
বিলাশবহুল লাউঞ্জ। গাড়ি রাখার বিশাল পার্কিং লট। তাক লাগানো ফুডকোর্টের সঙ্গে মনমুগ্ধকর রেস্টরুম। অভিনব এই বিমানবন্দরটি অবস্থিত দক্ষিণ এশিয়ার দেশ পাকিস্তানে। এতকিছু থাকতেও নেই যেন মূল জিনিসই। চোখ ধাঁধানো বিমানবন্দরটিতে ভুলেও আসে না কোনো যাত্রী। ফলে উদ্বোধনের পরও চলছে না কোনো উড়োজাহাজ। ফলে বালুচিস্তান প্রদেশের জনমানবশূন্য গয়াদর বিমানবন্দরটি রীতিমতো ‘ভূতুড়ে’ তকমা পেয়েছে। সিএনএন।
গত বছরের অক্টোবরে রীতিমতো ঢাক-ঢোল পিটিয়ে আরব সাগরের কোলের শহরটিতে আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের উদ্বোধন করে শাহবাজ শরিফ সরকার। এর নির্মাণে যাবতীয় খরচ করেছে চীন। প্রায় ২৪ কোটি ডলার খরচ করে তৈরি হয়েছে বিশাল প্রকল্প। তবে বিমানবন্দরটির এমন অচলাবস্থার পেছনে রয়েছে বহু কারণ।
প্রথমত, আর্থিক দিক থেকে পাকিস্তানের সবচেয়ে পিছিয়ে পড়া প্রদেশে বিশালবহুল এই বিমানবন্দর নির্মাণ করেছে চীন। গয়াদরের লোকসংখ্যা আনুমানিক ৯০ হাজার। তাদের মধ্যে অধিকাংশেরই বিমানের টিকিট কাটার মতো অর্থ নেই। উলটো বেলুচিস্তানে সক্রিয় রয়েছে একাধিক সশস্ত্র গোষ্ঠী। তারা প্রায়ই পাক ফৌজকে নিশানা করে। এমন আতঙ্কে গায়দরে আসা থেকে মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছে বিদেশিরাও।
দ্বিতীয়ত, বেলুচিস্তানের আরব সাগর লাগোয়া ওই শহরে রয়েছে বিদ্যুৎ ও বিশুদ্ধ পানীয় জলের মারাত্মক সমস্যা। বিমানবন্দরে আলো জ্বালাতে তাই ভরসা প্রতিবেশী রাষ্ট্র ইরানের পাওয়ার গ্রিড বা সৌর প্যানেল। এমন প্রকল্পে বেশ চটেছেন স্থানীয়রা।
সংবাদ সংস্থা রয়টার্সের কাছে নিজেদের দুরবস্থার বর্ণনা দিয়েছেন গয়াদরবাসী ৭৬ বছরের খুদাবক্স হাশিম। তার কথায়, একটা সময়ে গয়াদর লাগোয়া পাহাড়ে বা গ্রামে সারা রাত ধরে আমরা পিকনিক করতাম। তাতে কতই না মজা হতো! আর এখন তো বাড়ি থেকে বেরিয়ে দশ পা গেলে বলতে হয়, আমি কে বা কোথা থেকে কী উদ্দেশ্যে এসেছি। এর থেকে লজ্জার আর কিছু নেই।
তিনি আরও বলেন, গত ৪০ দশকে গয়দর ছিলো ওমানের অংশ। এখানে নোঙর ফেলত অধিকাংশ মুম্বাইগামী জাহাজ। পুরুষরা সবাই কাজ পেত। বন্দরশহরে কেউ খালি পেটে ঘুমাতে যেত না। এমনকি খাবার পানির কোনো অভাব ছিলো না। কিন্তু এখন চীনের সঙ্গে হাত মিলিয়ে সবই লুটতে বসেছে পাক সরকার।
বিশ্লেষকদের মতে, এ প্রকল্পের জেরে মারাত্মকভাবে ঋণের জালে জড়িয়ে পড়ার সম্ভাবনা রয়েছে পাকিস্তানের। উল্লেখ্য, গয়াদরের আগে বিশ্বের সবচেয়ে ফাঁকা বিমানবন্দরের তকমা পেয়েছিল শ্রীলংকার হাম্বানটোটা। দেশটির সাবেক প্রেসিডেন্ট মাহিন্দা রাজাপাকসের নামাঙ্কিত ওই বিমানবন্দরটি তৈরি করতে সাড়ে ১৭ হাজার কোটি খরচ করেছিল কলম্বো। এর মধ্যে ১৬ হাজার কোটি টাকাই দিয়েছিল চীনের এক ব্যাংক। হাম্বানটোটা বিমানবন্দর নির্মাণকে ‘সাদা হাতি পোষা’র শামিল বলে ব্যাখ্যা করেছেন আর্থিক বিশ্লেষকরা। কেননা প্রকল্পটির জেরে একটা সময়ে দ্বীপরাষ্ট্রটি দেউলিয়া পর্যন্ত হয়ে গিয়েছিল। একই কায়দায় নেপালের পোখরায় বিমানবন্দর তৈরি করেছে চিনা রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থা। এর জন্য বেইজিং থেকে বিপুল ঋণ নিয়ে বিপাকে পড়েছে কাঠমান্ডু। পোখরার ওই বিমানবন্দরও যাত্রীর অভাবে ধুঁকছে। ফলে গয়াদরের চীনের তৈরি বিমানবন্দর পাক অর্থনীতিকে বিপদে ফেলবে বলেই মনে করছে বিশেষজ্ঞের দল।