
প্রিন্ট: ২৫ এপ্রিল ২০২৫, ০৪:৫৩ এএম

আন্তর্জাতিক ডেস্ক
প্রকাশ: ০৯ এপ্রিল ২০২৫, ০৯:২১ এএম

আরও পড়ুন
ইসরাইলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু শিন বেত প্রধান রোনেন বারকে বরখাস্তের সিদ্ধান্তে হাই কোর্ট অব জাস্টিসের দেওয়া স্থগিতাদেশকে ‘বিভ্রান্তিকর’ ও ‘অগ্রহণযোগ্য’ বলে মন্তব্য করেছেন।
মঙ্গলবার (৯ এপ্রিল) দেশটির সর্বোচ্চ আদালত রোনেন বারকে বরখাস্তের সিদ্ধান্তে আপাতত স্থগিতাদেশ জারি করে। এতে নেতানিয়াহুর কার্যালয় থেকে দেওয়া এক বিবৃতিতে বলা হয়, ‘আলোচনার সময় বিচারপতিরা বারবার বলেছেন যে শিন বেত প্রধানকে অপসারণ করার ক্ষমতা সরকারের আছে—এই বিষয়ে কোনো বিতর্ক নেই। সে অনুযায়ী, আদালতের পক্ষ থেকে ১০ দিনের জন্য বরখাস্তের সিদ্ধান্ত স্থগিত রাখা ‘বিরক্তিকর’ এবং ‘অবাক করার মতো’।
নেতানিয়াহুর বক্তব্য, ‘শুধু একটি সম্পর্কহীন তদন্ত শুরু হয়েছে বলে কোনো ব্যর্থ নিরাপত্তা প্রধানকে পদে বহাল রাখার পক্ষে রায় দেওয়া যায় না। এরকম সিদ্ধান্ত হলে সেটি একটি ভয়াবহ দৃষ্টান্ত তৈরি করবে। ভবিষ্যতে যেকোনো ব্যর্থ প্রধান একটি তদন্ত শুরু করলেই সরকার তাকে বরখাস্ত করতে পারবে না।
রাজনৈতিক প্রতিক্রিয়া: আদালত বনাম সরকার
আদালতের এই সিদ্ধান্ত নিয়ে ইসরাইলি রাজনীতিকদের মধ্যে তীব্র প্রতিক্রিয়া দেখা গেছে। কেউ একে ‘গণতন্ত্রবিরোধী’ বলছেন, আবার কেউ আদালতের রায়ের প্রতি সম্মান দেখাতে সরকারের প্রতি আহ্বান জানাচ্ছেন।
জাতীয় নিরাপত্তামন্ত্রী ইতামার বেন-গভির সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ‘এক্স’-এ আদালতের রায়কে ‘গণতন্ত্রের জন্য হুমকি’ আখ্যা দিয়ে তাৎক্ষণিক বিচারিক সংস্কারের দাবি জানান। যোগাযোগমন্ত্রী শ্লোমো কারহি সরাসরি আদালতের নির্দেশ মানতে সরকারের ‘না’ বলার আহ্বান জানান।
তিনি বলেন, ‘রোনেন বার তার নির্ধারিত তারিখেই বিদায় নেবেন। বিচারপতি ইতজহাক আমিতের একচ্ছত্র সিদ্ধান্তে কীভাবে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠিত হয়?’
ডায়াসপোরা বিষয়ক মন্ত্রী আমিখাই চিকলি বলেন, ‘আজকের রায় প্রমাণ করে, বহু ইসরাইলি নাগরিক ভুল ভেবে আসছিলেন যে তারা একটি গণতান্ত্রিক দেশে বাস করছেন। এই রায় স্পষ্টভাবে মন্ত্রীদের ক্ষমতা কেড়ে নিয়ে আদালতকে কার্যত সংসদ ও সরকারের অভিভাবকে পরিণত করেছে।’
তিনি আরও বলেন, ‘যখনই কোনও মৌলিক বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিতে হয়—তখন আর আইন নয়, জনগণের নির্বাচিত সরকার নয়—বরং নির্বাচিত নয় এমন একটি ক্ষুদ্র বিচারকগোষ্ঠীই চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেয়।’
বিপরীত মত: নেতানিয়াহুর সমালোচনায় বিরোধীরা
তবে সবাই নেতানিয়াহুর অবস্থান সমর্থন করেননি। বিরোধীদলীয় এমকে নামা লাজিমি অভিযোগ করেন, নেতানিয়াহু যুদ্ধের মধ্যে ‘অভ্যুত্থানের’ চেষ্টা করছেন। ডেমোক্র্যাটস দলের চেয়ারম্যান ইয়াইর গোলান রায়কে স্বাগত জানিয়ে বলেন, ‘সরকার যদি আদালতের এই রায় অমান্য করার চেষ্টা করে, তাহলে গণতান্ত্রিক সংখ্যাগোষ্ঠীর পক্ষ থেকে নজিরবিহীন নাগরিক আন্দোলন শুরু হবে।’
তিনি আরও বলেন, ‘যখন একজন প্রধানমন্ত্রীর ঘনিষ্ঠজনদের সঙ্গে বিদেশি রাষ্ট্রের সম্পর্কের তদন্ত চলছে—তখন প্রধানমন্ত্রী সেই তদন্তকারী শিন বেত প্রধানকে বরখাস্ত করতে পারেন না। বিশেষ করে যখন দেশ যুদ্ধরত অবস্থায় রয়েছে।’
সাবেক প্রতিরক্ষামন্ত্রী বেনি গ্যান্টজও রায় মানার পক্ষে অবস্থান নিয়েছেন। তিনি বলেন, ‘আদালতের রায় মানা উচিত, এটাই গণতন্ত্রের নিয়ম।’
প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় এক বিবৃতিতে জানিয়েছে, নেতানিয়াহু শিন বেতের নতুন প্রধান নিয়োগে প্রার্থীদের সাক্ষাৎকার গ্রহণ অব্যাহত রাখবেন।