৭ অক্টোবর হামাসের হামলা, তদন্তে যা পেল ইসরাইলি সামরিক বাহিনী

আন্তর্জাতিক ডেস্ক
প্রকাশ: ০১ মার্চ ২০২৫, ১২:১৩ পিএম

ছবি: সংগৃহীত
ফিলিস্তিনি প্রতিরোধ আন্দোলন হামাস বছরের পর বছর ধরে ইসরাইলের সঙ্গে চাতুরী করেছে। আর ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর সশস্ত্র সংগঠনটি দ্রুত ইসরাইলি সামরিক ডিভিশন দখল করে তাদের পরাজিত করেছে।
ইসরাইলি সেনাবাহিনীর একটি অভ্যন্তরীণ তদন্ত প্রতিবেদনে এমনটাই বলা হয়েছে। খবর মিডল ইস্ট আইয়ের।
বৃহস্পতিবার প্রকাশিত ওই তদন্ত প্রতিবেদনে দেখা গছে, সেদিন (২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর) ইসরাইলি সেনাবাহিনী দেশটির বেসামরিক নাগরিকদের রক্ষা করতে ‘ব্যর্থ’ হয়। তারা হামাসের নেতৃত্বে হামলার জন্য প্রস্তুত ছিল না।
প্রসঙ্গত, হামাসের ওইদিনের হামলায় প্রায় ১২০০ মানুষ নিহত হন এবং ২৫১ জনকে জিম্মি করে গাজায় নিয়ে যায় হামাসের যোদ্ধারা।
ফিলিস্তিনি স্বাধীনতা আন্দোলনের সশস্ত্র শাখাটি সকাল ৬টা ২৯ মিনিটে হামলা চালানোর কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই ইসরাইলের দক্ষিণ কমান্ডের তথাকথিত ‘গাজা ডিভিশন’-এর কমান্ড-এন্ড-কন্ট্রোল ভেঙে পড়ে।
ডিভিশনের দক্ষিণ ব্রিগেড কমান্ডার আসাফ হামামি এবং অনেক কোম্পানি ও প্লাটুন কমান্ডারসহ শীর্ষ ইসরাইলি কর্মকর্তারা সকাল ৭টা নাগাদ হামাস যোদ্ধাদের হাতে নিহত হন।
ইসরায়েলি নিরাপত্তা সূত্রের বরাত দিয়ে প্রকাশিত প্রতিবেদন অনুসারে, সেদিন গাজার সীমান্তে মাত্র ৭৬৭ জন সেনা মোতায়েন ছিল। সেদিন প্রায় ৪ হাজার হামাস যোদ্ধা স্থল, আকাশ এবং সমুদ্রপথে ওই অঞ্চলে প্রবেশ করে।
সাউদার্ন কমান্ড, অপারেশনস ডিভিশন, ইসরাইলি বিমান বাহিনী ও ইসরাইলি নৌবাহিনীর পরিচালিত প্রথম দফার তদন্তে দেখা গেছে, গাজা উপত্যকার সীমানা রক্ষার দায়িত্বে নিয়োজিত আঞ্চলিক ইউনিট আক্রমণের প্রথম ঘণ্টার মধ্যেই পরাজিত হয়ে পড়েছিল।
ইসরাইলি সেনাবাহিনী আসন্ন আক্রমণ এবং এর আশপাশের প্রস্তুতির ইঙ্গিত বুঝতে পারেনি। এমনকি আগের দিন পাওয়া কিছু সতর্কতাও তারা উপেক্ষা করে।
এছাড়া যেহেতু কোনও তাৎক্ষণিক হুমকি আঁচ করা যায়নি তাই সেনাবাহিনী মোতায়েনের ক্ষেত্রে স্বাভাবিক প্রোটোকল মেনে চলেছিল। আর ৬ অক্টোবর রাতে গোয়েন্দা তথ্য পাওয়ার পর নজরদারি মিশনের জন্য কেবল ড্রোন পাঠানো হয়।
প্রতিবেদন অনুসারে, ইসরাইলি সেনাবাহিনীর গাজা ডিভিশন প্রায় ১০ ঘন্টা ধরে পরাজিত হয়েছিল।
তদন্ত প্রতিবেদনে প্রকাশের পর ইসরাইলি সেনাবাহিনীর একজন জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা সাংবাদিকদের বলেন, ‘গত ৭ অক্টোবর সম্পূর্ণ ব্যর্থতা ছিল। আইডিএফ (ইসরাইলি সেনাবাহিনী) বেসামরিকদের সুরক্ষা দিতে
ব্যর্থ হয়েছে। ’
তিনি বলেন, ‘সেদিন অনেক বেসামরিক লোক মারা গিয়েছিল, মনে মনে বা জোরে জিজ্ঞাসা করছিল, ‘‘আইডিএফ কোথায়’’?’
আক্রমণের প্রথম ছয় ঘন্টার মধ্যে, হামাসের কাসাম ব্রিগেড অবরুদ্ধ ছিটমহলের কাছাকাছি ইসরাইলি সেনাবাহিনীর পোস্টের পাশাপাশি পশ্চিম নেগেভ এলাকার প্রধান সড়কগুলোতে নিয়ন্ত্রণ নিয়ে নেয়। হামাস যোদ্ধারা কমপক্ষে ১১৪টি স্থানে হামলা চালিয়েছিল বলেও উঠে এসেছে প্রতিবেদনে।
কাসাম ব্রিগেডের নেতৃত্বে হামাস যোদ্ধারা ইসরাইলে প্রবেশের ১০ মিনিটেরও কম সময়ের মধ্যে, গাজা বিভাগ ‘পরশ পেলেশেত (প্রতিকূল অনুপ্রবেশ)’ ঘোষণা করে, যা একটি কোড যা সর্বোচ্চ মাত্রার অনুপ্রবেশকে বোঝায়।
তদন্তে দেখা গেছে, হামাস যোদ্ধারা তিনটি দলে স্থল হামলা চালায়, অন্যদিকে সমুদ্রপথে সাতটি স্পিডবোট এবং আকাশপথে প্যারাগ্লাইডার ব্যবহার করে যথাক্রমে ৩৮ ও আটজন ফিলিস্তিনি যোদ্ধা হামলা চালায়।