
প্রিন্ট: ০৮ এপ্রিল ২০২৫, ০৯:০১ এএম
কানাডার নির্বাচনে বিদেশি হস্তক্ষেপ, চীন-ভারতের দিকে সন্দেহের আঙুল

আন্তর্জাতিক ডেস্ক
প্রকাশ: ২৫ মার্চ ২০২৫, ০২:৫২ পিএম
-67e26edb13f15.jpg)
আরও পড়ুন
কানাডিয়ান সিকিউরিটি ইন্টেলিজেন্স সার্ভিস (সিএসআইএস) সতর্ক করে বলেছে, চীন ও ভারত দেশটির আসন্ন সাধারণ নির্বাচনে হস্তক্ষেপের চেষ্টা করতে পারে। ২৮ এপ্রিল অনুষ্ঠিতব্য এই নির্বাচনে দুই দেশের হস্তক্ষেপের সম্ভাবনাকে ‘অত্যন্ত সম্ভাব্য’ বলে অভিহিত করেছে সংস্থাটি।
সোমবার প্রকাশিত প্রতিবেদনে কানাডিয়ান গোয়েন্দা সংস্থা এই দাবি করে, যা ইতোমধ্যেই উত্তেজনাপূর্ণ কূটনৈতিক সম্পর্কের মধ্যে নতুন করে উত্তেজনা সৃষ্টি করতে পারে। এর আগে, চীন ও ভারত উভয়েই বিদেশি হস্তক্ষেপের অভিযোগ অস্বীকার করেছে।
কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার (এআই) মাধ্যমে প্রভাব বিস্তারের আশঙ্কা
এক সংবাদ সম্মেলনে সিএসআইএস-এর ডেপুটি অপারেশনস ডিরেক্টর ভেনেসা লয়েড বলেন, বিভিন্ন বিদেশি শক্তি গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়াকে প্রভাবিত করতে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (এআই) ব্যবহার করছে।
তিনি বলেন, চীন অত্যন্ত সম্ভাব্যভাবে এআই-সক্ষম প্রযুক্তি ব্যবহার করে কানাডার গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় হস্তক্ষেপের চেষ্টা করবে।
তিনি আরও বলেন, আমরা দেখেছি যে, ভারতও কানাডার গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠানগুলোর ওপর প্রভাব বিস্তারের ইচ্ছা ও সক্ষমতা রাখে।
কূটনৈতিক সংকট আরও তীব্র হচ্ছে
এই অভিযোগ এমন এক সময়ে উঠল, যখন কানাডা ও ভারতের মধ্যে কূটনৈতিক সম্পর্ক অত্যন্ত উত্তপ্ত। গত বছর, কানাডা ছয়জন ভারতীয় কূটনীতিককে বহিষ্কার করেছিল, যার মধ্যে মিশন প্রধানও ছিলেন। দেশটির দাবি, তারা কানাডার মাটিতে শিখ বিচ্ছিন্নতাবাদীদের লক্ষ্যবস্তু করার ষড়যন্ত্রে জড়িত ছিলেন। ভারত এই অভিযোগকে ‘ভিত্তিহীন ও রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত’ বলে নাকচ করেছে।
এদিকে, চলতি বছরের জানুয়ারিতে প্রকাশিত এক সরকারি তদন্ত প্রতিবেদনেও উঠে আসে যে, ২০১৯ ও ২০২১ সালের কানাডিয়ান নির্বাচনে চীন ও ভারত হস্তক্ষেপের চেষ্টা করেছিল। তবে তদন্তে বলা হয়, এসব প্রচেষ্টা নির্বাচনের চূড়ান্ত ফলাফল পরিবর্তন করতে পারেনি।
প্রতিবেদনে ভারতকে বিদেশি হস্তক্ষেপের দিক থেকে দ্বিতীয় সক্রিয় দেশ হিসেবে উল্লেখ করা হয় এবং বলা হয়, ‘ভারত ভুল তথ্য প্রচারকে একটি প্রধান কৌশল হিসেবে ব্যবহার করেছে’ এবং ২০২১ সালের নির্বাচনে কিছু নির্বাচনী প্রার্থীর অজান্তেই তাদের গোপনে অর্থায়নের চেষ্টা করতে পারে।
নয়াদিল্লি এই প্রতিবেদনকে কঠোর ভাষায় প্রত্যাখ্যান করেছে। ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এই অভিযোগকে ‘ভিত্তিহীন’ বলে উল্লেখ করে এবং কানাডাকে এ ধরনের মন্তব্য থেকে বিরত থাকার আহ্বান জানিয়েছে।
ভারতীয় পররাষ্ট্র দফতরের বিবৃতিতে বলা হয়, আমরা এই প্রতিবেদনের ইঙ্গিতকে প্রত্যাখ্যান করছি এবং আশা করি যে, অবৈধ অভিবাসনকে উত্সাহিত করার সমর্থন আর দেওয়া হবে না।
চীনের সঙ্গে ক্রমবর্ধমান উত্তেজনা
চীন ও কানাডার মধ্যকার সম্পর্কও সাম্প্রতিক সময়ে আরও উত্তপ্ত হয়েছে। চলতি মাসের শুরুতে, বেইজিং কানাডার কৃষি ও খাদ্যপণ্যের ওপর ২.৬ বিলিয়ন ডলারের শুল্ক আরোপ করে, যা গত বছর কানাডার ইলেকট্রিক যানবাহন, ইস্পাত ও অ্যালুমিনিয়ামের ওপর আরোপিত শুল্কের প্রতিশোধ হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে।
এছাড়া, গত সপ্তাহে চীনে চারজন কানাডিয়ান নাগরিককে মাদক পাচারের অভিযোগে মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করার ঘটনাও কূটনৈতিক উত্তেজনা বৃদ্ধি করেছে।
তবে কানাডার নতুন প্রধানমন্ত্রী মার্ক কার্নি, যিনি জাস্টিন ট্রুডোর স্থলাভিষিক্ত হয়েছেন, তিনি ভারতের সঙ্গে সম্পর্ক উন্নয়নের আগ্রহ প্রকাশ করেছেন। নির্বাচনী প্রচারের সময় তিনি নয়াদিল্লির সঙ্গে সম্পর্ক মজবুত করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন, যা এই নতুন অভিযোগের সময়কাল নিয়ে প্রশ্ন তুলছে।
অন্যদিকে, কানাডায় নিযুক্ত চীন ও ভারতের কূটনৈতিক মিশন এই নতুন অভিযোগের বিষয়ে এখনো কোনো মন্তব্য করেনি।