Logo
Logo
×

আন্তর্জাতিক

মেটার প্রতিদ্বন্দ্বী প্ল্যাটফর্ম হিসেবে মার্কিন বাজারে টিকটক

টিকটক কিনতে আগ্রহী যুক্তরাষ্ট্রের চার কোম্পানি, চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত ট্রাম্পের

Icon

আন্তর্জাতিক ডেস্ক

প্রকাশ: ১১ মার্চ ২০২৫, ১০:২৬ এএম

টিকটক কিনতে আগ্রহী যুক্তরাষ্ট্রের চার কোম্পানি, চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত ট্রাম্পের

মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প জানিয়েছেন, চীনা মালিকানাধীন জনপ্রিয় ভিডিও-শেয়ারিং অ্যাপ টিকটকের ভবিষ্যৎ এখনো অনিশ্চিত থাকলেও এটি অধিগ্রহণের বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্র চারটি ভিন্ন কোম্পানির সঙ্গে আলোচনা চালিয়ে যাচ্ছে। 

সোমবার (১০ মার্চ) এক প্রতিবেদনে এ খবর দিয়েছে বার্তাসংস্থা এএফপি।

টিকটককে মার্কিন বাজারে নিষিদ্ধ হওয়ার ঝুঁকি এড়াতে বাধ্য হয়ে বিক্রি হতে হতে পারে, তবে চীনা মূল কোম্পানি বাইটডান্স এখনো চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেয়নি।  

সম্প্রতি যুক্তরাষ্ট্র একটি নতুন আইন প্রণয়ন করেছে, যেখানে বলা হয়েছে, টিকটককে অবশ্যই এর চীনা মালিকানাধীন কোম্পানি বাইটডান্স থেকে বিচ্ছিন্ন হতে হবে, অন্যথায় এটি যুক্তরাষ্ট্রে নিষিদ্ধ হবে।  

রোববার (৯ মার্চ) ট্রাম্পকে জিজ্ঞাসা করা হলে তিনি বলেন, এটি হতে পারে।  

তিনি আরও বলেন, আমরা চারটি ভিন্ন কোম্পানির সঙ্গে আলোচনা করছি। অনেকেই এটি কিনতে চায়, তবে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত আমার হাতে।  

ট্রাম্প জানান, এই চারটি কোম্পানিই ভালো। তবে তিনি তাদের নাম প্রকাশ করেননি।  

টিকটক নিষিদ্ধের আইনি প্রক্রিয়া ও সাম্প্রতিক পরিস্থিতি  

টিকটক নিষিদ্ধের এই আইন কার্যকর হয় ১৯ জানুয়ারি। ওয়াশিংটন আশঙ্কা করছে, চীনা সরকার মার্কিন নাগরিকদের ওপর নজরদারি করতে বা গোপনে জনমত প্রভাবিত করতে টিকটক ব্যবহার করতে পারে।  

আইনের মেয়াদ শেষ হওয়ার আগে, টিকটক সাময়িকভাবে যুক্তরাষ্ট্রে পরিষেবা বন্ধ করে এবং অ্যাপ স্টোর থেকে উধাও হয়ে যায়, যা মিলিয়ন ব্যবহারকারীর মধ্যে হতাশা তৈরি করে।  

তবে, দ্বিতীয় মেয়াদে ক্ষমতায় এসে ট্রাম্প এর বাস্তবায়ন আড়াই মাসের জন্য স্থগিত করেন এবং বেইজিংয়ের সঙ্গে একটি সমাধান খোঁজার চেষ্টা করেন।  

এরপর ফেব্রুয়ারিতে টিকটক পুনরায় মার্কিন বাজারে ফিরে আসে এবং অ্যাপল ও গুগল প্লেস্টোরে আবারও ডাউনলোডের জন্য উন্মুক্ত হয়।  

সম্ভাব্য ক্রেতারা কারা?  

টিকটক কেনার জন্য যে চারটি পক্ষ আলোচনায় রয়েছে, তাদের মধ্যে রয়েছে—  

- দ্য পিপলস বিড ফর টিকটক— এটি রিয়েল এস্টেট ও ক্রীড়া খাতের টাইকুন ফ্র্যাঙ্ক ম্যাককোর্টের প্রজেক্ট লিবার্টি উদ্যোগের একটি অংশ।  

- মাইক্রোসফট  

- ওরাকল  

- ইন্টারনেট তারকা মিস্টারবিস্ট (জিমি ডোনাল্ডসন) নেতৃত্বাধীন একটি গ্রুপ  

তবে, টিকটক নিজেই এই বিক্রির ব্যাপারে খুব একটা আগ্রহী বলে মনে হচ্ছে না।  

ট্রাম্প ২০২০ সালে প্রথমবার প্রেসিডেন্ট থাকাকালে জাতীয় নিরাপত্তা ঝুঁকির কারণে টিকটক নিষিদ্ধের চেষ্টা করেছিলেন। এবারও একই কারণ দেখিয়ে নতুনভাবে বিক্রির শর্ত চাপানো হচ্ছে।

টিকটক যেভাবে ভূরাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক প্রতিযোগিতার অনুষঙ্গ

চীনের প্রতিক্রিয়া: টিকটক মালিকানাধীন প্রতিষ্ঠান বাইটডান্স এত বড় একটি সম্পদ বিক্রি করতে চাইবে না, বিশেষত যখন এটি বৈশ্বিকভাবে জনপ্রিয়।  চীন সরকারও এই চাপে আপত্তি তুলতে পারে এবং নতুন নিষেধাজ্ঞা আরোপ করতে পারে।  

জাতীয় নিরাপত্তার প্রশ্ন: ট্রাম্প প্রশাসন এবং মার্কিন কংগ্রেস দীর্ঘদিন ধরে দাবি করছে যে টিকটকের মাধ্যমে চীনের সরকার মার্কিন নাগরিকদের তথ্য সংগ্রহ করতে পারে। তবে এ নিয়ে এখনও সুনির্দিষ্ট প্রমাণ উপস্থাপন করা হয়নি, যা বিতর্কের জন্ম দিয়েছে।  

যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে টিকটকের ভবিষ্যৎ: টিকটক যদি বিক্রি না হয়, তাহলে এটি মার্কিন বাজার হারাতে পারে, যা কোম্পানির রাজস্বের একটি বড় অংশ। অন্যদিকে, বিক্রি হলে নতুন মালিকদের অধীনে এটি কীভাবে পরিচালিত হবে, সেটিও বড় প্রশ্ন।  

রাজনৈতিক উদ্দেশ্য: অনেকে মনে করছেন, এটি শুধুমাত্র জাতীয় নিরাপত্তার বিষয় নয়, বরং যুক্তরাষ্ট্র-চীন বাণিজ্য ও প্রযুক্তি প্রতিযোগিতার অংশ। ট্রাম্প প্রশাসন এর আগেও চীনা প্রযুক্তি কোম্পানির বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থান নিয়েছে, যেমন হুয়াওয়ে নিষিদ্ধকরণ।  

প্রতিদ্বন্দ্বী মার্কিন কোম্পানিগুলোর ভূমিকা: মাইক্রোসফট, ওরাকল এবং অন্যান্য বড় প্রযুক্তি সংস্থাগুলো যদি টিকটক অধিগ্রহণ করে, তাহলে তারা সোশ্যাল মিডিয়া বাজারে শক্তিশালী অবস্থান নিতে পারবে। বিশেষ করে, মেটার (ফেসবুক) প্রতিদ্বন্দ্বী প্ল্যাটফর্ম হিসেবে টিকটক একটি বড় প্রতিযোগী, যা মার্কিন বাজারে ব্যাঘাত ঘটাচ্ছে।  

এটি শুধু প্রযুক্তির নিয়ন্ত্রণের বিষয় নয়, বরং একটি ভূরাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক প্রতিযোগিতা। এই আলোচনা শেষ পর্যন্ত কোন দিকে মোড় নেয়, তা দেখার বিষয়।

Jamuna Electronics

Logo

সম্পাদক : আবদুল হাই শিকদার

প্রকাশক : সালমা ইসলাম