বাংলাদেশি কোম্পানিগুলোর নাম জানা যায়নি এখনো
স্টারলিংক সেবা ভারতে আনতে এয়ারটেল ও জিওর সঙ্গে স্পেসএক্সের চুক্তি

আন্তর্জাতিক ডেস্ক
প্রকাশ: ১২ মার্চ ২০২৫, ০৯:৪৯ এএম
-67d1045301545.jpg)
ভারতের দুটি প্রধান টেলিকম কোম্পানি, ভারতী এয়ারটেল এবং রিলায়েন্স জিও, ইলন মাস্কের প্রতিষ্ঠান স্পেসএক্স-এর সঙ্গে চুক্তি স্বাক্ষর করেছে, যার মাধ্যমে ভারতে স্টারলিংক স্যাটেলাইট ইন্টারনেট পরিষেবা চালু করা হবে। তবে এই পরিষেবা চালুর জন্য সরকারি অনুমোদন প্রাপ্তির উপর নির্ভর করছে চুক্তি দুটি।
এক প্রতিবেদনে এ খবর দিয়েছে রয়টার্স ও দ্য ইকােনোমিক টাইমস।
এয়ারটেল, যা ইতোমধ্যে তার ওয়ানওয়েব প্রকল্পের মাধ্যমে স্যাটেলাইট যোগাযোগে দীর্ঘদিনের উপস্থিতি বজায় রেখেছে, এখন স্টারলিংকের সক্ষমতা ব্যবহার করার প্রস্তুতি নিচ্ছে। অন্যদিকে, রিলায়েন্স জিওও স্পেসএক্সের সঙ্গে একই ধরনের চুক্তি করেছে। এই চুক্তির আওতায় জিও তার রিটেইল স্টোর এবং অনলাইন প্ল্যাটফর্মের মাধ্যমে স্টারলিংক সরঞ্জাম বিক্রি করবে এবং ইনস্টলেশন সেবা প্রদান করবে।
স্পেসএক্স-এর প্রধান পরিচালন কর্মকর্তা গুইন শটওয়েল বলেছেন, আমরা জিওর ভারতের যোগাযোগ ব্যবস্থাকে এগিয়ে নেওয়ার প্রতিশ্রুতির প্রশংসা করি। আমরা জিওর সঙ্গে কাজ করতে এবং ভারতের সরকারের অনুমোদন পাওয়ার অপেক্ষায় রয়েছি, যাতে আরও বেশি মানুষ, প্রতিষ্ঠান এবং ব্যবসায়ীরা স্টারলিংকের উচ্চগতির ইন্টারনেট সেবা গ্রহণ করতে পারে।
দূরবর্তী ও প্রত্যন্ত অঞ্চলে উচ্চগতির ইন্টারনেট পৌঁছে দেওয়ার জন্য স্টারলিংকের স্যাটেলাইট প্রযুক্তি ইতোমধ্যে বিশ্বব্যাপী আলোচিত। তবে ভারতে এটি চালুর বিষয়ে রাজনৈতিক ও বাণিজ্যিক বিরোধ দেখা দিয়েছে, বিশেষ করে স্যাটেলাইট স্পেকট্রাম বরাদ্দের নিয়ম নিয়ে ইলন মাস্ক ও ভারতীয় ধনকুবের মুকেশ আম্বানির মধ্যে মতবিরোধ তৈরি হয়েছে।
এয়ারটেল ও জিও-এর এই চুক্তি ভারতীয় টেলিকম বাজারে নতুন প্রতিযোগিতার সৃষ্টি করবে, বিশেষ করে স্যাটেলাইট ইন্টারনেট পরিষেবা খাতে। যদিও দুইটি চুক্তিই সরকারি অনুমোদনের উপর নির্ভরশীল, তবে স্পেসএক্সকে সরকারের অনুমোদন পেলে দেশের টেলিকম খাতে বিপ্লব ঘটাতে পারে এই সহযোগিতা।
এটি এমন একটি সময় যখন জিও এবং স্পেসএক্স-এর মধ্যে স্যাটেলাইট স্পেকট্রাম বরাদ্দের বিষয়ে এক সংঘাত ছিল। জিও যেখানে নিলামের পক্ষে ছিল, সেখানে ভারতের সরকার মাস্কের পক্ষ নেয়, যা বৈশ্বিক প্রথার সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ।
এখন, এয়ারটেল ও জিও দুই টেলিকম জায়ান্টই শুধু সাধারণ ব্রডব্যান্ড পরিষেবায় নয়, বরং স্যাটেলাইট ইন্টারনেট সেবায়ও প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে প্রস্তুত।
স্পেসএক্স-এর প্রধান পরিচালন কর্মকর্তা গুইন শটওয়েল বলেছেন, আমরা এয়ারটেলের সঙ্গে কাজ করতে পেরে আনন্দিত এবং স্টারলিংকের মাধ্যমে ভারতের মানুষের জন্য ডিজিটাল সংযোগের নতুন সম্ভাবনা উন্মোচন করতে চাই।
বর্তমানে ভারতে ইলন মাস্কের বড় ব্যবসায়িক উপস্থিতি নেই, তবে তার বৈদ্যুতিক গাড়ি সংস্থা টেসলা শিগগিরই ভারতীয় বাজারে প্রবেশের পরিকল্পনা করছে। গত মাসে টেসলা ভারতের জন্য কর্মী নিয়োগ শুরু করে, যা মোদির সঙ্গে মাস্কের সাম্প্রতিক বৈঠকের পরপরই ঘটে।
সম্প্রতি বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকার জানিয়েছে, বাংলাদেশে স্টারলিংকের গ্রাউন্ড আর্থ স্টেশন স্থাপন করা হবে, যা দ্রুত ও নিরবিচ্ছিন্ন ইন্টারনেট সেবায় সহায়ক হবে। এ লক্ষ্যে ৯০ কর্মদিবসের মধ্যে প্রয়োজনীয় কাজ শেষ করতে চায় অন্তর্বর্তী সরকার।
গ্রাউন্ড আর্থস্টেশন স্থাপনের লক্ষ্যে বেশ কয়েকটি দেশি প্রতিষ্ঠান স্টারলিংকের সঙ্গে যৌথভাবে কাজ করবে। তবে সেই কোম্পানিগুলো কারা, তা এখনো জানা যায়নি।
প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস ১৯ ফেব্রুয়ারি এক চিঠিতে স্পেসএক্সের সিইও ইলন মাস্ককে বাংলাদেশ সফরের আমন্ত্রণ জানান এবং দেশে স্টারলিংক সেবা চালুর প্রস্তাব দেন।
তিনি মাস্ককে জানান, তার সফর বাংলাদেশের তরুণদের সঙ্গে সরাসরি কথা বলার সুযোগ করে দেবে, যারা এই উন্নত প্রযুক্তির অন্যতম প্রধান সুবিধাভোগী হবে।
এর আগে, ১৩ ফেব্রুয়ারি অধ্যাপক ইউনূস ও ইলন মাস্কের মধ্যে দীর্ঘ ফোনালাপ হয়, যেখানে বাংলাদেশে স্টারলিংক চালুর ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা ও সহযোগিতার সুযোগ নিয়ে আলোচনা হয়।