
প্রিন্ট: ০৮ এপ্রিল ২০২৫, ০৩:১২ এএম
বেলুচিস্তানে অস্থিতিশীলতার ষড়যন্ত্র প্রতিহত করার অঙ্গীকার পাকিস্তান সেনাবাহিনীর

আন্তর্জাতিক ডেস্ক
প্রকাশ: ০৫ এপ্রিল ২০২৫, ১১:৫০ এএম

বেলুচিস্তানে বিদেশি মদদপুষ্ট অস্থিতিশীলতার যেকোনো প্রচেষ্টা রুখে দেওয়ার অঙ্গীকার পুনর্ব্যক্ত করেছে পাকিস্তান সেনাবাহিনী। বিদেশি মদদপুষ্ট ষড়যন্ত্রকারীদের অপতৎপরতা নির্দয়ভাবে পরাস্ত করা হবে বলে জানিয়েছে আন্তঃবাহিনী জনসংযোগ পরিদপ্তর (আইএসপিআর)।
শুক্রবার (৪ এপ্রিল) এক প্রতিবেদনে এ খবর জানিয়েছে আরওয়াই নিউজ।
পাকিস্তান সেনাবাহিনীর প্রধান জেনারেল সৈয়দ আসিম মুনির-এর সভাপতিত্বে রাওয়ালপিন্ডির জেনারেল সদর দপ্তরে (জিএইচকিউ) অনুষ্ঠিত ২৬৮তম কোর কমান্ডার সম্মেলনে এই অঙ্গীকার প্রকাশ করা হয়।
সম্মেলনে জানানো হয়, ‘বেলুচিস্তানে শান্তি বিনষ্টের অনুমতি কাউকে দেওয়া হবে না। বিদেশি মদদপুষ্ট দালাল, সামাজিক বিশৃঙ্খলা সৃষ্টিকারী উপাদান এবং তাদের তথাকথিত রাজনৈতিক পৃষ্ঠপোষকরা যারা সংকীর্ণ রাজনৈতিক স্বার্থে বেলুচিস্তানের স্থিতিশীলতা ও সমৃদ্ধিকে বিপন্ন করতে চায়, তাদের ষড়যন্ত্র জনগণের নিরবিচল সমর্থন নিয়ে কঠোরভাবে প্রতিহত করা হবে, ইনশাআল্লাহ।’
সভায় আরও বলা হয়, ‘বিদেশি ও দেশীয় সকল ষড়যন্ত্রকারীর মুখোশ ও তাদের মধ্যে বিদ্যমান সম্পর্ক এবং অরাজকতা সৃষ্টির কৌশল সম্পূর্ণরূপে উন্মোচিত হয়েছে এবং তাদের দায়মুক্তি ছাড়াই মোকাবিলা করা হবে।’
কোর কমান্ডারদের এই সম্মেলনে বর্তমান ভূ-কৌশলগত পরিবেশ, জাতীয় নিরাপত্তার উদীয়মান চ্যালেঞ্জ এবং পরিবর্তনশীল হুমকির প্রেক্ষিতে পাকিস্তানের কৌশলগত অবস্থান নিয়ে বিস্তৃত আলোচনা হয়।
আঞ্চলিক ও অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তা পরিস্থিতির গভীর মূল্যায়ন করে সম্মেলনে সন্ত্রাসবাদকে যেকোনো মূল্যে নির্মূল করার প্রতিশ্রুতি পুনর্ব্যক্ত করা হয়। পাকিস্তানবিরোধী শক্তির হয়ে কাজ করা সহায়তাকারী ও পৃষ্ঠপোষকদের বিরুদ্ধেও রাষ্ট্রের সর্বশক্তি প্রয়োগের অঙ্গীকার জানানো হয়।
আজমে-ই-ইস্তেহকাম এর ভিশন
সম্মেলনে বলা হয়, সংবিধান অনুসারে রাষ্ট্র ও প্রতিষ্ঠানসমূহ আইন প্রয়োগে দৃঢ়প্রতিজ্ঞ থাকবে এবং কোনো প্রকার দুর্বলতা বা শিথিলতা প্রদর্শন করা হবে না।
‘জাতীয় কর্মপরিকল্পনার (এনএপি) আওতায় ‘ভিশন আজমে-ই-ইস্তেহকাম’-এর দ্রুত ও কার্যকর বাস্তবায়নের ওপর গুরুত্বারোপ করা হয় এবং একটি জাতীয় ঐক্যভিত্তিক কৌশল গ্রহণের প্রয়োজনীয়তাও তুলে ধরা হয়,’ জানায় আইএসপিআর।
জেনারেল আসিম মুনির দেশজুড়ে গঠিত জেলা সমন্বয় কমিটিসমূহের কার্যক্রমের প্রশংসা করেন এবং সরকার নির্দেশিত নীতিমালার সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে টেকসই ও সমন্বিত উদ্যোগ গ্রহণের ওপর জোর দেন, যাতে জাতীয় কর্মপরিকল্পনার বাস্তবায়ন ত্বরান্বিত হয় এবং প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে সম্পূর্ণ সমন্বয় বজায় থাকে।
অবৈধ অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড, যা সন্ত্রাসের অর্থায়নের সঙ্গে প্রত্যক্ষভাবে জড়িত, তা নির্মূলে কঠোর আইনি পদক্ষেপ গ্রহণে সরকার ও আইন প্রয়োগকারী সংস্থাগুলোকে সেনাবাহিনী সর্বাত্মক সহযোগিতা দেবে বলেও জানান তিনি। ‘সন্ত্রাসী ও তাদের পৃষ্ঠপোষকদের জন্য পাকিস্তানে কোনো স্থান নেই।’
অধিকৃত কাশ্মীরে মানবাধিকার লঙ্ঘন
ভারতের অবৈধভাবে অধিকৃত জম্মু ও কাশ্মীরে অব্যাহত ও চরম মানবাধিকার লঙ্ঘন এবং নিয়ন্ত্রণ রেখা বরাবর ভারতীয় সেনাবাহিনীর উসকানিমূলক গোলাগুলিতে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছে কোর কমান্ডার সম্মেলন। সেখানে বসবাসকারী মানুষের ন্যায়সঙ্গত দাবির প্রতি পাকিস্তানের অবিচল সমর্থনের বিষয়টি পুনর্ব্যক্ত করা হয় এবং আন্তর্জাতিক পর্যায়ে এসব নির্যাতনের বিষয়টি আরও জোরালোভাবে তুলে ধরার জন্য ধারাবাহিক কূটনৈতিক প্রচেষ্টা চালানোর ওপর গুরুত্বারোপ করা হয়।
ফিলিস্তিনের প্রতি সংহতি
সম্মেলনে গাজা উপত্যকায় চলমান ভয়াবহ মানবাধিকার লঙ্ঘন ও যুদ্ধাপরাধের তীব্র নিন্দা জানানো হয়। ফিলিস্তিনবাসীর প্রতি পূর্ণ কূটনৈতিক, রাজনৈতিক ও নৈতিক সমর্থন অব্যাহত রাখার প্রতিশ্রুতি দেয় পাকিস্তান সেনাবাহিনী।
চূড়ান্ত নির্দেশনা
সম্মেলনের শেষাংশে পাক সেনাবাহিনী প্রধান ময়দানি কমান্ডারদের সর্বোচ্চ পেশাগত উৎকর্ষতা ও প্রস্তুতির মান বজায় রাখার নির্দেশ দেন। যুদ্ধক্ষেত্রে সর্বোচ্চ প্রস্তুতির জন্য কঠোর প্রশিক্ষণ ও অনুশীলনের ওপরও বিশেষ গুরুত্বারোপ করেন তিনি।