
প্রিন্ট: ০৮ এপ্রিল ২০২৫, ০৬:১০ এএম
অস্কারজয়ী চলচ্চিত্র নির্মাতা হামদান বল্লালকে গ্রেফতার করল ইসরাইল

আন্তর্জাতিক ডেস্ক
প্রকাশ: ২৫ মার্চ ২০২৫, ০১:২৬ পিএম

আরও পড়ুন
অস্কারজয়ী ডকুমেন্টারি ‘নো আদার ল্যান্ড’-এর সহপরিচালক ফিলিস্তিনি চলচ্চিত্র নির্মাতা হামদান বল্লালকে ইসরাইলি বসতি স্থাপনকারীরা হামলা চালানোর পর গ্রেফতার করেছে ইসরাইলি সেনারা। পশ্চিম তীরের দখলকৃত অঞ্চলে এই ঘটনা ঘটে বলে জানিয়েছেন বলালের সহপরিচালক ও প্রত্যক্ষদর্শীরা।
মঙ্গলবার (২৫ মার্চ) এক প্রতিবেদনে এ খবর দিয়েছে সামা টিভি।
সুসিয়াতে বল্লালসহ তিন ফিলিস্তিনির গ্রেফতার
ফিলিস্তিনি আইনজীবী লেয়া তেমেল নিশ্চিত করেছেন, সোমবার মাসাফের ইয়াত্তার সুসিয়া গ্রাম থেকে হামদান বলালসহ তিন ফিলিস্তিনিকে গ্রেফতার করা হয়েছে। তিনি জানান, ইসরাইলি পুলিশ তাকে জানিয়েছে যে, আটক ব্যক্তিরা একটি সামরিক ঘাঁটিতে চিকিৎসাধীন রয়েছেন, তবে তিনি তাদের সঙ্গে যোগাযোগ করতে পারেননি।
ডকুমেন্টারির আরেক সহপরিচালক বাসেল আদরা জানান, প্রায় দুই ডজন মুখোশধারী ও সশস্ত্র ইসরাইলি বসতি স্থাপনকারী সুসিয়া গ্রামে হামলা চালিয়ে ব্যাপক ধ্বংসযজ্ঞ চালায়। পরে সেনারা সেখানে উপস্থিত হলে তারা ফিলিস্তিনিদের দিকে বন্দুক তাক করে, কিন্তু বসতি স্থাপনকারীরা পাথর ছুড়ে হামলা চালিয়েই যাচ্ছিল।
আদরা বলেন, আমরা অস্কার থেকে ফিরে আসার পর প্রতিদিনই আমাদের ওপর হামলা হচ্ছে। মনে হচ্ছে, আমাদের সিনেমা বানানোর শাস্তি দেওয়া হচ্ছে।
ইসরাইলি সেনাবাহিনীর দাবি বিতর্কিত
ইসরাইলি সেনাবাহিনী জানিয়েছে, তারা তিন ফিলিস্তিনিকে গ্রেফতার করেছে যারা নাকি পাথর নিক্ষেপ করছিল, এবং এক ইসরাইলি নাগরিককে একটি সহিংস ঘটনায় আটক করা হয়েছে। তবে প্রত্যক্ষদর্শীরা এই দাবিকে প্রত্যাখ্যান করেছেন। সেনাবাহিনী আরও জানায়, আটক ব্যক্তিদের ইসরাইলি পুলিশের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে এবং আটক ইসরাইলি নাগরিককে চিকিৎসার জন্য নেওয়া হয়েছে।
বলালের গ্রেফতারের ঘটনাটি রমজান মাসের রোজা ভাঙার কিছু পরেই ঘটে। আদরা জানান, সুপরিচিত এক বসতি স্থাপনকারী, যে পূর্বেও গ্রামে হামলার সঙ্গে জড়িত ছিল, সে ইসরাইলি সেনাদের সঙ্গে নিয়ে বল্লালের বাড়ির সামনে আসে। এরপর সেখানে গুলির শব্দ শোনা যায় এবং বল্লালের স্ত্রী তাকে চিৎকার করে বলতে শোনেন, আমি মরে যাচ্ছি।
পরে আদরা দেখেন, বলালকে হাতকড়া পরিয়ে, চোখ বাঁধা অবস্থায় সেনারা নিয়ে যাচ্ছে। তার রক্ত এখনো তার বাড়ির সামনে পড়ে আছে।
আন্তর্জাতিক উদ্বেগ ও বসতি স্থাপনকারীদের হামলা
একটি মুখোশধারী দল, যাদের সংখ্যা ১০ থেকে ২০-এর মধ্যে ছিল, আন্তর্জাতিক কর্মীদের ওপরও হামলা চালায়। ‘সেন্টার ফর জিউইশ ননভায়োলেন্স’ নামের সংস্থার কর্মীদের লক্ষ্য করে তারা পাথর ছোড়ে, লাঠি দিয়ে আঘাত করে, গাড়ির জানালা ভাঙে এবং টায়ার ছিদ্র করে।
সংস্থার এক কর্মী, জশ কিমেলম্যান জানান, বসতি স্থাপনকারীরা আমাদের গাড়িতে পাথর ছুড়ে ও লাঠি দিয়ে মারধর করে পালাতে বাধ্য করেছে।
সংস্থাটির প্রকাশিত এক ভিডিওতে দেখা যায়, এক মুখোশধারী বসতি স্থাপনকারী দুই আন্তর্জাতিক কর্মীকে একটি মাঠের মধ্যে আক্রমণ করছে এবং পাথর তাদের গাড়ির ওপর এসে পড়ছে।
মাসাফের ইয়াত্তায় চলমান উত্তেজনা
পশ্চিম তীরের দক্ষিণ অংশে অবস্থিত মাসাফের ইয়াত্তা ১৯৮০-এর দশকে ইসরাইলি সেনাবাহিনীকে সামরিক প্রশিক্ষণের ক্ষেত্র হিসেবে বরাদ্দ করে। এরপর থেকে স্থানীয় ফিলিস্তিনিদের উচ্ছেদ করার জন্য ইসরাইলি কর্তৃপক্ষ একাধিক আদেশ জারি করে। বর্তমানে সেখানে প্রায় ১,০০০ ফিলিস্তিনি বাস করেন, যারা নিয়মিত বাড়িঘর ধ্বংস, সামরিক অভিযান ও সহিংস হামলার মুখোমুখি হন।
গাজায় চলমান যুদ্ধ শুরুর পর থেকে পশ্চিম তীরে ইসরাইলি সেনাদের অভিযানের মাত্রা ব্যাপকভাবে বেড়েছে। গত কয়েক মাসে সেখানে শত শত ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন। একই সঙ্গে বসতি স্থাপনকারীদের হামলা উল্লেখযোগ্য হারে বৃদ্ধি পেয়েছে, পাশাপাশি ফিলিস্তিনিদের প্রতিশোধমূলক আক্রমণও ঘটেছে।
‘নো আদার ল্যান্ড’: নিষ্পেষণের গল্প
‘নো আদার ল্যান্ড’ ডকুমেন্টারিটি মাসাফের ইয়াত্তার ফিলিস্তিনি বাসিন্দাদের সংগ্রামের গল্প তুলে ধরে, যেখানে ইসরাইলি সেনারা তাদের ঘরবাড়ি ধ্বংস করছে। হামদান বলাল ও বাসেল আদরা ছাড়াও ইসরাইলি পরিচালক যুবাল আব্রাহাম ও র্যাচেল শোর এই সিনেমার সহপরিচালক।
এই প্রামাণ্যচিত্রটি আন্তর্জাতিকভাবে প্রশংসিত হয়েছে এবং ২০২৫ সালের অস্কারে ‘সেরা প্রামাণ্যচিত্র’ বিভাগে পুরস্কার জিতেছে। তবে এটি ইসরাইলের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান ও কর্তৃপক্ষের মধ্যে বিতর্কের জন্ম দিয়েছে। মিয়ামি বিচের একটি থিয়েটারে সিনেমাটি প্রদর্শনের পর শহরটির প্রশাসন সেই থিয়েটারের লিজ বাতিল করার প্রস্তাব করেছিল।
বল্লালের ওপর হামলা এবং তার গ্রেফতার এই অঞ্চলে মতপ্রকাশের স্বাধীনতা, বসতি স্থাপনকারীদের সহিংসতা ও সামরিক হস্তক্ষেপ নিয়ে আন্তর্জাতিক উদ্বেগ আরও বাড়িয়েছে।