ট্রাম্প-পুতিন ফোনালাপ: কথা হলো যেসব বিষয়ে

আন্তর্জাতিক ডেস্ক
প্রকাশ: ১৯ মার্চ ২০২৫, ০৮:১১ পিএম

মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প এবং রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন মঙ্গলবার টেলিফোনে কথা বলেছেন এবং ইউক্রেন যুদ্ধ নিয়ে আলোচনা করেছেন।
ইউরোনিউজ জানিয়েছে, বহু প্রতীক্ষিত এই ফোনালাপের মূল বিষয় ছিলো- ইউক্রেনে যুদ্ধবিরতি। উভয় দেশের গণমাধ্যমের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, আলোচনাটি ইতিবাচকভাবেই এগিয়েছে।
মঙ্গলবার হোয়াইট হাউস জানিয়েছে, ফোনালাপটি ‘ভালোভাবে চলেছে’।
দ্য সান জানায়, নির্ধারিত সময়ের এক ঘণ্টা পর স্থানীয় সময় বিকাল ৫টার দিকে ক্রেমলিনে পৌঁছান পুতিন। এরপর তিনি ট্রাম্পের সঙ্গে প্রায় দেড় ঘণ্টার ফোনালাপে অংশ নেন।
ব্লুমবার্গ-এর এক প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে, ফোনালাপে ট্রাম্প ইউক্রেনে ৩০ দিনের যুদ্ধবিরতির অনুরোধ জানালেও পুতিন তা প্রত্যাখ্যান করেন। তবে তিনি ইউক্রেনের জ্বালানি অবকাঠামোর ওপর হামলা সীমিত রাখার বিষয়ে সম্মতি দেন।
অন্যদিকে ট্রাম্প তাদের এই ফোনালাপকে ‘গ্রেট’ বলে অভিহিত করেছেন। তিনি বলেন, ফোনালাপে রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন ‘খুব দৃঢ়’ এবং ‘শক্তিশালী’ অবস্থান নিয়েছেন।
ট্রাম্প ওয়াশিংটন এক্সামিনার-কে বলেন, ‘পুতিন খুব দৃঢ় ছিলেন, খুবই শক্তিশালী। যেমনটা তিনি সবসময় থাকেন। এটি একটি খুব ভালো ফোনালাপ ছিল। আমি তাকে খুব ভালোভাবে চিনি। আমি মনে করি, তিনি সত্যিই এই (ইউক্রেন সংঘাত) শেষ করতে চান’।
এর আগে ট্রাম্প সোমবার বলেছিলেন, ‘পুতিনের সঙ্গে আলোচনায় অনেক বিষয়ে একমত হওয়া গেছে, তবে এখনো অনেক কিছু বাকি’। তিনি জানান, আলোচনার মূল বিষয় হবে মস্কো ওয়াশিংটনের প্রস্তাবিত চুক্তি মেনে নেবে কি না।
ট্রাম্প সেদিন তার ট্রুথ সোশ্যাল প্ল্যাটফর্মে নিশ্চিত করেন যে, তিনি ও পুতিন ৩০ দিনের অস্থায়ী যুদ্ধবিরতির বিষয়ে আলোচনা করবেন।
যুদ্ধবিরতি চুক্তি ও বিদ্যুৎ কেন্দ্র নিয়ে আলোচনা
ট্রাম্প প্রশাসন আশাবাদী যে, তারা রাশিয়ার সমর্থন নিশ্চিত করতে পারবে। যেহেতু ইউক্রেন ইতোমধ্যেই যুদ্ধবিরতির জন্য সম্মতি দিয়েছে।
ট্রাম্প সোমবার ওয়াশিংটনে সাংবাদিকদের বলেন, ‘আমরা শান্তিচুক্তির জন্য কাজ করছি। যুদ্ধবিরতি এবং শান্তি প্রতিষ্ঠার চেষ্টা করছি। আমি মনে করি, আমরা এটি করতে পারবো’।
তিনি আরও বলেন, ওয়াশিংটন এবং মস্কো ইতোমধ্যে ইউক্রেনের জমি, বিদ্যুৎ কেন্দ্র ও সম্পদের বিভাজন নিয়ে আলোচনা করেছে।
হোয়াইট হাউসের প্রেস সচিব ক্যারোলিন লেভিট নিশ্চিত করেছেন, আলোচনায় জাপোরিঝিয়া পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রের ভবিষ্যৎ নিয়েও কথা হয়েছে।
এই বিদ্যুৎ কেন্দ্রটি রাশিয়া-ইউক্রেন সীমান্তের কাছে অবস্থিত এবং রুশ আগ্রাসনের পর থেকেই দ্বন্দ্বের কেন্দ্রবিন্দুতে রয়েছে। আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলো উদ্বেগ প্রকাশ করে বলেছে, এখানে সংঘর্ষ চলতে থাকলে একটি পারমাণবিক বিপর্যয় ঘটতে পারে।
জেলেনস্কি ও পশ্চিমা নেতাদের প্রতিক্রিয়া
এদিকে ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি বলেছেন, পুতিন ইচ্ছাকৃতভাবে যুদ্ধ দীর্ঘায়িত করছেন। তিনি বলেন, ‘এই প্রস্তাব বাস্তবায়ন অনেক আগেই শুরু হতে পারতো। প্রতিটি যুদ্ধের দিন মানেই মানুষের প্রাণহানি’।
অন্যদিকে রুশ প্রেসিডেন্ট পুতিন গত সপ্তাহে বলেছিলেন, তিনি যুদ্ধবিরতির ধারণা সমর্থন করেন। তবে কিছু অমীমাংসিত বিষয় আছে। বিশেষ করে কুরস্ক অঞ্চলে ইউক্রেনের সেনাদের ভবিষ্যৎ, যা নিয়ে আলোচনা করা দরকার।
তিনি আরও বলেন, কোনো ন্যাটো শান্তিরক্ষী বাহিনীকে যুদ্ধবিরতির তদারকি করার অনুমতি দেওয়া হবে না।
এদিকে, যুক্তরাজ্য ও ফ্রান্স পুতিনকে চুক্তিতে রাজি হতে উৎসাহিত করেছে। ফরাসি প্রেসিডেন্ট এমানুয়েল ম্যাক্রোঁ বলেছেন, ‘জেলেনস্কি শান্তিচুক্তির জন্য সাহস দেখিয়েছেন। এখন রাশিয়ার উচিত এটা প্রমাণ করা যে, তারা সত্যিই শান্তি চায়’।
ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী কেইর স্টার্মার বলেছেন, ‘যদি পুতিন সত্যিই শান্তি চান, তাহলে তাকে যুদ্ধবিরতিতে সম্মতি দিতে হবে’। সূত্র: মেহের নিউজ