পাকিস্তানের অভিযোগ: সন্ত্রাসী সংগঠনগুলো আফগানিস্তান থেকে কার্যক্রম চালাচ্ছে

আন্তর্জাতিক ডেস্ক
প্রকাশ: ১২ মার্চ ২০২৫, ০৮:২৮ এএম

পাকিস্তান জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদকে (ইউএনএসসি) সতর্ক করে জানিয়েছে, নিষিদ্ধ ঘোষিত তেহরিক-ই-তালেবান পাকিস্তান (টিটিপি) ধীরে ধীরে আঞ্চলিক জঙ্গিগোষ্ঠীগুলোর জন্য একটি ছাতার সংগঠনে পরিণত হচ্ছে। ইসলামাবাদের দাবি, আফগানিস্তানের ক্ষমতাসীন তালেবান কর্তৃপক্ষ টিটিপির সীমান্তপারের সন্ত্রাসী কার্যক্রমকে প্রশ্রয় দিচ্ছে এবং অনেক ক্ষেত্রে সরাসরি সহযোগিতাও করছে।
মঙ্গলবার (১১ মার্চ) এক প্রতিবেদনে এ খবর দিয়েছে দ্য এক্সপ্রেস ট্রিবিউন।
জাতিসংঘে পাকিস্তানের স্থায়ী প্রতিনিধি মুনির আকরাম বলেছেন, আফগানিস্তানভিত্তিক সন্ত্রাসী সংগঠনগুলো সক্রিয় রয়েছে এবং তা পাকিস্তানের নিরাপত্তার জন্য গুরুতর হুমকি সৃষ্টি করছে।
জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদের আফগানিস্তান সংক্রান্ত ব্রিফিংয়ে বক্তব্য রাখতে গিয়ে মুনির আকরাম বলেন, আফগান অন্তর্বর্তী সরকার আল-কায়েদা, তেহরিক-ই-তালেবান পাকিস্তান (টিটিপি) এবং বেলুচিস্তান লিবারেশন আর্মি (বিএলএ)-এর মতো সন্ত্রাসী সংগঠনগুলোর কার্যক্রম দমনে ব্যর্থ হয়েছে।
তিনি বলেন, টিটিপি, যা আফগানিস্তান থেকে পরিচালিত হয় এবং প্রায় ৬,০০০ জঙ্গির সমন্বয়ে গঠিত, পাকিস্তানের সীমান্তবর্তী অঞ্চলে নিরাপদ আশ্রয় থেকে হামলা চালাচ্ছে।
তিনি জানান, এসব হামলায় পাকিস্তানি সেনা, বেসামরিক নাগরিক এবং রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানগুলো ক্ষতির শিকার হয়েছে।
মুনির আকরাম আরও বলেন, টিটিপি, যা কাবুলের পৃষ্ঠপোষকতায় পরিচালিত হচ্ছে বলে মনে করা হয়, দ্রুত আঞ্চলিক সন্ত্রাসী গোষ্ঠীগুলোর জন্য একটি ছাতার সংগঠনে পরিণত হচ্ছে।
তিনি দাবি করেন, বিশ্বাসযোগ্য প্রমাণ রয়েছে যে কাবুলের কর্তৃপক্ষ কেবল টিটিপির কর্মকাণ্ড সহ্যই করছে না, বরং তাদের সীমান্তবর্তী সন্ত্রাসী হামলায় সহযোগিতাও করছে।
এছাড়া, পাকিস্তানি বাহিনী যখন টিটিপির বিরুদ্ধে সন্ত্রাসবিরোধী অভিযান পরিচালনা করছে, তখন আধুনিক অস্ত্রশস্ত্র উদ্ধারের ঘটনা উদ্বেগজনক বলে মন্তব্য করেন মুনির আকরাম। তিনি বলেন, এসব অস্ত্র ২০২১ সালে আফগানিস্তান থেকে বিদেশি বাহিনীর প্রত্যাহারের সময় রেখে যাওয়া সামরিক সরঞ্জামের অংশ।
জাতিসংঘ মহাসচিবের সাম্প্রতিক প্রতিবেদনের সমালোচনা করে তিনি বলেন, এতে আফগানিস্তানে বাড়তে থাকা সন্ত্রাসী হুমকির বিষয়টি যথাযথভাবে তুলে ধরা হয়নি।
তিনি প্রশ্ন তোলেন, ‘আফগানিস্তানের পরিস্থিতি ও তার আন্তর্জাতিক শান্তি ও নিরাপত্তার ওপর প্রভাব’ শীর্ষক একটি প্রতিবেদনে মানবিক, অর্থনৈতিক ও মানবাধিকার বিষয়গুলো আলোচনা করা হলেও সন্ত্রাসবাদের বিষয়টি কেন উপেক্ষা করা হলো?
তিনি জানান, পাকিস্তান এখন দোহা প্রক্রিয়ার অধীনে একটি সন্ত্রাসবিরোধী কার্যকরী দল গঠনের জন্য চাপ দেবে, যা ক্রমবর্ধমান জঙ্গি হুমকি মোকাবিলার জন্য একটি কাঠামোগত দৃষ্টিভঙ্গি তৈরি করবে।
মুনির আকরাম আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে আহ্বান জানান, যেন আফগানিস্তানকে বিশ্বব্যাপী সন্ত্রাসবাদের ঘাঁটিতে পরিণত হতে না দেওয়া হয়।
তিনি জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদকে সতর্ক করে বলেন, তালেবানের ক্ষমতা গ্রহণের পর যে নিরাপত্তাহীনতা সৃষ্টি হয়েছে, তা মোকাবিলায় কার্যকর পদক্ষেপ না নিলে পরিস্থিতির ভয়াবহ পরিণতি হতে পারে।
তিনি আরও জানান, ইসলামাবাদ জাতিসংঘ কাঠামোর মধ্যে একটি আনুষ্ঠানিক ব্যবস্থা তৈরির জন্য পরামর্শ-প্রক্রিয়া শুরু করবে, যা সীমান্তপার সন্ত্রাসবাদ মোকাবিলায় ভূমিকা রাখবে।
পাকিস্তান তার নিরাপত্তাকে ক্ষুণ্ন হতে দেবে না এবং জনগণ ও স্বার্থ রক্ষার জন্য প্রয়োজনীয় সব পদক্ষেপ নেবে বলে তিনি জোর দিয়ে বলেন।