Logo
Logo
×

আন্তর্জাতিক

পাকিস্তানের খাইবার পাখতুনখোয়া

সেহরি চলছে চা-রুটিতে, ইফতারে মিলছে না খেজুর

Icon

যুগান্তর ডেস্ক

প্রকাশ: ০৫ মার্চ ২০২৫, ০২:২৮ পিএম

সেহরি চলছে চা-রুটিতে, ইফতারে মিলছে না খেজুর

পাকিস্তানের খাইবার পাখতুনখোয়া প্রদেশের কুররাম জেলার সদর দপ্তর পারাচিনারে রাস্তা বন্ধের প্রতিবাদে চলমান বিক্ষোভ তৃতীয় দিনের মতো চলছে। প্রাদেশিক সরকারের কাছে পরিবহন রুট খুলে দেওয়া এবং জীবন ও সম্পত্তি রক্ষার পদক্ষেপ নেওয়ার দাবিতে আন্দোলন করছেন কুররামের বাসিন্দারা। 

বিবিসি উর্দুর খবরে বলা হয়, পারাচিনার এবং এর আশপাশের ছোট ছোট গ্রামগুলো গত পাঁচ মাস ধরে পাকিস্তানের অন্যান্য অংশ থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে।ফলে  পার্বত্য অঞ্চলটিতে খাদ্য ও অন্যান্য মৌলিক চাহিদার তীব্র সংকট দেখা দিয়েছে।

স্থানীয়রা বলছেন, রমজান মাস আসার পর থেকে পরিস্থিতি আরও খারাপ হয়েছে।অঞ্চলটির বেশির ভাগ মানুষের ইফতারের জন্য খেজুর পাওয়া যাচ্ছে না, অন্যদিকে সেহরি চলছে চা-রুটির উপর।

যদিও খাইবার পাখতুনখোয়া সরকার কনভয় আকারে খাদ্যদ্রব্য, প্রয়োজনীয় পণ্য এবং অন্যান্য সামগ্রী বোঝাই যানবাহন পাঠানোর চেষ্টা চালাচ্ছে। কিন্তু কনভয়গুলোর উপর বারবার হামলার কারণে এটি থমকে রয়েছে।

কুররাম জেলার বাসিন্দারা বিবিসিকে জানিয়েছেন, রমজান মাসে খাবারের এত ঘাটতি দেখা দিয়েছে যে মানুষের ইফতারের খেজুরও পাওয়া যাচ্ছে না। সেহরি ও ইফতারে তারা শুধু চা-রুটি খেয়ে বেঁচে আছেন।

উল্লেখ্য, ২০২৪ সালের অক্টোবরে যাত্রীবাহী কনভয়গুলোতে ধারাবাহিক হামলার কারণে কুররাম জেলার পরিস্থিতি খারাপ হয়েছিল।এসব ঘটনায় কয়েক ডজন মানুষ নিহত হয় এবং এর প্রতিক্রিয়ায় ওই এলাকার বেশ কিছু বাড়িঘর ও দোকানপাট জ্বালিয়ে দেওয়া হয়।

এসব ঘটনার পর ওই এলাকায় খাদ্য ও নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যের তীব্র সংকট দেখা দেয়। পরিস্থিতি মোকাবিলায় কড়া নিরাপত্তায় ওই এলাকায় ত্রাণ সামগ্রী পাঠিয়েছে সরকার।কিন্তু এসব কনভয়েও হামলা চালানো হয় এবং কয়েকজন ট্রাক ড্রাইভারকে অপহরণ করা হয়।

স্থানীয়রা জানিয়েছেন, পণ্যবাহী ট্রাকের কনভয় আকারে আসা যানবাহনগুলো খুব কমই কুররামে পৌঁছায়।কারণ পথে বেশির ভাগ যানবাহন আটকে দেওয়া হয়।

কুররামের স্থানীয়রা জানান, এই পরিস্থিতির কারণে তাদের অত্যন্ত চড়াদামে সবজি ও ফলমূল কিনতে হচ্ছে।

স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, গত পাঁচ মাস ধরে এই এলাকায় পেট্রোল-ডিজেলের জোগান ব্যাহত হয়েছে।তাই রমজান মাসে লিটার প্রতি ১০০০ টাকা থেকে ১৫০০ টাকা পর্যন্ত পেট্রোল কালোবাজারে বিক্রি হচ্ছে।তবে এর পরিমাণও খুব সামান্য।

কুররামের সমাজকর্মী মুসারাত বাঙ্গাশ বলেন, মানুষ এখন ভাবছে, এ অবস্থা চলতে থাকলে নাগরিকরা হয় মারা যাবে নয়তো চরম পদক্ষেপ নিতে বাধ্য হবেন। কারণ এখানে সাধারণ বিষয় হলো, সরকার এই পরিস্থিতি মোকাবিলায় সম্পূর্ণ ব্যর্থ হয়েছে।

তিনি জানান, বিগত বছরগুলোতে রমজান মাসে তার ঘরে বড় টেবিল দিয়ে ইফতার সাজানো হতো।কারণ এই এলাকার মানুষ সবসময় আনন্দের সঙ্গে ইফতার ভাগাভাগি করত। তবে এবার পরিস্থিতি সম্পূর্ণ ভিন্ন।

তিনি বলেন, এই রমজানে চায়ের সঙ্গে রুটি খেয়ে সেহরি ও ইফতার করতে হচ্ছে।গরিব মানুষের ঘরে তো কিছুই নেই। স্থানীয়ভাবে কিছুটা দুধ পাওয়া যায় এবং গম ও আটাও খুব সামান্য মিলে থাকে। 

এই পরিস্থিতির বিরুদ্ধে গত তিন দিন ধরে বিক্ষোভে অংশ নেওয়া মালিক জারতাজ বিবিসিকে বলেছেন, বলা হচ্ছে আজ রাস্তা খুলছে, কাল রাস্তা খুলবে। সরকারের উন্নয়ন প্রকল্প জনগণের জন্য নয়।মানুষ যন্ত্রণার মধ্য দিয়ে যাচ্ছে। রাস্তা না খোলা পর্যন্ত অবস্থান কর্মসূচি শেষ হবে না।

পারাচিনারের সিনিয়র সাংবাদিক আলী আফজালের মতে, রমজান শুরু হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে কুররামের জনগণের ধৈর্যের বাধ ভেঙে গেছে। তার মতে, এই অঞ্চলে খাদ্য সামগ্রীর তীব্র ঘাটতি রয়েছে।

বিবিসি উর্দু থেকে অনুবাদ

Jamuna Electronics

Logo

সম্পাদক : আবদুল হাই শিকদার

প্রকাশক : সালমা ইসলাম