শরণার্থী ইস্যুতে তালেবান সরকারের অনুরোধ প্রত্যাখ্যান করেছে পাকিস্তান

আন্তর্জাতিক ডেস্ক
প্রকাশ: ১৭ মার্চ ২০২৫, ১২:৫৮ পিএম
-67d7c82fd8b33.jpg)
আফগান তালেবান সরকারের অনুরোধ প্রত্যাখ্যান করেছে পাকিস্তান, যেখানে কাবুল চেয়েছিল আফগান শরণার্থীদের দেশে ফেরানোর সময়সীমা বাড়ানো হোক।
সোমবার (১৭ মার্চ) এক প্রতিবেদনে এ খবর দিয়েছে দ্য এক্সপ্রেস ট্রিবিউন।
ইসলামাবাদ স্পষ্টভাবে জানিয়ে দিয়েছে, তারা অবৈধভাবে বসবাসরত এবং আফগান সিটিজেন কার্ড (এসিসি) ধারীদের ১ এপ্রিল থেকে দেশে ফেরত পাঠানোর পরিকল্পনায় অটল থাকবে।
গত ৭ মার্চ পাকিস্তান ঘোষণা দেয়, এসিসিধারীদের ৩১ মার্চের মধ্যে দেশ ছাড়তে হবে, অন্যথায় তাদের অবৈধ অভিবাসী হিসেবে গণ্য করা হবে এবং জোরপূর্বক ফেরত পাঠানো হবে। পাকিস্তানে বর্তমানে প্রায় ৮ লাখ আফগান নাগরিক এসিসি বহন করছে, কিন্তু নির্ধারিত সময়সীমার পর তাদের আর দেশটিতে থাকার অনুমতি থাকবে না।
প্রথমবারের মতো পাকিস্তানের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় আনুষ্ঠানিকভাবে নিশ্চিত করেছে, দেশটি সব অবৈধ আফগানদের ফেরত পাঠানোর উদ্যোগ নিচ্ছে।
মন্ত্রণালয়ের বিবৃতিতে বলা হয়েছে, ‘অবৈধ বিদেশি প্রত্যাবাসন কর্মসূচি (আইএফআরপি) ১ নভেম্বর ২০২৩ থেকে কার্যকর রয়েছে। সরকারের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, এখন থেকে এসিসিধারীদেরও দেশে ফেরত পাঠানো হবে।’
বিবৃতিতে আরও বলা হয়, ‘৩১ মার্চ ২০২৫-এর মধ্যে স্বেচ্ছায় দেশ ছাড়ার জন্য অবৈধ অভিবাসী ও এসিসিধারীদের পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে। এরপর ১ এপ্রিল ২০২৫ থেকে তাদের জোরপূর্বক ফেরত পাঠানোর প্রক্রিয়া শুরু হবে।’
পাকিস্তানের দাবি, তারা ইতোমধ্যে আফগান অভিবাসীদের সম্মানজনক প্রত্যাবর্তনের জন্য যথেষ্ট সময় দিয়েছে। তবে এই সিদ্ধান্ত ঘোষণার পর তালেবান সরকার কূটনৈতিক চ্যানেলে যোগাযোগ করে পাকিস্তানকে অনুরোধ করেছিল তাদের নাগরিকদের দেশে ফেরানোর সময়সীমা দীর্ঘায়িত করতে।
তবে, রোববার পাকিস্তানের সরকারি সূত্র এক্সপ্রেস ট্রিবিউনকে জানিয়েছে, সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত এবং কোনো ছাড় দেওয়া হবে না। সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ ও চারটি প্রদেশকে আফগান শরণার্থীদের ফেরানোর প্রস্তুতি নিতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
২০২৩ সালের নভেম্বর থেকে শুরু হওয়া অভিযানের আওতায় ইতোমধ্যে ৮ লাখের বেশি অবৈধ আফগানকে পাকিস্তান থেকে ফেরত পাঠানো হয়েছে। তবে পাকিস্তান তখন ইউএনএইচসিআর-এর নিবন্ধিত শরণার্থী এবং এসিসিধারীদের ফেরত পাঠায়নি।
বর্তমানে পাকিস্তানে আনুমানিক ৩০ লাখ আফগান বসবাস করছে। আফগান সরকার সম্প্রতি পাকিস্তান থেকে তাদের নাগরিকদের জোরপূর্বক ফেরত পাঠানোর বিষয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে এবং অভিযোগ করেছে যে, তাদের সঙ্গে খারাপ আচরণ করা হচ্ছে।
তবে পাকিস্তান এই অভিযোগ প্রত্যাখ্যান করেছে এবং তালেবান সরকারকে আহ্বান জানিয়েছে যেন তারা দেশে এমন পরিবেশ তৈরি করে, যেখানে তাদের নাগরিকরা স্বেচ্ছায় ফিরে যেতে পারে।
এই পদক্ষেপের ফলে দুই দেশের মধ্যকার উত্তেজনা আরও বাড়তে পারে। পাকিস্তান বারবার আফগানিস্তানকে তাদের ভূখণ্ডে সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের জন্য দায়ী করে আসছে। পাকিস্তানের দাবি, সাম্প্রতিক বেশ কয়েকটি সন্ত্রাসী হামলায় আফগান নাগরিকরা জড়িত ছিল।
তদন্তে বেরিয়ে এসেছে যে, বান্নু ক্যান্টনমেন্টে সন্ত্রাসী হামলার পেছনেও আফগান নাগরিকদের সম্পৃক্ততা ছিল। এছাড়া, ফেব্রুয়ারির ২১ তারিখ থেকে পাকিস্তান-আফগানিস্তান সীমান্তের তোর্খাম ক্রসিং বন্ধ রয়েছে, যেখানে দুই দেশের নিরাপত্তা বাহিনীর মধ্যে গোলাগুলি বিনিময়ের ঘটনা ঘটেছে।
পাকিস্তানের দাবি, আফগানিস্তান তাদের ভূখণ্ডে একটি নতুন চেকপোস্ট স্থাপন করতে চেয়েছিল, যা নিয়ে এই বিরোধ সৃষ্টি হয়। সূত্র জানায়, আফগানদের ফেরত পাঠানোর প্রক্রিয়ায় তোর্খাম সীমান্তও ব্যবহৃত হবে।