
প্রিন্ট: ১৮ এপ্রিল ২০২৫, ১২:৫২ এএম

আন্তর্জাতিক ডেস্ক
প্রকাশ: ১৯ মার্চ ২০২৫, ১০:২০ এএম
আরও পড়ুন
জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদে (ইউএনএসসি) প্রথমবারের মতো জাফর এক্সপ্রেসে নিষিদ্ধ ঘোষিত বেলুচিস্তান লিবারেশন আর্মি (বিএলএ)-এর সন্ত্রাসী হামলার বিষয়টি উত্থাপন করেছে পাকিস্তান। দেশটি অভিযোগ করেছে, আফগানিস্তান সন্ত্রাসী গোষ্ঠীগুলোর বিরুদ্ধে কার্যকর ব্যবস্থা নিতে ব্যর্থ হয়েছে এবং সীমান্তবর্তী হামলায় মদদ দিচ্ছে।
একইসঙ্গে পাকিস্তান নিরাপত্তা পরিষদকে পশ্চিমা সীমান্ত থেকে আসা সন্ত্রাসী হামলা ঠেকাতে কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়ার আহ্বান জানিয়েছে এবং শিগগিরই সন্ত্রাসবিরোধী পদক্ষেপের প্রস্তাব উত্থাপন করবে।
বুধবার (১৯ মার্চ) এক প্রতিবেদনে এ খবর দিয়েছে দ্য নিউজ ইন্টারন্যাশনাল।
জাতিসংঘে পাকিস্তানের স্থায়ী প্রতিনিধি মুনির আকরাম সোমবার বলেন, ‘জাফর এক্সপ্রেসে হামলার সময় সন্ত্রাসীরা সরাসরি আফগানিস্তানে অবস্থানরত তাদের পরিচালকদের সঙ্গে যোগাযোগ রাখছিল, যেখান থেকে এই হামলার পরিকল্পনা ও পরিচালনা করা হয়েছিল। আমাদের কাছে প্রমাণ রয়েছে, আমাদের প্রধান প্রতিপক্ষ এই হামলা চালানোর জন্য আফগানিস্তানে তার মদদপুষ্ট গোষ্ঠীগুলোকে ব্যবহার করেছে এবং অর্থায়ন করেছে।’
জাতিসংঘের আফগানিস্তান সহায়তা মিশনের (ইউএনএএমএ) মেয়াদ এক বছর বাড়ানোর প্রস্তাব গ্রহণের সময় তিনি এসব কথা বলেন। পাকিস্তান এই প্রস্তাবের পক্ষে ভোট দেয়, যা মূলত চীন ও পাকিস্তানের উদ্যোগে প্রস্তাবিত হয়েছিল।
তিনি বলেন, ‘নিরাপত্তা পরিষদ এবং এর সন্ত্রাসবিরোধী ব্যবস্থা অবশ্যই সক্রিয় পদক্ষেপ গ্রহণ করবে, যাতে সন্ত্রাস দমনে আমাদের সিদ্ধান্ত কার্যকরভাবে বাস্তবায়ন করা যায়, বিশেষ করে আইএসআইএল-কে, আল-কায়েদা, তেহরিক-ই-তালেবান পাকিস্তান (টিটিপি), বিএলএ এবং মাজিদ ব্রিগেডের মতো সন্ত্রাসী সংগঠনের বিরুদ্ধে। এই সংগঠনগুলো আফগানিস্তান, অঞ্চল এবং বিশ্বে শান্তি ও নিরাপত্তার জন্য গুরুতর হুমকি সৃষ্টি করছে।’
গত সপ্তাহে পাকিস্তানের বেলুচিস্তান প্রদেশে যাত্রীবাহী ট্রেন জাফর এক্সপ্রেসে হামলা চালায় বিএলএ এবং মাজিদ ব্রিগেড। হামলাকারীরা শতাধিক যাত্রীকে জিম্মি করে এবং ২৫ জন নিরীহ নাগরিককে হত্যা করে। পাকিস্তানের বিশেষ বাহিনী এক সাহসী অভিযানে ৩৩ জন সন্ত্রাসীকে হত্যা করে।
মুনির আকরাম বলেন, ‘আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় এবং জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদ অবশ্যই আফগানিস্তান থেকে পরিচালিত সন্ত্রাসবাদ মোকাবিলাকে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দিতে হবে। আমরা ১৪ মার্চ নিরাপত্তা পরিষদের দেওয়া বিবৃতির প্রশংসা করি, যেখানে জাফর এক্সপ্রেসে হামলার নিন্দা জানানো হয়েছে এবং এই ঘৃণ্য অপরাধের জন্য দায়ীদের বিচারের আওতায় আনার আহ্বান জানানো হয়েছে।’
তিনি আরও বলেন, ‘আফগানিস্তানে মানবিক সহায়তা প্রয়োজনীয় হলেও সেখানে সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ হলো সন্ত্রাসবাদ। তালেবান সরকার আইএসআইএস/দায়েশ দমনে ব্যর্থ হয়েছে এবং অন্যান্য সন্ত্রাসী গোষ্ঠীগুলোর প্রতি সহানুভূতিশীল। তারা টিটিপি, বিএলএ ও মাজিদ ব্রিগেডের মাধ্যমে পাকিস্তানে সন্ত্রাসী কার্যক্রমে জড়িত।’
তিনি উল্লেখ করেন, ‘জাফর এক্সপ্রেসে হামলা এবং অন্যান্য সন্ত্রাসী হামলা পাকিস্তানের স্থিতিশীলতা ব্যাহত করার জন্য পরিচালিত হচ্ছে, বিশেষ করে চীন-পাকিস্তান অর্থনৈতিক করিডোর (সিপিইসি) বাধাগ্রস্ত করতেই এসব হামলা চালানো হচ্ছে।’
পাকিস্তান নিরাপত্তা পরিষদের গৃহীত প্রস্তাবে সন্তুষ্টি প্রকাশ করে জানায়, এতে স্পষ্টভাবে ‘আফগানিস্তানে সন্ত্রাসী গোষ্ঠীগুলোর উপস্থিতির প্রতি গুরুতর উদ্বেগ’ প্রকাশ করা হয়েছে এবং তালেবানদের সন্ত্রাস দমনে কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়ার আহ্বান জানানো হয়েছে।
তবে, পাকিস্তান সন্ত্রাসী হামলার শিকার হওয়া সত্ত্বেও জাতিসংঘের মাধ্যমে আফগানিস্তানে শান্তি, নিরাপত্তা ও উন্নয়নে সহযোগিতা করতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ বলে আশ্বস্ত করেছে।