মার্কিন বিচারকদের রায়
ট্রাম্প প্রশাসনকে হাজারো বরখাস্ত কর্মী পুনর্বহালের নির্দেশ

আন্তর্জাতিক ডেস্ক
প্রকাশ: ১৫ মার্চ ২০২৫, ০৮:৩৭ এএম

ক্যালিফোর্নিয়া ও মেরিল্যান্ডের ফেডারেল বিচারকরা বৃহস্পতিবার মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের প্রশাসনকে হাজারো প্রবেশনারি ফেডারেল কর্মীকে পুনর্বহালের নির্দেশ দিয়েছেন, যাদের ১৯টি সংস্থায় ব্যাপক ছাঁটাইয়ের অংশ হিসেবে চাকরি থেকে বাদ দেওয়া হয়েছিল।
শুক্রবার (১৪ মার্চ) এক প্রতিবেদনে এ খবর দিয়েছে বার্তাসংস্থা রয়টার্স।
ট্রাম্প ও তার প্রধান উপদেষ্টা ইলন মাস্কের নেতৃত্বে ফেডারেল প্রশাসন সংকুচিত করার উদ্যোগের বিরুদ্ধে এটি সবচেয়ে বড় আইনি ধাক্কা। সরকারি সংস্থাগুলোকে দ্বিতীয় দফার গণছাঁটাইয়ের পরিকল্পনা ও বাজেট কমানোর নির্দেশ দেওয়া হয়েছে, যার জন্য বৃহস্পতিবার শেষ সময়সীমা নির্ধারিত ছিল।
গণছাঁটাই বেআইনি: বিচারকের রায়
বাল্টিমোরের জেলা বিচারক জেমস ব্রেডার ২০টি ডেমোক্র্যাট-নেতৃত্বাধীন রাজ্যের পক্ষে রায় দিয়ে বলেছেন, সম্প্রতি গণহারে প্রবেশনারি কর্মীদের বরখাস্ত করা ১৮টি সংস্থা ফেডারেল কর্মীদের ছাঁটাই সম্পর্কিত নিয়ম লঙ্ঘন করেছে।
ব্রেডারের নিষেধাজ্ঞার আওতায় যে সংস্থাগুলো রয়েছে, তার মধ্যে রয়েছে—পরিবেশ সংরক্ষণ সংস্থা (ইপিএ), ভোক্তা আর্থিক সুরক্ষা ব্যুরো (সিএফপিবি) এবং মার্কিন আন্তর্জাতিক উন্নয়ন সংস্থা (ইউএসএআইডি)। ট্রাম্প প্রশাসনের খরচ কমানোর লক্ষ্যে এসব সংস্থা বরাবরই টার্গেট ছিল।
অন্যান্য সংস্থার মধ্যে রয়েছে কৃষি, বাণিজ্য, শিক্ষা, জ্বালানি, স্বাস্থ্য ও জনসেবা, অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তা, গৃহায়ন ও নগরোন্নয়ন, শ্রম, পরিবহন, ট্রেজারি ও ভেটেরান্স বিষয়ক বিভাগ।
প্রশাসন দাবি করেছিল, কর্মীদের পারফরম্যান্স বা ব্যক্তিগত কারণের ভিত্তিতেই বরখাস্ত করা হয়েছে। তবে বিচারক বলেছেন, এটি সত্য নয়। এত বিপুল সংখ্যক কর্মীকে কয়েক দিনের মধ্যে ছাঁটাই করার ঘটনাই প্রমাণ করে যে এটি গণছাঁটাই, যা আগেভাগে রাজ্য সরকারকে অবহিত করা প্রয়োজন ছিল।
‘এত কর্মীকে একসঙ্গে বরখাস্ত করার ঘটনা দেখিয়ে দেয় যে এটি কোনো ব্যক্তিগত কর্মদক্ষতার ওপর ভিত্তি করে নেওয়া সিদ্ধান্ত নয়,’ বলেন ব্রেডার, যিনি ডেমোক্র্যাট প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামার মনোনীত বিচারক।
দ্বিতীয় বিচারকের রায়: কর্মীদের পুনর্বহাল
এর কয়েক ঘণ্টা পর, সান ফ্রান্সিসকোর জেলা বিচারক উইলিয়াম আলসাপ প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়সহ ছয়টি সংস্থার প্রবেশনারি কর্মীদের পুনর্বহালের নির্দেশ দেন।
তিনি বলেন, মার্কিন কর্মী ব্যবস্থাপনা দফতর (ওপিএম) এসব সংস্থাকে গণহারে কর্মী ছাঁটাই করতে বলেছিল, যা তার এখতিয়ারের বাইরে ছিল।
‘যে সরকার তার কর্মীদের মিথ্যা অভিযোগে চাকরি থেকে ছাঁটাই করে, সে সরকারের জন্য এটি একটি লজ্জার দিন,’ মন্তব্য করেন আলসাপ, যিনি সাবেক ডেমোক্র্যাট প্রেসিডেন্ট বিল ক্লিনটনের মনোনীত বিচারক।
হোয়াইট হাউসের প্রতিক্রিয়া
বিচারকদের আদেশের বিরুদ্ধে কঠোর প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে হোয়াইট হাউস। প্রেস সচিব ক্যারোলিন লেভিট এক বিবৃতিতে বলেছেন, ‘প্রেসিডেন্টের পুরো নির্বাহী শাখার ক্ষমতা প্রয়োগের অধিকার রয়েছে—কোনো একক জেলা আদালতের বিচারক এই ক্ষমতা অপব্যবহার করে প্রেসিডেন্টের এজেন্ডাকে বাধাগ্রস্ত করতে পারেন না।’
২৪ হাজার প্রবেশনারি কর্মী ছাঁটাই
ট্রাম্প ও মাস্কের নেতৃত্বে প্রশাসন ইতোমধ্যে ব্যাপক ছাঁটাই কার্যক্রম শুরু করেছে। জানুয়ারিতে দ্বিতীয়বার দায়িত্ব গ্রহণের পর থেকে অন্তত ২৪,০০০ প্রবেশনারি কর্মী বরখাস্ত হয়েছেন।
প্রবেশনারি কর্মীদের চাকরির মেয়াদ সাধারণত এক বছরের কম হয়, তবে কেউ কেউ দীর্ঘদিন ধরে ফেডারেল প্রশাসনে কর্মরত ছিলেন। তাদের চাকরির সুরক্ষা তুলনামূলক কম, তবে সাধারণত কেবল পারফরম্যান্সজনিত কারণে তাদের বরখাস্ত করা যায়।
ডেমোক্র্যাট-নেতৃত্বাধীন রাজ্যগুলো অভিযোগ করেছে, এই গণছাঁটাই ফেডারেল আইন ও বিধি লঙ্ঘন করেছে। তাদের মতে, গণছাঁটাইয়ের আগে স্থানীয় ও রাজ্য সরকারগুলোকে ৬০ দিনের নোটিশ দেওয়ার নিয়ম রয়েছে, যা প্রশাসন মানেনি।
এই সিদ্ধান্তের ফলে রাজ্যগুলোর বেকারত্ব সহায়তা ও সামাজিক সেবার ওপর চাপ বেড়েছে বলে দাবি করা হয়েছে।
ইউনিয়নের প্রতিক্রিয়া
যুক্তরাষ্ট্রের ৮ লাখ ফেডারেল কর্মীর প্রতিনিধিত্বকারী সংগঠন ‘আমেরিকান ফেডারেশন অব গভর্নমেন্ট এমপ্লয়িজ’ এই রায়কে প্রশাসনের বিরুদ্ধে বড় জয় হিসেবে দেখছে।
‘এটি এমন এক প্রশাসন, যারা ফেডারেল সংস্থাগুলোর কার্যক্রম দুর্বল করার জন্য সর্বোচ্চ চেষ্টা করছে,’ বলেন সংগঠনের সভাপতি এভারেট কেলি।
গত মাসে বিচারক আলসাপ ওপিএম-কে প্রবেশনারি কর্মীদের গণহারে বরখাস্তের আদেশ স্থগিত করতে বলেছিলেন, তবে পুনর্বহালের নির্দেশ দেননি। পরে মামলাটি সংশোধন করে বরখাস্ত হওয়া কর্মীদের পুনর্বহালের দাবি তোলা হয়।
এদিকে, মার্কিন ‘মেরিট সিস্টেমস প্রোটেকশন বোর্ড’ চলতি মাসের শুরুর দিকে কৃষি বিভাগকে সাময়িকভাবে প্রায় ৬,০০০ প্রবেশনারি কর্মী পুনর্বহাল করতে বলেছে।