
প্রিন্ট: ২৫ এপ্রিল ২০২৫, ০৭:৪৭ পিএম
ফিলিস্তিনপন্থি বিক্ষোভ: মাহমুদ খলিলকে যুক্তরাষ্ট্র থেকে বহিষ্কারের রায়

আন্তর্জাতিক ডেস্ক
প্রকাশ: ১২ এপ্রিল ২০২৫, ০৯:১৮ এএম
-67f9db92c66b7.jpg)
আরও পড়ুন
ফিলিস্তিনপন্থি বিক্ষোভে অংশগ্রহণের কারণে আটক মাহমুদ খলিলকে যুক্তরাষ্ট্র থেকে বহিষ্কারের মামলা চলতে পারে বলে রায় দিয়েছেন এক মার্কিন অভিবাসন বিচারক। কলম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের স্নাতক শিক্ষার্থী খলিলকে এক মাস আগে আটক করা হয়েছিল।
শুক্রবার (১১ মার্চ) এক প্রতিবেদনে এ খবর দিয়েছে আল জাজিরা।
লুইজিয়ানা অঙ্গরাজ্যের এক আদালতে প্রায় দুই ঘণ্টার শুনানি শেষে শুক্রবার বিচারক জেমি কোম্যানস বলেন, সরকার পরিষ্কার এবং বিশ্বাসযোগ্য প্রমাণের মাধ্যমে প্রমাণ করতে সক্ষম হয়েছে যে, মাহমুদ খলিল বহিষ্কারের উপযুক্ত।
যুক্তরাষ্ট্রে স্থায়ী বসবাসের অনুমতি (গ্রিন কার্ড) থাকলেও খলিল চাইলে এই রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করতে পারবেন।
খলিলের আইনজীবী মার্ক ভ্যান ডের হাউট বলেন, মাহমুদ একটি সাজানো ‘প্রক্রিয়ার’ শিকার। এটা তার ন্যায্য বিচার পাওয়ার অধিকারের চরম লঙ্ঘন এবং মতপ্রকাশের স্বাধীনতাকে দমন করতে অভিবাসন আইনের অপব্যবহার।
তিনি আরও বলেন, এটা এখানেই শেষ নয়, আমাদের লড়াই চলবে।
এই মামলাটি যুক্তরাষ্ট্রজুড়ে তীব্র মনোযোগ কেড়েছে, কারণ অধিকারকর্মীরা অভিযোগ করছেন— প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের প্রশাসন ‘ইহুদিবিদ্বেষের বিরুদ্ধে লড়াই’-এর আড়ালে মতপ্রকাশের স্বাধীনতা ও ফিলিস্তিনপন্থি আন্দোলন দমন করছে।
খলিলকে বহিষ্কারের জন্য একটি অত্যন্ত কম ব্যবহৃত অভিবাসন আইনের ধারা প্রয়োগ করা হয়েছে। এই ধারায় পররাষ্ট্র মন্ত্রী এমন কোনো অভিবাসীকে বহিষ্কারের আদেশ দিতে পারেন, যার উপস্থিতি যুক্তরাষ্ট্রের বৈদেশিক নীতির জন্য ‘বিপজ্জনক’ বলে বিবেচিত হয়।
তবে খলিলের বিরুদ্ধে কোনো অপরাধমূলক অভিযোগ আনা হয়নি।
আদালত ও খালিলের আইনজীবীদের কাছে জমা দেওয়া একটি দুই পৃষ্ঠার চিঠিতে মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিও বলেন, ৩০ বছর বয়সি খালিল ইহুদিবিদ্বেষী বিক্ষোভ ও বিশৃঙ্খল কর্মকাণ্ডে জড়িত ছিলেন, যা যুক্তরাষ্ট্রে ইহুদি শিক্ষার্থীদের জন্য শত্রুতা সৃষ্টি করেছে।
চিঠিতে কোনো আইন ভাঙার অভিযোগ না থাকলেও রুবিও বলেন, কারো বিশ্বাস, সংগঠনের সঙ্গে সংশ্লিষ্টতা বা বক্তব্য আইনগতভাবে বৈধ হলেও তার অভিবাসন মর্যাদা বাতিল করা যেতে পারে।
খলিলের সমর্থকেরা বলছেন, তিনি শান্তিপূর্ণভাবে কলম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের ইসরাইলি সেনাবাহিনীর সঙ্গে সম্পর্কের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করেছিলেন। এটি ছিল গত বছর গাজার যুদ্ধ চলাকালে দেশজুড়ে ছড়িয়ে পড়া শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের অংশ।
খলিলের আরেক আইনজীবী এবং সেন্টার ফর কনস্টিটিউশনাল রাইটসের আইনি পরিচালক বাহের আজমি বলেন, রুবিওর চিঠি একটি অদ্ভুত, সোভিয়েত শৈলীর নির্দেশনা, যা একদিকে ফাঁপা এবং অন্যদিকে আতঙ্কজনক।
লুইজিয়ানার জেনা শহরের আদালতের বাইরে থেকে আল জাজিরার সাংবাদিক শিহাব রতনসি জানান, শুনানির সময় খলিল আদালতে বলেন, ন্যায্য বিচার ও মৌলিক ন্যায়বিচারের চেয়ে গুরুত্বপূর্ণ কিছু নেই। কিন্তু এই মামলায় এর কোনোটিই ছিল না।
খলিলকে গত ৮ মার্চ গভীর রাতে তার গর্ভবতী স্ত্রী (যিনি একজন মার্কিন নাগরিক)–এর সামনে থেকে আটক করে অভিবাসন কর্মকর্তারা। এরপর তাকে দুইটি পৃথক কেন্দ্রে স্থানান্তর করা হয়— কোনও নোটিশ ছাড়াই, এমনকি তার পরিবার বা আইনজীবীদের না জানিয়েই।
শুক্রবার আদালতের বাইরে সংবাদ সম্মেলনে খলিলের সমর্থক দল এক বিবৃতিতে বলেন, সরকার কোনো আইন ভাঙার প্রমাণ দেখাতে না পারলেও আদালতের রায় উদ্বেগজনকভাবে অন্যায়।
বিবৃতিতে আরও বলা হয়, প্রবাসী কেউ যদি শুধুমাত্র ফিলিস্তিনপন্থি মতপ্রকাশের জন্য তার আইনি স্থায়ী অবস্থান হারাতে পারে, তাহলে এটা যুক্তরাষ্ট্রের সংবিধানের প্রথম সংশোধনী (মতপ্রকাশের স্বাধীনতা) লঙ্ঘনের সুস্পষ্ট উদাহরণ এবং মতপ্রকাশের অধিকারে এক বিপজ্জনক নজির সৃষ্টি করবে।
খলিলের স্ত্রী নূর আব্দুল্লাহ বলেন, এই রায় আমাদের জন্য চরম আঘাত। কোনও মানুষকে শুধুমাত্র ফিলিস্তিনি পরিবার, চিকিৎসক ও সাংবাদিকদের হত্যার বিরুদ্ধে কথা বলার কারণে নিজ দেশে ‘অবাঞ্ছিত’ ঘোষণা করা উচিত নয়।
বিচারক কোম্যানস খালিলের আইনজীবীদের ২৩ এপ্রিল পর্যন্ত সময় দিয়েছেন ‘মওকুফ চাওয়ার আবেদন’ করার জন্য। তবে এই সিদ্ধান্তই চূড়ান্ত নয়।
খলিলের আরেক মামলায় নিউ জার্সির একটি ফেডারেল আদালতের বিচারক মাইকেল ফারবিয়ার্জ সাময়িকভাবে বহিষ্কার স্থগিত করেছেন, কারণ সেই মামলায় খালিল যুক্তরাষ্ট্রের সংবিধানের প্রথম সংশোধনীর অধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগ তুলেছেন।
গত কয়েক সপ্তাহে মার্কিন অভিবাসন কর্তৃপক্ষ আরও কয়েকজন আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থীর বিরুদ্ধেও পদক্ষেপ নিয়েছে, যারা ফিলিস্তিনপন্থি প্রতিবাদে অংশ নিয়েছিল বা গাজার পক্ষে বক্তব্য দিয়েছিল।