Logo
Logo
×

আন্তর্জাতিক

নারী হয়ে ওঠার আগেই বিয়ের পিঁড়িতে সিন্ধুর মেয়েরা 

Icon

আন্তর্জাতিক ডেস্ক

প্রকাশ: ০৮ মার্চ ২০২৫, ০৯:১৩ পিএম

নারী হয়ে ওঠার আগেই বিয়ের পিঁড়িতে সিন্ধুর মেয়েরা 

সূর্য অস্ত যেতে শুরু করেছে। গোধূলির আলো ছড়িয়ে পড়েছে চারদিকে। বাতাসে ভেসে আসছে শুকনো ঘাসের গন্ধ। যেকোনো সময় শুরু হতে পারে বৃষ্টি। বর্ষায় তলিয়ে যেতে পারে পাকিস্তানের সিন্ধু প্রদেশের খান মোহাম্মদ মালা গ্রাম। আর বর্ষা মানেই আবার হিংস্র হয়ে উঠবে সিন্ধু নদী। ভেসে যাবে  ফসলের মাঠ। হামলে পড়বে সেই ‘রাক্ষুসে অভাব’। 

সে ভয়ে বর্ষা শুরুর আগেই আসিফার বাবা-মা তাকে জানিয়ে দিলেন, ‘তোমার বিয়ে ঠিক হয়ে গেছে।’ পরিস্থিতিটা পুরোপুরি বুঝে উঠতে পারল না আসিফা। মাথায় শুধু এলো নতুন পোশাক, বড় উদ্যাপন, চকচকে গয়না, উপহার ও মেকআপের কথাই! কারণ বয়সটা ভীষণ কম মাত্র ১৩! ভারি বর্ষার স্রোতে ঘরবাড়ি তলিয়ে যাওয়ার আগেই হারিয়ে গেল তার আনন্দময় শৈশব। ফিরে পাওয়ার আর কোনো উপায় নেই। 

শুধু আসিফা নয়, সিন্ধু তীরের নারা উপত্যকার  জনপদের প্রায় সব ঘরেই যেন ‘বাল্যবিয়ের বান’ ডাকে এ জল থইথই বর্ষায়। আলজাজিরা।  

দুই বছর যেতে না যেতেই এক সন্তানের মা হন আসিফা। কয়েক মাসের বাচ্চা কোলে নিয়ে আসিফা বলেন, আমি সত্যিই বুঝতে পারিনি যে বিয়ে মানে কী। আমি কখনোই বুঝতে পারিনি যে এর অর্থ আমার চেয়ে বড় একজন পুরুষের সঙ্গে থাকা, যাকে আমি চিনি না বা পছন্দ করিনি।

তিনি আরও বলেন, তার স্বামী ঋণগ্রস্ত। কারণ বিয়েতে তার পরিবারকে দেওয়ার জন্য ৩ লাখ পাকিস্তানি রুপি (১ হাজার ৭০ ডলার) ঋণ নিয়েছিল। তা আসিফার স্বামী ফেরত দিতে পারেননি। টাকার বিনিময়ে বিয়ে দেওয়া হয়েছিল আসিফাকে। তার বাবা-মা ২০২২ সালে পাকিস্তানে ভয়াবহ বন্যায় মারাত্মক ক্ষতিগ্রস্ত হয়। তার পরিবার মেইন নারা উপত্যকার ভ‚খণ্ডে ধান, মরিচ, টমেটো এবং পেঁয়াজের মতো সবজি চাষ করত। কিন্তু ক্রমবর্ধমান বন্যার কারণে তাদের খেতগুলো প্রায় অকেজো হয়ে পড়ে। খাদ্যাভাবে চরম সংকটে পড়েন তারা। বাড়িতে আরও তিনটি ছোট বাচ্চা থাকায় আসিফাকে বিয়ে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেন এই দম্পতি। 

‘তাদের আর কোনো উপায় ছিল না’, দুঃখের সঙ্গে একথা বলেন আসিফা। শুধু আসিফাই নয়, বর্ষার ধ্বংসযজ্ঞের করুণ পরিস্থিতির হাত থেকে রেহাই পেতে নারী হয়ে ওঠার আগেই বিয়ের পিঁড়িতে বসছে সিন্ধুর মেয়েরা। চরম আবহাওয়াই বাল্যবিয়েকে উসকে দিচ্ছে দেশটিতে। 

২০২২ সালের সেপ্টেম্বরে বন্যায় তিন কোটি ৩০ লাখেরও বেশি মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত পাকিস্তানে। শত শত গ্রাম পানিতে তলিয়ে যায়। ধ্বংস হয়ে যায় ফসল। এমনকি হাজার হাজার মাইল রাস্তাও ধ্বংস হয়ে গিয়েছিল। ঘরবাড়ি ধ্বংস, ফসল ভেসে যাওয়া এবং জীবিকা নির্বাহের পথ বন্ধ হয়ে যাওয়ায় অসচ্ছল পরিবারগুলোকে অর্থ প্রদানের বিনিময়ে বাল্যবিয়ে ক্রমশ বৃদ্ধি পাচ্ছে। 

এ অঞ্চলে বাল্যবিয়ে রোধে কাজ করা একটি এনজিও সুজাগ সংসার জানিয়েছে, গত বছর শুধু মালা গ্রামেই ১৮ বছরের কম বয়সি শিশুদের বিয়ে দেওয়ার ৪৫টি ঘটনা রেকর্ড করা হয়েছে। 

সুজাগ সংসারের প্রতিষ্ঠাতা মাশুক বিরহমানি বিশ্বাস করেন, বাল্যবিয়ের উত্থানের সঙ্গে সরাসরি বন্যার সম্পর্ক রয়েছে। ২০২২ সালের বৃষ্টির আগে, এই অঞ্চলে মেয়েদের এত কম বয়সে বিয়ে হতো না বলেও জানান বিরহমানি। 

তিনি বলেছেন, এ ধরনের ঘটনা বিরল ছিল। তবে সাম্প্রতিক বছরগুলোতে জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব ক্রমশ বেড়ে যাওয়ায় বাল্যবিয়ে বেড়েছে। সিন্ধু নদীর আশপাশের গ্রামগুলোতে এর প্রভাব বেশি পরিলক্ষিত হয়েছে।  

Jamuna Electronics

Logo

সম্পাদক : আবদুল হাই শিকদার

প্রকাশক : সালমা ইসলাম