ফিলিস্তিনপন্থি আন্দোলন: কলাম্বিয়ার বার্নার্ড কলেজ থেকে তৃতীয় শিক্ষার্থী বহিষ্কার

আন্তর্জাতিক ডেস্ক
প্রকাশ: ০৪ মার্চ ২০২৫, ১০:৪৭ এএম

কলাম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের সহযোগী প্রতিষ্ঠান বার্নার্ড কলেজে ফিলিস্তিনপন্থি আন্দোলনে অংশ নেওয়ার অভিযোগে এক শিক্ষার্থীকে বহিষ্কার করা হয়েছে, যা শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে মতপ্রকাশের স্বাধীনতা নিয়ে নতুন বিতর্কের জন্ম দিয়েছে।
ক্যাম্পাসে ফিলিস্তিনপন্থি আন্দোলনে অংশ নেওয়ার অভিযোগে শুক্রবার (১ মার্চ) তৃতীয় এক শিক্ষার্থীকে বহিষ্কার করা হয়েছে। দীর্ঘ ১০ মাস ধরে চলা শৃঙ্খলাভঙ্গ তদন্তের পর তাকে চূড়ান্তভাবে বহিষ্কার করা হলো।
এর আগে, জানুয়ারিতে ক্লাস চলাকালে বিক্ষোভ করার অভিযোগে দুই শিক্ষার্থীকে বহিষ্কার করা হয়েছিল, যা গাজা যুদ্ধের কারণে শিক্ষার্থী বহিষ্কারের প্রথম নজির হিসেবে চিহ্নিত হয়।
কলাম্বিয়া ইউনিভার্সিটি অ্যাপারথাইড ডিভেস্ট (সিইউএড) ডিফেন্স ওয়ার্কিং গ্রুপের এক বিবৃতিতে জানানো হয়েছে, বহিষ্কৃত শিক্ষার্থীকে বিশ্ববিদ্যালয়ের ‘গণহত্যা বিনিয়োগের’ বিরুদ্ধে প্রতিবাদ এবং হিন্দস হল দখল বিক্ষোভে অংশ নেওয়ার অভিযোগে শাস্তি দেওয়া হয়েছে।
যুক্তরাষ্ট্রের তদন্তের প্রভাব?
এই বহিষ্কার এমন এক সময়ে ঘটল যখন মার্কিন সরকার কোলাম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয়সহ ১০টি বিশ্ববিদ্যালয়ে তদন্ত পরিচালনার ঘোষণা দিয়েছে। মার্কিন শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের এই টাস্কফোর্স জানিয়েছে, তারা ‘ইহুদি শিক্ষার্থী ও শিক্ষকদের প্রতি বেআইনি বৈষম্য রোধে’ তদন্ত চালাবে।
সিইউএডির দাবি, এই বহিষ্কার সরাসরি ওই তদন্তের সঙ্গে যুক্ত। তাদের বক্তব্য, ‘শিক্ষার্থীদের কথা শোনার বদলে বা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিনিয়োগ নীতিতে পরিবর্তন আনার পরিবর্তে, বার্নার্ড কর্তৃপক্ষ মার্কিন বিচার মন্ত্রণালয়কে খুশি করতে শিক্ষার্থীদের শাস্তি দিচ্ছে।’
বিতর্কিত বহিষ্কার প্রক্রিয়া
সিইউএডির একজন মুখপাত্র জানান, বহিষ্কৃত শিক্ষার্থী প্রথমবার গত বছরের এপ্রিলের মাঝামাঝি সাময়িক বহিষ্কারের শিকার হন এবং ১ মে দ্বিতীয়বার সাময়িক বহিষ্কারের চিঠি পান। প্রথম বহিষ্কারাদেশ প্রত্যাহার করা হলেও দ্বিতীয়টি কার্যকর থাকে। এরপর গত শিক্ষাবর্ষে তার বিরুদ্ধে ব্যক্তিগত সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম পোস্টের অভিযোগ এনে তৃতীয়বার সাময়িক বহিষ্কারাদেশ জারি করা হয়।
তিন বহিষ্কারের প্রক্রিয়াই বার্নার্ডের একক একজন প্রশাসনিক কর্মকর্তার দ্বারা পরিচালিত হয়েছে, কোনো শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ফ্যাকাল্টি বা সংশ্লিষ্ট শিক্ষকদের এতে অন্তর্ভুক্ত করা হয়নি বলে অভিযোগ রয়েছে। শিক্ষার্থীদের দীর্ঘ ১০ মাস ধরে শাস্তিমূলক তদন্তের মধ্য দিয়ে টেনে নেওয়ার বিষয়টি নিয়েও সমালোচনা হচ্ছে।
প্রতিবাদ ও প্রতিক্রিয়া
প্রথম দুই শিক্ষার্থীর বহিষ্কারের পর বার্নার্ড ও কলাম্বিয়ার প্রায় ১০০ শিক্ষার্থী ২৬ ফেব্রুয়ারি বার্নার্ডের ডিন অফিসের সামনে অবস্থান কর্মসূচি পালন করেন। বার্নার্ড কর্তৃপক্ষ তাদের গণগ্রেফতারের হুমকি দেয়, তবে শেষ পর্যন্ত শিক্ষার্থীদের সঙ্গে আলোচনার আশ্বাস দেয়।
কিন্তু কর্তৃপক্ষ দাবি করেছে, আলোচনার আগে বিশ্ববিদ্যালয় একতরফাভাবে শর্ত পরিবর্তন করে সমঝোতাকে ব্যাহত করেছে। ফলে আলোচনা এখনো স্থগিত রয়েছে।
অন্যদিকে, বহিষ্কৃত শিক্ষার্থীদের পুনর্বহালের দাবিতে একটি খোলা চিঠিতে ইতোমধ্যে ১,২২,০০০-এর বেশি মানুষ স্বাক্ষর করেছেন।
বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিক্রিয়া
বার্নার্ডের উপ-সভাপতি সোমবার এক বিবৃতিতে বলেন, ‘ফেডারেল আইনের কারণে আমরা শিক্ষার্থীদের শৃঙ্খলাভঙ্গ বা একাডেমিক রেকর্ড নিয়ে মন্তব্য করতে পারি না। তবে বহিষ্কার কঠিন সিদ্ধান্ত হলেও, আমাদের একাডেমিক মূল্যবোধ, অন্তর্ভুক্তি ও সম্মানের প্রতি অঙ্গীকার অটুট।’
উল্লেখ্য, ২০২৩ সালের জুনে লরা রোজেনবারি বার্নার্ড কলেজের প্রেসিডেন্ট হিসেবে দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকে ফিলিস্তিনপন্থি আন্দোলনের জেরে অন্তত ৫৫ জন শিক্ষার্থীকে সাময়িক বহিষ্কার করা হয়েছে।