
প্রিন্ট: ২৫ এপ্রিল ২০২৫, ০৭:৫২ এএম
বেলুচিস্তান সংকটে নেতৃত্ব দিতে নওয়াজ শরিফকে আহ্বান

আন্তর্জাতিক ডেস্ক
প্রকাশ: ১০ এপ্রিল ২০২৫, ০১:৫৬ পিএম
-67f77991b3c9c.jpg)
আরও পড়ুন
পাকিস্তান মুসলিম লিগ-নওয়াজ (পিএমএল-এন)–এর সভাপতি ও তিনবারের সাবেক প্রধানমন্ত্রী নওয়াজ শরিফকে বেলুচিস্তানের চলমান সংকট নিরসনে দেশের জ্যেষ্ঠতম রাজনৈতিক নেতা হিসেবে এগিয়ে আসার আহ্বান জানানো হয়েছে।
বৃহস্পতিবার (১০ এপ্রিল) এক প্রতিবেদনে এ খবর দিয়েছে দ্য এক্সপ্রেস ট্রিবিউন।
বিএনপি-মেঙ্গলের (বেলুচিস্তান ন্যাশনাল পার্টি-মেঙ্গল) টানা ১২ দিনের অবস্থান ধর্মঘটের প্রেক্ষাপটে এবার এই আহ্বান জানিয়েছে ন্যাশনাল পার্টির (এনপি) একটি প্রতিনিধি দল। দলটির সভাপতি ড. আবদুল মালিক বেলুচের নেতৃত্বে প্রতিনিধিরা মঙ্গলবার নওয়াজ শরিফের সঙ্গে জাটি উমরায় সাক্ষাৎ করেন।
পরে সংবাদমাধ্যমকে ব্রিফ করে সাবেক রেলমন্ত্রী ও পিএমএল-এন নেতা খাজা সাদ রফিক জানান, নওয়াজ শরিফ প্রতিনিধি দলকে আশ্বস্ত করেছেন যে তিনি বেলুচিস্তানে শান্তি, স্থিতিশীলতা, উন্নয়ন ও গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার জন্য প্রয়োজনীয় ভূমিকা পালন করবেন।
প্রধানমন্ত্রীর রাজনৈতিক ও গণসম্পর্ক বিষয়ক উপদেষ্টা রানা সানাউল্লাহ জানিয়েছেন, শিগগির চিকিৎসার জন্য লন্ডন সফরে যাচ্ছেন নওয়াজ শরিফ এবং সেখান থেকে ফিরে তিনি বেলুচিস্তান সফর করবেন বলে আশা করা হচ্ছে।
ড. মালিকের নেতৃত্বাধীন এনপি প্রতিনিধি দল এর আগে প্রেসিডেন্ট আসিফ আলি জারদারি এবং প্রধানমন্ত্রী শেহবাজ শরিফের সঙ্গেও বেলুচিস্তানের অবনতিশীল পরিস্থিতি নিয়ে আলোচনা করেছে। এবার তারা নওয়াজ শরিফকে সরাসরি অথবা কেন্দ্রীয় সরকারের মাধ্যমে হস্তক্ষেপ করতে আহ্বান জানান, বিশেষ করে বিএনপি-মেঙ্গলের অবস্থান ধর্মঘট এবং নারী অধিকারকর্মীদের গ্রেপ্তার ইস্যুতে।
সাদ রফিক বলেন, প্রতিনিধি দল বেলুচিস্তানের আইনশৃঙ্খলা, উন্নয়নের ঘাটতি ও রাজনৈতিক বঞ্চনার বিষয়টি গুরুত্ব দিয়ে তুলে ধরেছে। তিনি জানান, এনপি নওয়াজ শরিফকে দেশের সবচেয়ে অভিজ্ঞ রাজনৈতিক নেতা হিসেবে সংকট সমাধানে অগ্রণী ভূমিকা নেওয়ার অনুরোধ জানিয়েছে।
সাবেক প্রধানমন্ত্রী আশ্বাস দিয়েছেন, তিনি বেলুচিস্তানে শান্তি ও স্থিতিশীলতা ফেরাতে সক্রিয় ভূমিকা পালন করবেন এবং রাজনৈতিক মহলের সঙ্গে যোগাযোগ করবেন। প্রতিনিধি দলের সঙ্গে আলোচনায় তিনি স্বীকার করেছেন যে, পিএমএল-এন-এর শাসনামলে যেভাবে একটি কার্যকর শান্তি প্রক্রিয়া শুরু হয়েছিল, তা প্রায় সাফল্যের দ্বারপ্রান্তে পৌঁছেছিল; কিন্তু গণতন্ত্র ব্যাহত হওয়ায় সেই অগ্রগতি থেমে যায়।
এনপি সভাপতি মালিক বেলুচ বলেছেন, ‘দুই দশক ধরে বেলুচিস্তান রক্তাক্ত হয়ে আছে। এই মুহূর্তে নওয়াজ শরিফের মতো একজন দায়িত্বশীল নেতার এগিয়ে আসা অত্যন্ত জরুরি।’
তিনি আশা প্রকাশ করেন, নওয়াজ শরিফ জনগণের স্বার্থে গঠনমূলক ভূমিকা পালন করবেন। ড. মেহরাং বেলুচসহ নারী ও রাজনৈতিক কর্মীদের গ্রেপ্তার, এবং কুয়েটায় বিএনপি-মেঙ্গলের অবস্থান ধর্মঘট ইস্যুতে বিশদ আলোচনা হয়েছে বলেও জানান তিনি।
সিনেটর জান মোহাম্মদ বুলেদি বলেন, ‘বেলুচিস্তান ক্রমেই কেন্দ্র থেকে দূরে সরে যাচ্ছে।’ তার মতে, বিএনপি-মেঙ্গল একটি গণতান্ত্রিক দল হিসেবে শান্তিপূর্ণ প্রতিবাদের পথ বেছে নিলেও তাদের উপেক্ষা করে সরকার রাস্তা বন্ধ করে আন্দোলন দমন করার চেষ্টা করেছে।
তিনি আরও জানান, জাফর এক্সপ্রেস হামলার পর প্রেসিডেন্ট জারদারিকে বিষয়গুলো অবহিত করার পাশাপাশি তারা নওয়াজ শরিফের সঙ্গেও সরাসরি যোগাযোগ করেছেন। তিনি আশ্বাস দিয়েছেন, দায়িত্বশীল মহলের সঙ্গে আলোচনা করবেন এবং প্রয়োজনে প্রধানমন্ত্রীকেও বিষয়টি অবহিত করবেন।
নওয়াজ শরিফ কবে বেলুচিস্তান সফর করবেন, তা নিয়ে নির্দিষ্ট কোনও সময়সূচি না দিলেও তার আশ্বাসে আশা দেখছেন বেলুচ নেতারা।
বেলুচিস্তান ও করাচিজুড়ে বেলুচ সংহতি কমিটির (বিওয়াইসি) প্রধান সংগঠক ড. মেহরাং বেলুচসহ ১৭ জন কর্মীকে কোয়েটার সরিয়াব রোড থেকে আটক এবং অবস্থান কর্মসূচিতে পুলিশের হামলার পর প্রদেশজুড়ে বিক্ষোভ ছড়িয়ে পড়ে। বিক্ষোভকারীরা দাবি করেন, পুলিশের হাতে তিনজন কর্মী নিহত হয়েছেন।
এর আগে গত মার্চ মাসেও নওয়াজ শরিফ ঈদুল আজহার পর বেলুচিস্তানের নিরাপত্তা সংকট সমাধানে সক্রিয় ভূমিকা রাখার আশ্বাস দিয়েছিলেন, যখন সুপ্রিম কোর্ট বার অ্যাসোসিয়েশন এবং বেলুচিস্তান হাইকোর্ট বার অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতিরা তাঁকে মুখ খুলে দেশের সামনে দাঁড়ানোর আহ্বান জানান।
প্রতিরক্ষামন্ত্রী খাজা আসিফ-ও তখন নওয়াজ শরিফকে প্রদেশটির পরিস্থিতি গুরুত্ব দিয়ে বিবেচনার পরামর্শ দিয়েছিলেন।