
প্রিন্ট: ২৪ এপ্রিল ২০২৫, ০৬:০০ এএম
অস্ত্র নিরস্ত্রীকরণ নিয়ে আলোচনায় প্রস্তুত হিজবুল্লাহ, তবে ইসরাইলকে লেবানন ছাড়তে হবে

আন্তর্জাতিক ডেস্ক
প্রকাশ: ০৯ এপ্রিল ২০২৫, ১০:১৫ এএম
-67f5f456c3ccc.jpg)
আরও পড়ুন
লেবাননে হিজবুল্লাহর নিরস্ত্রীকরণ নিয়ে আলোচনা যখন গতি পাচ্ছে, তখন গোষ্ঠীর এক শীর্ষ কর্মকর্তা রয়টার্সকে জানিয়েছেন, যদি ইসরাইল দক্ষিণ লেবানন থেকে পুরোপুরি সেনা প্রত্যাহার করে এবং হামলা বন্ধ করে, তবে তারা অস্ত্র নিরস্ত্রীকরণ দেশটির প্রেসিডেন্টের সঙ্গে আলোচনায় বসতে প্রস্তুত।
যুক্তরাষ্ট্র-সমর্থিত প্রেসিডেন্ট জোসেফ আউন জানুয়ারিতে ক্ষমতায় বসার পর ঘোষণা দিয়েছিলেন, অস্ত্রের পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ কেবল রাষ্ট্রের হাতে থাকবে। তাঁর নেতৃত্বে শিগগিরই হিজবুল্লাহর অস্ত্রভান্ডার নিয়ে আলোচনা শুরু হবে বলে জানিয়েছেন দেশটির তিনজন রাজনৈতিক সূত্র।
২০২৪ সালের ইসরাইল-হিজবুল্লাহ যুদ্ধের পর পরিস্থিতির ভারসাম্য ভেঙে পড়ে। সংঘাতে হিজবুল্লাহর অনেক শীর্ষ নেতা ও হাজার হাজার যোদ্ধা নিহত হয়েছে, ধ্বংস হয়েছে রকেট মজুতের বড় অংশ। এই পটভূমিতেই অস্ত্র প্রসঙ্গে নতুন করে আলোচনার আবহ তৈরি হয়েছে।
হিজবুল্লাহ কর্মকর্তা বলেন, ‘জাতীয় প্রতিরক্ষা কৌশলের প্রেক্ষাপটে অস্ত্রের বিষয়টি নিয়ে আলোচনা করতে আমরা প্রস্তুত, তবে এর শর্ত হলো—ইসরাইলকে দক্ষিণ লেবনের পাঁচটি পাহাড়চূড়া থেকে সরে যেতে হবে এবং লেবাননের ওপর তাদের আগ্রাসন বন্ধ করতে হবে।’
নতুন চাপ এবং সম্ভাব্য নিরস্ত্রীকরণ প্রক্রিয়া
যদিও নভেম্বর থেকে একটি যুদ্ধবিরতি চলছে, ইসরাইলের বিমান হামলা হিজবুল্লাহর ওপর চাপ তৈরি করে রেখেছে। অন্যদিকে ওয়াশিংটনও হিজবুল্লাহর নিরস্ত্রীকরণের দাবি জোরালো করছে এবং ইরানের সঙ্গে পারমাণবিক আলোচনার প্রস্তুতি নিচ্ছে।
হিজবুল্লাহর অস্ত্রভাণ্ডার দীর্ঘদিন ধরেই লেবাননে বিতর্কের বিষয়। গোষ্ঠীর সমালোচকরা বলেন, তারা একতরফাভাবে দেশকে যুদ্ধে জড়িয়ে ফেলেছে এবং রাষ্ট্রের বাইরে তাদের অস্ত্রভাণ্ডার লেবাননের সার্বভৌমত্বকে ক্ষতিগ্রস্ত করছে। ২০০৮ সালে এ নিয়ে স্বল্পকালীন গৃহযুদ্ধও হয়েছিল।
যুক্তরাষ্ট্র-নেতৃত্বাধীন যুদ্ধবিরতি চুক্তিতে বলা হয়েছে, লিতানি নদীর দক্ষিণাংশ থেকে সমস্ত অনুমোদনহীন সামরিক স্থাপনা ও অস্ত্র বাজেয়াপ্ত করতে হবে। দুইটি সূত্র জানিয়েছে, হিজবুল্লাহ এখন লিতানির উত্তরের ড্রোন ও অ্যান্টি-ট্যাংক ক্ষেপণাস্ত্রসহ ভারী অস্ত্র লেবানন সেনাবাহিনীর হাতে তুলে দেওয়ার বিষয়টি বিবেচনা করছে।
সমঝোতার আহ্বান এবং যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থান
প্রেসিডেন্ট আউন বলেছেন, হিজবুল্লাহর অস্ত্র নিয়ে সংলাপের মাধ্যমেই সমাধানে যেতে হবে। জোর করে নিরস্ত্রীকরণ চেষ্টা করলে আবারও সংঘর্ষ শুরু হতে পারে।
মারোনাইট গির্জার প্রধান প্যাট্রিয়ার্ক বেচারা বুতরোস আল-রাই বলেছেন, সব অস্ত্র রাষ্ট্রের হাতে আসা উচিত, তবে এটি ধাপে ধাপে কূটনৈতিকভাবে করতে হবে—কারণ লেবানন আর একটি যুদ্ধ সহ্য করতে পারবে না।
যুক্তরাষ্ট্রের দূত মরগান ওর্তাগুস সম্প্রতি বৈরুত সফর করে বলেছেন, ‘হিজবুল্লাহকে নিরস্ত্রীকরণ করতে হবে এবং ইসরাইলকে লক্ষ্য করে গোলাবর্ষণ চলতে পারে না—এটি পরিষ্কার বার্তা।’
হিজবুল্লাহ এখন বলছে, তারা দক্ষিণ লিটানিতে সশস্ত্রভাবে নেই এবং যুদ্ধবিরতি মেনে চলেছে, কিন্তু ইসরাইল প্রতিদিন চুক্তি লঙ্ঘন করছে। হিজবুল্লাহ নেতা নাঈম কাসেম বলেছেন, এখনও কূটনৈতিক সমাধানের সময় আছে, তবে প্রয়োজনে বিকল্প পদক্ষেপ নেওয়ার জন্য গোষ্ঠী প্রস্তুত।