Logo
Logo
×

আন্তর্জাতিক

খামেনির নির্দেশে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে সংলাপ থেকে সরে আসলেন পেজেশকিয়ান

Icon

আন্তর্জাতিক ডেস্ক

প্রকাশ: ০৩ মার্চ ২০২৫, ১২:৫৮ পিএম

খামেনির নির্দেশে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে সংলাপ থেকে সরে আসলেন পেজেশকিয়ান

ইরানের প্রেসিডেন্ট মাসুদ পেজেশকিয়ান রোববার পার্লামেন্টে বলেছেন, তিনি শুরুতে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে আলোচনার পক্ষে ছিলেন, তবে সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহ আলী খামেনির সিদ্ধান্তকে সম্মান জানিয়ে সে অবস্থান থেকে সরে এসেছেন।  

পেজেশকিয়ান বলেন, ‘আমি মনে করতাম যে সংলাপই ভালো বিকল্প, তবে যখন সর্বোচ্চ নেতা বললেন, আমরা যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে আলোচনা করব না, তখন আমি বললাম, আমরা যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে আলোচনা করব না, ব্যস।’  

তিনি আরও বলেন, সরকারের নীতি সর্বোচ্চ নেতার অবস্থানের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ হতে হবে।  

গত মাসে খামেনি যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সঙ্গে আলোচনার সম্ভাবনা নাকচ করে বলেন, ‘এটি বুদ্ধিমানের কাজ নয়, বিচক্ষণতার পরিচয়ও নয়, বরং এটি অসম্মানের বিষয়।’

অর্থনীতির সংকট ও যুদ্ধকালীন পরিস্থিতি  

অর্থমন্ত্রী আবদোলনাসের হেম্মাতির অভিশংসন সংক্রান্ত অধিবেশনে ভাষণ দেওয়ার সময় প্রেসিডেন্ট পেজেশকিয়ান বলেন, তার প্রশাসন যখন দায়িত্ব নেয়, তখন দেশটির পানি, গ্যাস, বিদ্যুৎ ও আর্থিক খাতে ভারসাম্যহীনতা ছিল।  

সমালোচকরা হেম্মাতির অর্থনৈতিক নীতিকে দোষারোপ করে বলছেন, তার নেতৃত্বে ডলারের বিনিময় হার বেড়েছে, খাদ্যপণ্যের দাম ঊর্ধ্বমুখী, এবং সামগ্রিকভাবে মূল্যস্ফীতি ভয়াবহ রূপ নিয়েছে। বর্তমানে মার্কিন ডলারের বিনিময় হার ৯,৪০০,০০০ রিয়ালে পৌঁছেছে, যা ইরানি পরিবার ও ব্যবসায় মারাত্মক চাপ সৃষ্টি করছে।  

বৃহত্তর ভূরাজনৈতিক পরিস্থিতি নিয়ে কথা বলতে গিয়ে পেজেশকিয়ান বলেন, তার সরকার কার্যত এক ‘পূর্ণমাত্রার যুদ্ধ’ মোকাবিলা করছে।  

পেজেশকিয়ান বলেন, ‘আমরা এক কঠিন যুদ্ধের মধ্যে রয়েছি এবং আমাদেরও যুদ্ধকালীন মানসিকতা গ্রহণ করতে হবে... আজকের যুদ্ধ ইরাকের সঙ্গে হওয়া যুদ্ধের চেয়েও বেশি কঠিন।’  

তিনি আরও উল্লেখ করেন, যুক্তরাষ্ট্রের নিষেধাজ্ঞার ফলে ইরানি জাহাজগুলো পণ্য খালাস করতে পারছে না। 

‘ট্রাম্প আমাদের জাহাজগুলোর ওপর কঠোর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছেন, ফলে সেগুলো আটকে গেছে... কাতার, ইরাক, তুরস্কসহ অনেক দেশ আমাদের ডলার ফেরত দিচ্ছে না।’ 

অর্থমন্ত্রী হেম্মাতির বিরুদ্ধে অভিযোগ

অভিশংসন অধিবেশনে অর্থমন্ত্রী হেম্মাতির বিরুদ্ধে অভিযোগ তুলে সংসদ সদস্য জাবার কুচাকি-নেজাদ বলেন, তার অর্থনৈতিক দলের দুর্বল নীতি সমাজের প্রতিটি শ্রেণিকে ক্ষতিগ্রস্ত করেছে।  

সংসদ সদস্য রুহুল্লাহ ইজাদখাহ জানান, ‘কয়েক মাসের মধ্যে জাতীয় মুদ্রার মূল্যমান ৬২% কমে গেছে।’ আরেক সংসদ সদস্য রসুল বখশি কোহপায়ে বলেন, ‘গত ৫০ বছরে ইরানে মার্কিন ডলারের বিনিময় হার ১৩,০০০ গুণ বেড়েছে।’

হেম্মাতির আত্মপক্ষ সমর্থন

অর্থমন্ত্রী হেম্মাতি তার নীতির পক্ষে যুক্তি দিয়ে বলেন, তার দায়িত্বকালে মুদ্রাস্ফীতি ১০% কমেছে।  

হেম্মাতির দাবি, ‘সরকারের ৭০% ব্যয় করের মাধ্যমে নির্বাহ হচ্ছে। শুধু গত মাসেই কর কর্তৃপক্ষ ১,৭০০ ট্রিলিয়ন রিয়াল (প্রায় ১.৮ বিলিয়ন ডলার) রাজস্ব সংগ্রহ করেছে।’

তিনি অভিযোগ নাকচ করে বলেন, ‘বিনিময় হার সরকারের ইচ্ছাকৃতভাবে বাড়ানো হয়নি। ডলারের বর্তমান দর কৃত্রিম, এবং আমরা অবশ্যই এটিকে কমিয়ে আনব।’

যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে চুক্তি ছাড়া অর্থনৈতিক উন্নয়ন সম্ভব নয়?  

কিছু বিশ্লেষক ও গণমাধ্যমের মতে, যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে চুক্তি এবং নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার ছাড়া ইরানের অর্থনীতি পুনরুদ্ধার করা সম্ভব নয়। তারা আরও বলছেন, শুধু একজন মন্ত্রীকে অভিশংসন করে পরিস্থিতির উন্নয়ন হবে না।

Jamuna Electronics

Logo

সম্পাদক : আবদুল হাই শিকদার

প্রকাশক : সালমা ইসলাম