Logo
Logo
×

আন্তর্জাতিক

রাজনীতি নিয়ে হতাশা, নেপালে রাজতন্ত্রের দাবিতে সমাবেশ

Icon

আন্তর্জাতিক ডেস্ক

প্রকাশ: ০৯ মার্চ ২০২৫, ১০:৩৬ পিএম

রাজনীতি নিয়ে হতাশা, নেপালে রাজতন্ত্রের দাবিতে সমাবেশ

নেপালের সাবেক রাজা জ্ঞানেন্দ্র শাহকে স্বাগত জানিয়ে দেশটির রাজধানী কাঠমাণ্ডুতে হাজার হাজার মানুষ মিছিল করেছেন। রোববার কাঠমাণ্ডুর ত্রিভূবন আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে তাকে স্বাগত জানাতে হাজার হাজার মানুষের সমাগম ঘটে। এ সময় তারা দেশটিতে বিলুপ্ত ঘোষণা করা রাজতন্ত্রকে পুনরায় চালু করার দাবিতে বিভিন্ন ধরনের স্লোগান দেন এবং রাষ্ট্রীয় ধর্ম হিসেবে হিন্দু ধর্মকে ঘোষণার দাবি জানান।

রোববার মার্কিন বার্তা সংস্থা এসোসিয়েটেড প্রেসের (এপি) এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানানো হয়েছে। এতে বলা হয়েছে, রোববার নেপালের সাবেক রাজা জ্ঞানেন্দ্র শাহকে স্বাগত জানাতে ত্রিভুবন আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে প্রায় ১০ হাজার মানুষের সমাগম ঘটে। সাবেক এই রাজার সমর্থকরা বিমানবন্দরের প্রধান প্রবেশপথ আটকে দিয়ে তাকে স্বাগত জানান। দেশটির পশ্চিমাঞ্চল সফর শেষে রাজধানীতে ফেরেন জ্ঞানেন্দ্র শাহ।

এ সময় বিমানবন্দরে উপস্থিত জনতা ‘রাজার জন্য রাজপ্রাসাদ খালি করুন। রাজা ফিরে আসুন, দেশকে বাঁচান। আমাদের প্রিয় রাজা দীর্ঘজীবি হন। আমরা রাজতন্ত্র চাই’-সহ বিভিন্ন ধরনের স্লোগান দেন। সাবেক রাজা জ্ঞানেন্দ্র শাহর সমর্থকরা বিমানবন্দরের প্রবেশপথে অবস্থান নেওয়ায় যাত্রীরা পায়ে হেঁটে বিমানবন্দরে প্রবেশ এবং ত্যাগ করেন।

পরে বিক্ষোভকারীদের বিমানবন্দরে প্রবেশে বাধা দেয় কয়েকশ দাঙ্গা পুলিশ। তবে এ ঘটনায় সেখানে কোনও ধরনের সহিংসতা হয়নি।

এর আগে, ২০০৬ সালে দেশজুড়ে তুমুল প্রতিবাদ-বিক্ষোভের মুখে রাজা জ্ঞানেন্দ্র শাহ ক্ষমতা ছাড়তে বাধ্য হন। এর দু’বছর পর দেশটির সংসদে রাজতন্ত্রকে বিলুপ্তির জন্য ভোটাভুটি অনুষ্ঠিত হয়। সংখ্যাগরিষ্ঠ সংসদ সদস্যদের ভোটে নেপালে রাজতন্ত্র বিলুপ্ত ঘোষণা করা হয়। পরে রাজা জ্ঞানেন্দ্র শাহ সাধারণ জীবনযাপনের লক্ষ্যে কাঠমাণ্ডুর রাজপ্রাসাদ ছেড়ে চলে যান।

কিন্তু সম্প্রতি নেপালের অনেকে প্রজাতান্ত্রিক শাসনব্যবস্থা ঘিরে হতাশ হয়ে পড়েছেন। তারা বলেছেন, দেশে রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা, অর্থনৈতিক সংকট ও ব্যাপক দুর্নীতি নিয়ন্ত্রণে আনতে ব্যর্থ হয়েছে প্রজাতন্ত্র। ২০০৮ সালে নেপালে রাজতন্ত্রের বিলুপ্তি ঘোষণা পর থেকে অন্তত ১৩টি সরকার ক্ষমতায় আসে।

ত্রিভুবন আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে সমাবেশে অংশগ্রহণকারীরা বলেছেন, দেশের আরও অবনতির দিকে যাওয়া ঠেকাতে রাজনৈতিক ব্যবস্থার পরিবর্তনের প্রত্যাশা করছিলেন তারা।

দেশটির ৭২ বছর বয়সি থীর বাহাদুর ভাণ্ডারি নামের এক নাগরিক বলেন, রাজাকে পূর্ণ সমর্থন দেওয়ার জন্য আমরা এখানে সমবেত হয়েছি। রাজ সিংহাসনে তাকে পুনরায় বসানোর জন্য আমরা এখানে আছি। তার প্রতি আমাদের সমর্থন আছে।

২০০৬ সালে তৎকালীন রাজা জ্ঞানেন্দ্র শাহর বিরুদ্ধে দেশজুড়ে যে বিক্ষোভ ছড়িয়ে পড়েছিল, তাতে অংশ নিয়েছিলেন ৫০ বছর বয়সি রং মিস্ত্রি কুলরাজ শ্রেষ্ঠ। নেপালের বর্তমান রাজনৈতিক ব্যবস্থার প্রতি হতাশ হয়ে নিজের সিদ্ধান্ত বদলের কথা বলছেন তিনি। এখন রাজতন্ত্রের প্রতি তার সমর্থন আছে বলে জানান কুলরাজ।

তিনি বলেন, দেশে সবচেয়ে খারাপ যে ঘটনা ঘটছে, সেটি হল ভয়াবহ দুর্নীতি এবং ক্ষমতায় থাকা সব রাজনীতিবিদরা দেশের জন্য কিছুই করছেন না। রং মিস্ত্রি কুলরাজ শ্রেষ্ঠ বলেন, আমি রাজতন্ত্র বিলোপের বিক্ষোভ-প্রতিবাদে এই আশায় অংশ নিয়েছিলাম যে, তা দেশকে সহায়তা করবে। কিন্তু আমি ভুল করেছিলাম। দেশ আরও ডুবে গেছে। তাই আমি সিদ্ধান্ত পরিবর্তন করেছি।

তবে রাজতন্ত্র পুনরায় চালু করার বিষয়ে জনগণের আহ্বান নিয়ে কোনও মন্তব্য করেননি জ্ঞানেন্দ্র শাহ। দেশটিতে সাবেক এই রাজার পক্ষে ক্রমবর্ধমান সমর্থন থাকলেও অবিলম্বে তার ক্ষমতায় ফেরার সম্ভাবনা ক্ষীণ।

রাজপ্রাসাদে নিজের ভাই ও পরিবার হত্যাকাণ্ডের শিকার হওয়ার পর ২০০২ সালে নেপালের রাজা হন জ্ঞানেন্দ্র শাহ। তিনি ২০০৫ সাল পর্যন্ত নির্বাহী বা রাজনৈতিক ক্ষমতা ছাড়াই সাংবিধানিকভাবে রাষ্ট্রপ্রধান হিসাবে দেশ শাসন করেন। পরে তিনি দেশের সরকার ও সংসদ ভেঙে দেন। একই সঙ্গে তিনি দেশটির রাজনীতিবিদ ও সাংবাদিকদের কারাবন্দি, যোগাযোগ ব্যবস্থা বিচ্ছিন্ন করে জরুরি অবস্থা ঘোষণা করেন এবং দেশ শাসনে সেনাবাহিনীকে ব্যবহার করেন।

Jamuna Electronics

Logo

সম্পাদক : আবদুল হাই শিকদার

প্রকাশক : সালমা ইসলাম