Logo
Logo
×

আন্তর্জাতিক

দ্য গার্ডিয়ানের প্রতিবেদন

ট্রাম্পের হাতে যুক্তরাষ্ট্রের ক্ষতি, লাভবান হতে যাচ্ছে চীন!

Icon

আন্তর্জাতিক ডেস্ক

প্রকাশ: ০৩ মার্চ ২০২৫, ০৪:৩৫ পিএম

ট্রাম্পের হাতে যুক্তরাষ্ট্রের ক্ষতি, লাভবান হতে যাচ্ছে চীন!

চীনের পিপলস লিবারেশন আর্মির (পিএলএ) সাবেক ঊর্ধ্বতন কর্নেল ঝো বো মনে করেন, ডোনাল্ড ট্রাম্প যুক্তরাষ্ট্রের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ণ করবেন এবং দেশটির আন্তর্জাতিক অবস্থান দুর্বল করে দেবেন।

ঝো বো’র ভাষায়, ‘ট্রাম্প তার পূর্বসূরিদের চেয়ে যুক্তরাষ্ট্রের ভাবমূর্তি অনেক বেশি ক্ষুণ্ণ করেছেন’।

তার মতে, ডোনাল্ড ট্রাম্প যুক্তরাষ্ট্রের খ্যাতির এতটাই ক্ষতি করছেন যে, তা চীনের জন্য বিশেষ করে তাইওয়ানের ক্ষেত্রে নতুন সুযোগ তৈরি করতে পারে।

সম্প্রতি বেইজিংয়ে ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম দ্য গার্ডিয়ানকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে তিনি এ মন্তব্য করেন।

ঝো বিশ্বাস করেন, ট্রাম্পের মেয়াদ শেষে যুক্তরাষ্ট্রের বৈশ্বিক অবস্থান আরও দুর্বল হয়ে পড়বে। তাইওয়ানের জনগণও বুঝতে পারবে যে ‘আমেরিকা পিছিয়ে যাচ্ছে’, যা তাদের চিন্তার ধরণকে প্রভাবিত করবে।

২০২৪ সালে ট্রাম্প বলেছিলেন, তাইওয়ানকে যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিরক্ষা ব্যয়ের জন্য অর্থ দিতে হবে। যদিও স্বায়ত্তশাসিত দ্বীপটি ইতোমধ্যেই মার্কিন অস্ত্রের জন্য কয়েক বিলিয়ন ডলার ব্যয় করছে।

তাইওয়ান এ বছর আরও ৭-১০ বিলিয়ন ডলারের অস্ত্র কেনার কথা ভাবছে। তবে ঝো প্রশ্ন তুলেছেন, ‘ট্রাম্প প্রশাসনের অধীনে তাইওয়ানিরা যুক্তরাষ্ট্রের ওপর কতটা আস্থা রাখতে পারবে?’

চীনের সাবেক এই জ্যেষ্ঠ কর্নেল বলেন, ‘হয়তো একদিন তাইওয়ানের জনগণ ভাববে—আমরা তো যেতেও পারবো না। আমাদের এখানেই থাকতে হবে। তাহলে হয়তো বিশ্বের সবচেয়ে শক্তিশালী জাতির অংশ হওয়াটা খারাপ কিছু না’।

২০২৪ সালে তাইওয়ানের স্বাধীনতাপন্থি ডেমোক্রেটিক প্রগ্রেসিভ পার্টি (ডিপিপি) তৃতীয়বারের মতো নির্বাচিত হয়েছে। বিশেষ করে তরুণ প্রজন্মের তাইওয়ানিদের মধ্যে চীনের চেয়ে নিজেদেরকে তাইওয়ানি হিসেবে পরিচয় দেওয়ার প্রবণতা বেড়েছে।

চীনের পরিকল্পনা ও ট্রাম্পের অবস্থান

চীন মূলত তাইওয়ানকে তার ভূখণ্ডের অংশ মনে করে এবং এটি পুনরুদ্ধারে শক্তি ব্যবহারের ইঙ্গিতও দিয়েছে। তবে ট্রাম্পের তাইওয়ান নীতির বিষয়ে অনিশ্চয়তা রয়েছে। 

চলতি মাসের শুরুতে মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তর তাদের তাইওয়ান সম্পর্কিত তথ্যে একটি গুরুত্বপূর্ণ বাক্য মুছে দেয়। যেখানে লেখা ছিল— ‘আমরা তাইওয়ানের স্বাধীনতাকে সমর্থন করি না’—যা নিয়ে বেইজিং তীব্র প্রতিবাদ জানায়।

এ নিয়ে ঝো বলেন, ‘তাইওয়ানের ভবিষ্যৎ শুধু তাইওয়ানিদের হাতে নয়। তাইওয়ানের জনসংখ্যা ২ কোটি ৩ লাখ, আর চীনের ১৪০ কোটি। তাই আমাদের শুধু তাইওয়ানিদের মতামত নিয়ে ভাবলে চলবে না, আমাদের মূল ভূখণ্ডের জনগণের চিন্তাভাবনাও বিবেচনায় নিতে হবে’।

চীন-রাশিয়া সম্পর্ক ও শান্তি প্রতিষ্ঠায় ভূমিকা

এদকে তাইওয়ান ইস্যুতে উত্তেজনা থাকা সত্ত্বেও ঝো মনে করেন, ট্রাম্প চীনের প্রতি তুলনামূলকভাবে ‘বন্ধুসুলভ’। ট্রাম্প প্রশাসন শুরুর দিকে চীনা পণ্যের ওপর শুল্কের হার ৬০ শতাংশ আরোপ করার হুমকি দেওয়া হলেও, বাস্তবে তা অনেক কম রাখা হয়েছিল।

সম্প্রতি ট্রাম্পের চীন-বিষয়ক সুর অনেকটাই নরম। ইউক্রেন যুদ্ধের প্রথম দিকে পশ্চিমা নেতারা চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিংকে রাশিয়ার ওপর প্রভাব খাটানোর আহ্বান জানিয়েছিলেন, যাতে যুদ্ধ বন্ধ হয়।

সম্প্রতি রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন শি জিনপিংয়ের সঙ্গে কথা বলেছেন, যেখানে শি চীন-রাশিয়া সম্পর্কের দৃঢ়তা ও স্থায়িত্বের ওপর জোর দেন।

ঝো মনে করেন, যুদ্ধবিরতি বা শান্তিচুক্তির ক্ষেত্রে চীনের ভূমিকা অপরিহার্য হবে। তিনি বলেন, চীন ইউক্রেনে শান্তিরক্ষী পাঠাতে পারে। যেখানে ন্যাটো-বহির্ভূত ইউরোপীয় দেশ এবং গ্লোবাল সাউথ-এর দেশগুলোর শান্তিরক্ষীরা থাকবে। কারণ রাশিয়া ন্যাটো শান্তিরক্ষীদের ‘ভেড়ার ছদ্মবেশে নেকড়ে’ হিসেবে দেখছে।

উল্লেখ্য, জাতিসংঘের শান্তিরক্ষা বাজেটে যুক্তরাষ্ট্রের পরেই দ্বিতীয় বৃহত্তম দাতা দেশ হিসেবে চীনের অবস্থান।

এদিকে চীন-রাশিয়া সম্পর্ক সম্পর্কে ঝো বলেন, ‘আমি এটাকে দুটি সমান্তরাল রেখার মতো দেখি। অর্থাৎ তারা যতই কাছাকাছি থাকুক, একে অপরের সঙ্গে সম্পূর্ণ মিশে যাবে না’। 

Jamuna Electronics

Logo

সম্পাদক : আবদুল হাই শিকদার

প্রকাশক : সালমা ইসলাম