
প্রিন্ট: ২৫ এপ্রিল ২০২৫, ০২:৩৮ এএম
ইন্দোনেশিয়ায় যৌথ প্রতিরক্ষা উৎপাদন কেন্দ্র গড়ে তুলবে তুরস্কের রোকেটসান

আন্তর্জাতিক ডেস্ক
প্রকাশ: ১৫ এপ্রিল ২০২৫, ০৮:৫৫ এএম
-67fdcab840668.jpg)
আরও পড়ুন
তুরস্কের শীর্ষস্থানীয় ক্ষেপণাস্ত্র নির্মাতা সংস্থা রোকেটসান ইন্দোনেশিয়ার সঙ্গে যৌথ প্রতিরক্ষা উৎপাদন সুবিধা স্থাপনের চুক্তি সই করেছে। শনিবার, অ্যান্টালিয়া কূটনৈতিক ফোরামে এ তথ্য জানান রোকেটসানের মহাব্যবস্থাপক মুরাত ইকিনচি।
তিনি বলেন, তুরস্কের প্রতিরক্ষা শিল্প এখন শুধু পণ্যের রপ্তানিতেই সীমাবদ্ধ নয়; বরং মিত্র ও বন্ধুপ্রতিম দেশগুলোর সঙ্গে যৌথভাবে প্রতিরক্ষা প্রযুক্তি উন্নয়নের পথও খুলে দিচ্ছে।
ইকিনচি জানান, ইন্দোনেশিয়ার একটি প্রতিরক্ষা শিল্প সংস্থার সঙ্গে তারা অ্যান্টি-শিপ মিসাইল, ক্রুজ মিসাইল এবং স্মার্ট গোলাবারুদের যৌথ উৎপাদনের জন্য চুক্তি করেছেন।
তিনি আরও বলেন, আমরা আন্তর্জাতিক সম্পর্ক ও সহযোগিতা আরও জোরদার করে প্রতিরক্ষা শিল্পের রপ্তানি সক্ষমতা দ্রুত বাড়াতে চাই।
এই চুক্তির মূল লক্ষ্যগুলোর মধ্যে রয়েছে প্রযুক্তি হস্তান্তর, ইন্দোনেশিয়ার প্রতিরক্ষা শিল্পের অবকাঠামো জোরদার করা এবং দেশটির প্রকৌশলী ও প্রযুক্তিবিদদের প্রশিক্ষণ কর্মসূচি।
উল্লেখ্য, সম্প্রতি ইন্দোনেশিয়ার প্রেসিডেন্ট প্রাবোও সুবিয়ান্তো আঙ্কারায় তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইয়েপ এরদোগানের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেছেন এবং তুরস্কের পার্লামেন্টেও ভাষণ দিয়েছেন।
প্রতিরক্ষা খাতই দুই দেশের সম্পর্ক
তুরস্ক-ইন্দোনেশিয়া ব্যবসায়িক পরিষদের প্রধান নুরি দোয়ান কারাদেনিজ জানান, দুই দেশের মধ্যে বাণিজ্যিক সম্পর্ক বর্তমানে ৩ বিলিয়ন ডলারের দিকে এগোচ্ছে এবং এই অঙ্ক ভবিষ্যতে ১০ বিলিয়নে পৌঁছাতে পারে।
তিনি বলেন, ইন্দোনেশিয়া এশিয়ান দেশগুলোর মধ্যে নেতৃত্বদানকারী দেশ। এর ভৌগোলিক অবস্থান—চীন, মালয়েশিয়া, সিঙ্গাপুর ও ফিলিপিন্সের নিকটবর্তী হওয়ায়—তুরস্কের জন্য এক ধরনের বিমানবাহী রণতরী হিসেবে বিবেচিত।
কারাদেনিজ উল্লেখ করেন, প্রেসিডেন্ট এরদোগানের সাম্প্রতিক জাকার্তা সফরের পর ইন্দোনেশিয়ার ব্যবসায়িক নেতাদের সঙ্গে আলোচনায় ইতিবাচক অগ্রগতি হয়েছে। তিনি বলেন, ইন্দোনেশিয়ার সদ্য নির্বাচিত প্রেসিডেন্ট এক সময় দেশটির প্রতিরক্ষামন্ত্রী ছিলেন। সে সময় থেকেই তুরস্কের সঙ্গে প্রতিরক্ষা সহযোগিতা শুরু হয়েছিল। এখন তা পূর্ণ বিকাশে পৌঁছেছে।
এছাড়া কৃষি ও হোটেল ব্যবস্থাপনাতেও তুরস্কের অভিজ্ঞতা রয়েছে এবং ইন্দোনেশিয়া সেই সহযোগিতা গ্রহণে আগ্রহী। জাকার্তা রাজধানী স্থানান্তর প্রকল্পেও তুর্কি ঠিকাদাররা যুক্ত রয়েছেন।
জ্বালানি ও স্বাস্থ্য খাতেও সম্ভাবনা
তিনি বলেন, ইন্দোনেশিয়া একটি বড় জ্বালানি উৎপাদক ও আমদানিকারক দেশ। বিশেষ করে নবায়নযোগ্য ও টেকসই জ্বালানি খাতে তুরস্কের ব্যবসায়ীদের অনেক সুযোগ রয়েছে।
ইন্দোনেশিয়ার বাণিজ্য চেম্বারের প্রধান অনিন্দ্য বকরি বলেন, বর্তমানে ইন্দোনেশিয়া ও তুরস্কের মধ্যকার বাণিজ্যিক পরিমাণ যথেষ্ট নয় এবং তা বাড়াতে হবে। প্রতিরক্ষা খাত থেকে শুরু করে স্বাস্থ্য, জ্বালানি, ডিজিটাল ও ঠিকাদারি খাতেও যৌথভাবে কাজ করার বিপুল সুযোগ রয়েছে।
তিনি আরও বলেন, তুর্কি প্রতিরক্ষা শিল্প বিশ্বসেরা, এবং ইন্দোনেশিয়াও তাদের প্রতিরক্ষা খাত শক্তিশালী করতে আগ্রহী। দুই দেশ একসঙ্গে খুব ভালোভাবে এগোতে পারে।
পাশাপাশি তিনি তুর্কি কোম্পানিগুলোকে ইন্দোনেশিয়ায় বিনিয়োগের আহ্বান জানান।
ইন্দোনেশিয়া তুরস্কে পাম অয়েল, ইস্পাতসহ নানা পণ্য রপ্তানি করে এবং এই রপ্তানি আরও বাড়াতে চায় বলেও জানান বকরি।
তিনি বলেন, স্বাস্থ্য খাতে তুরস্কের যন্ত্রপাতিরও চাহিদা রয়েছে, যা বাণিজ্য আরও বাড়াবে।
এই চুক্তি এবং পারস্পরিক আগ্রহ ভবিষ্যতে তুরস্ক-ইন্দোনেশিয়া সম্পর্ককে আরও ঘনিষ্ঠ করবে বলে মনে করা হচ্ছে।