাপে এফ-৩৫ বিমান কেনার তুরস্কের আবেদন পুনর্বিবেচনার আহ্বান জানান। এরপর দুই দেশের মধ্যে শুরু হয় আলোচনার নতুন পর্ব, যার মূল লক্ষ্য ২০১৯ সালে তুরস্ককে এফ-৩৫ প্রকল্প থেকে বাদ দেওয়ার পেছনের প্রধান কারণ—রাশিয়ার তৈরি এস-৪০০ ক্ষেপণাস্ত্র প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা কেনা—সমাধানের পথ খোঁজা।
তুরস্ক এর আগে এফ-৩৫ কনসোর্টিয়ামের অন্যতম প্রধান অংশীদার ছিল এবং বেশ কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ যন্ত্রাংশ উৎপাদনের দায়িত্বেও ছিল। বর্তমানে যুক্তরাষ্ট্রে ছয়টি সম্পূর্ণ প্রস্তুত এফ-৩৫ যুদ্ধবিমান সংরক্ষিত রয়েছে, যেগুলো তুরস্কের জন্য তৈরি এবং পূর্ণ অর্থ পরিশোধ করা হয়েছে। কিন্তু ২০১৯ সালের পর থেকে সেগুলো অনিশ্চয়তার মধ্যে পড়ে আছে।
তুরস্কের পররাষ্ট্রমন্ত্রী হাকান ফিদান এ মাসের শুরুর দিকে জানান, দুই পক্ষের আইনি বিশেষজ্ঞরা এমন একটি বাস্তবসম্মত পথ খুঁজছেন, যা এস-৪০০-সংক্রান্ত নিষেধাজ্ঞা তুলে নেওয়ার সুযোগ সৃষ্টি করতে পারে।
এতে শুধু এফ-৩৫ নয়, প্রায় ২০ বিলিয়ন ডলারের অস্ত্র ও গোলাবারুদ কেনার পথও খুলে যেতে পারে।
গত বছর তুরস্ক তার এফ-১৬ সংগ্রহ পরিকল্পনা ছোট করে ৭৯টি আধুনিকায়ন কিট বাদ দিয়ে ৪০টি নতুন এফ-১৬ ভাইপার ও সংশ্লিষ্ট গোলাবারুদ কেনার সিদ্ধান্ত নেয়, ফলে চুক্তির মূল্য ২৩ বিলিয়ন ডলার থেকে কমে ৭ বিলিয়নে দাঁড়ায়।
একটি সূত্র মিডল ইস্ট আই কে জানায়, তুরস্ক এফ-১৬ চুক্তিতে ব্রেক চাপিয়েছে। আঙ্কারার দেয়া ডাউন পেমেন্ট যদি ওয়াশিংটন সম্মত হয়, তবে তা এফ-৩৫ প্রকল্পে স্থানান্তরিত হতে পারে।
তবে তুরস্ক চুক্তি বাতিল করছে না, বরং প্রাধান্য দিচ্ছে এফ-৩৫ প্রকল্পকে। তুরস্কের প্রতিরক্ষামন্ত্রী ইয়াশার গুলার গত নভেম্বরেই বলেন, এফ-১৬ চুক্তির জন্য তারা ১.৪ বিলিয়ন ডলার আগাম পরিশোধ করেছে।
আরেকটি সূত্র জানায়, যেহেতু উভয় যুদ্ধবিমানই তৈরি করে মার্কিন কোম্পানি লকহিড মার্টিন, তাই অর্থ স্থানান্তর প্রযুক্তিগতভাবে সম্ভব।
সূত্রটি বলেছে, এফ-১৬-এর জন্য দীর্ঘ উৎপাদন সারি রয়েছে। তুরস্ককে প্রথম ডেলিভারির জন্য কয়েক বছর অপেক্ষা করতে হতে পারে।
বুলগেরিয়া তিন বছর পর তাদের প্রথম এফ-১৬ হাতে পায়, সেটিই উদাহরণ হিসেবে তুলে ধরা হয়।
তুরস্ক যদি আবার এফ-৩৫ প্রকল্পে যুক্ত হয়, তাহলে সংরক্ষিত ছয়টি যুদ্ধবিমান দ্রুত বুঝিয়ে দেওয়া সম্ভব হবে। পার্লামেন্টে এক আলোচনায় গুলার বলেছিলেন, আঙ্কারা মোট ৪০টি এফ-৩৫ কেনার পরিকল্পনা করছে।
কৌশলগত গুরুত্ব ও প্রতিবেশী চাপ
এই পরিবর্তন পূর্ব ভূমধ্যসাগরীয় অঞ্চলে শক্তির ভারসাম্যে কৌশলগতভাবে গুরুত্বপূর্ণ। গ্রিস ২০২৮ সালে তার প্রথম এফ-৩৫ পাবে, অথচ তুরস্কের পুরনো এফ-১৬ বহর নানা সমস্যার মুখে। তুরস্ক সিরিয়াসহ বহু অঞ্চলে বিমানঘাঁটি পরিচালনা করছে এবং আগামি মাসগুলোতে সেগুলোর সম্প্রসারণের পরিকল্পনাও রয়েছে।
সূত্র মতে, তুরস্কের প্রতিটি সামরিক বহরে কার্যকর বিমানসম্পদের প্রয়োজন। তাই চুক্তি বাতিল নয়, বরং অগ্রাধিকার পুনঃনির্ধারণের চেষ্টা চলছে।
তবে এই প্রচেষ্টার বিরোধিতা করছে ইসরাইল ও গ্রিসসহ কিছু দেশ। ইসরাইল বরাবরই মধ্যপ্রাচ্যে তার সামরিক আধিপত্য বজায় রাখার জন্য মার্কিন অস্ত্র বিক্রির ওপর অঘোষিত প্রভাব রাখে।
২০১৯ সালে রাশিয়ার কাছ থেকে এস-৪০০ কেনার পর যুক্তরাষ্ট্র তুরস্ককে এফ-৩৫ প্রকল্প থেকে বাদ দেয়। ২০২০ সালে ট্রাম্প প্রশাসন এ নিয়ে নিষেধাজ্ঞাও জারি করে।
মিডল ইস্ট আই আরও জানিয়েছে, তুরস্ক সেক্ষেত্রে সাময়িকভাবে সিরিয়ার টি-৪ বা পালমিরা ঘাঁটিতে এস-৪০০ মোতায়েনের বিষয়টি বিবেচনা করছে, যাতে ঘাঁটির পুনর্গঠনের সময় আকাশসীমা সুরক্ষিত থাকে এবং এর মাধ্যমে নিষেধাজ্ঞা তুলে নেওয়ার পথ তৈরি হয়। তবে এখনো চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত হয়নি, এবং রাশিয়ার সম্মতি ছাড়া এটি সম্ভব নয়।