ইউক্রেনে চীনা সেনা: রাশিয়াকে সহায়তায় কি সেনা পাঠাচ্ছে বেইজিং?

আন্তর্জাতিক ডেস্ক
প্রকাশ: ১০ এপ্রিল ২০২৫, ১২:৫০ পিএম
-67f76a2a842a5.jpg)
রুশ-ইউক্রেন যুদ্ধে চীনা নাগরিকদের সংশ্লিষ্টতা নিয়ে ফের আলোচনায় উঠে এসেছে বেইজিংয়ের অবস্থান। ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি জানিয়েছেন, ইউক্রেনের দোনেৎস্ক অঞ্চলে তার দেশের সেনাবাহিনী দুইজন চীনা নাগরিককে আটক করেছে। এটি গত তিন বছরে চলমান যুদ্ধে প্রথমবারের মতো চীনা নাগরিকদের আটকের ঘটনা। তিনি অভিযোগ করেন, ১৫৫ জন চীনা নাগরিক রাশিয়ার পক্ষে ইউক্রেনে যুদ্ধ করছে বলে ইউক্রেনের কাছে তথ্য আছে।
বুধবার (৯ এপ্রিল) এক প্রতিবেদনে এ খবর জানিয়েছে আল জাজিরা।
জেলেনস্কি বলেন, ‘চীনা বিষয়টি গুরুতর। ১৫৫ জনের নাম, পাসপোর্ট ও অন্যান্য তথ্য আমাদের হাতে এসেছে যারা ইউক্রেনের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করছে। আমাদের বিশ্বাস, এ সংখ্যা আরও বেশি।’ তিনি আরও দাবি করেন, বেইজিং এই বিষয়ে অবগত ছিল।
এই ঘটনার মধ্য দিয়ে রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের যুদ্ধ চালিয়ে যাওয়ার সংকেত আরও স্পষ্ট হলো বলে মন্তব্য করেন জেলেনস্কি। তার মতে, এতে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের মধ্যস্থতায় চলমান শান্তি আলোচনাও হুমকির মুখে পড়তে পারে।
তবে বেইজিং ইউক্রেনের এসব অভিযোগ অস্বীকার করেছে। চীনের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র লিন জিয়ান বলেন, ‘এসব অভিযোগের কোনও ভিত্তি নেই। চীন সবসময়ই তার নাগরিকদের সংঘাতপূর্ণ এলাকা থেকে দূরে থাকার নির্দেশ দিয়ে আসছে।’
তিনি আরও বলেন, ‘ইউক্রেন সরকারের উচিত, চীনের গঠনমূলক ভূমিকা ও শান্তি প্রতিষ্ঠার প্রচেষ্টা সম্পর্কে যথাযথ দৃষ্টিভঙ্গি রাখা।’
চীনের বক্তব্য অনুযায়ী, তারা ইউক্রেন যুদ্ধ নিয়ে নিরপেক্ষ অবস্থান বজায় রেখেছে এবং কোনো পক্ষকে অস্ত্র বা সামরিক সহায়তা দিচ্ছে না। তবে বিশ্লেষকরা বলছেন, রাশিয়ার সঙ্গে চীনের ক্রমবর্ধমান অর্থনৈতিক ও কূটনৈতিক সম্পর্ক এ নিরপেক্ষতাকে প্রশ্নবিদ্ধ করছে।
ইউক্রেনের পররাষ্ট্রমন্ত্রী আন্দ্রিই সিবিহা বলেন, ‘চীনা নাগরিকদের রুশ বাহিনীর অংশ হিসেবে ইউক্রেনে যুদ্ধ করা, বেইজিংয়ের শান্তির পক্ষে অবস্থানের ওপর সন্দেহ তৈরি করছে। এটি জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদের স্থায়ী সদস্য হিসেবে চীনের বিশ্বাসযোগ্যতাকেও প্রশ্নবিদ্ধ করছে।’
জেলেনস্কির দাবি, রাশিয়া শুধু চীন নয়, বিশ্বের বিভিন্ন দেশ থেকে লোকজন নিয়ে ইউক্রেন যুদ্ধ চালিয়ে যাচ্ছে। এর আগে দক্ষিণ এশিয়ার বহু নাগরিক—বিশেষ করে নেপাল, ভারত ও শ্রীলঙ্কার মানুষ রাশিয়ার পক্ষে যুদ্ধে অংশ নেয়। ইউক্রেনের পক্ষেও বহু বিদেশি যোদ্ধা যুদ্ধ করছে।
চীনা নাগরিকদের যুদ্ধে অংশগ্রহণের অভিযোগ যদিও নতুন নয়, তবে এই প্রথম ইউক্রেন সরকার সরাসরি আটকের কথা জানাল। এর আগে ফরাসি সংবাদমাধ্যম লি মন্ডে এপ্রিল মাসে জানায়, অন্তত ৪০ জন চীনা নাগরিক নিজেদের রুশ বাহিনীর সদস্য বলে দাবি করেছেন।
এদিকে চীন একাধিকবার জাতিসংঘে রাশিয়ার পক্ষে অবস্থান নিয়েছে। ২০২৩ ও ২০২৪ সালে ইউক্রেন থেকে রুশ সেনা প্রত্যাহারের প্রস্তাবসহ বিভিন্ন প্রস্তাবে ভোট দেওয়া থেকে বিরত থেকেছে বেইজিং।
রুশ-ইউক্রেন যুদ্ধ বন্ধে সম্প্রতি মার্কিন নেতৃত্বে শান্তি আলোচনা শুরু হয়েছে। ফেব্রুয়ারি থেকে সৌদি আরবে এই আলোচনায় রাশিয়া ও ইউক্রেন আলাদাভাবে যুক্ত হয়। মার্চে এক সমঝোতা অনুযায়ী কৃষ্ণসাগরে যুদ্ধ জাহাজ ব্যবহারে নিষেধাজ্ঞা আরোপে একমত হয় দুই দেশ। তবে সাম্প্রতিক সময়ে এ সংক্রান্ত চুক্তি লঙ্ঘনের অভিযোগ উভয়পক্ষই একে অপরের বিরুদ্ধে এনেছে।
এপ্রিলে জেলেনস্কি এক পোস্টে লেখেন, ‘আজকের রুশ হামলায় কৃষ্ণসাগর থেকে ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবহার হয়েছে… একটি সমুদ্রবন্দি যুদ্ধবিরতি শুধু খাদ্যপণ্যের রপ্তানি নয়, বরং নিরাপত্তা ও শান্তির পথে এগিয়ে যাওয়ার গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ।’
এই প্রেক্ষাপটে চীনা নাগরিকদের যুদ্ধক্ষেত্রে উপস্থিতি রাশিয়ার সাথে চীনের সম্পৃক্ততা নিয়ে নতুন করে বিতর্কের জন্ম দিয়েছে। এখন দেখার বিষয়, ইউক্রেনের এ অভিযোগে আন্তর্জাতিক সমাজ এবং বিশেষ করে বেইজিং কী প্রতিক্রিয়া জানায়।