Logo
Logo
×

আন্তর্জাতিক

কেন ইরান ছেড়ে যাচ্ছেন না দেশটির ইহুদিরা?

Icon

আন্তর্জাতিক ডেস্ক

প্রকাশ: ২৬ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ১০:৫৮ পিএম

কেন ইরান ছেড়ে যাচ্ছেন না দেশটির ইহুদিরা?

চলমান উত্তাজনাপূর্ণ মধ্যপ্রাচ্য পরিস্থিতির মাঝেও ইরান ছেড়ে অন্য কোথায় চলে যাচ্ছেন না দেশটিতে বসবাসকারী ইহুদিরা। এ বিষয়ে ইসরাইলের একজন সাবেক গোয়েন্দা কর্মকর্তা ও ইরান বিষয়ক বিশেষজ্ঞ বলেছেন, ইরানের ইহুদিরা দেশটির জাতীয় পরিচিত ও সংস্কৃতি নিয়ে তীব্র গর্ব অনুভব করেন। 

যদিও পশ্চিমা গণমাধ্যমগুলোতে ইরানের বিরুদ্ধে ব্যাপক অপপ্রচারের অংশ হিসেবে বলা হয় যে, দেশটির ইহুদিদের সঙ্গে খারাপ আচরণ করা হয়। তবে বাস্তবতা পুরোপুরি ভিন্ন। কারণ ইরানের ইহুদিরা দেশটিতে বসবাসের কারণে এবং এখানে তাদের উত্তরাধিকার নিয়ে গর্ব অনুভব করেন।   

সম্প্রতি ইহুদিদের সংবাদ সিন্ডিকেট জেএনএস তাদের সঙ্গে ইরানের সম্পর্ক বিষয়ে একটি স্মারক বিবৃতিতে জানিয়েছে, পশ্চিমা মিডিয়াগুলোতে ইরান সম্পর্কে নেতিবাচক প্রচারণা থাকা সত্ত্বেও দেশটির বর্তমান সরকার ও রাষ্ট্র-ব্যবস্থার সঙ্গে ইরানি ইহুদি সমাজের কোনো ধরনের উত্তেজনা নেই।

ইরান বিষয়ক বিশিষ্ট ইসরাইলি বিশেষজ্ঞ ও সাবেক গোয়েন্দা কর্মকর্তা ডেভিড নিইসান গত ১৬ মাসে ইহুদি সমাজের নানা পরিবর্তনের আলোকে বলেছেন, ইরানের ইহুদিদের জাতীয় পরিচিতি ইরানের সঙ্গে যুক্ত, আর এ বিষয়টি খুবই গুরুত্বপূর্ণ। 

নিইসানেরও জন্মস্থান ইরান এবং তিনি সেখানেই বেড়ে ওঠেন। 

ইরানে ইহুদিদের অবস্থা সম্পর্কে নিইসার আরও লিখেছেন, ১৯৭৯ সালে ইসলামি বিপ্লবের পর ইরান থেকে উল্লেখযোগ্য সংখ্যক ইহুদি চলে যায়। তা সত্ত্বেও ইরানের ইহুদি সমাজ পুরোপুরি তাদের ইহুদি ধাঁচের জীবনধারা রক্ষা করেছে এবং ইসলামি রাষ্ট্র ও সরকারের পক্ষ থেকে তাদের ওপর কোনো ধরনের অসুবিধা আরোপ করা হয়নি।  

ইরানে ইহুদিদের ৩০টি সক্রিয় সিনাগগ বা উপাসনালয়, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও অন্যান্য ইহুদি সমিতি বা সংস্থা কোনো ধরনের হয়রানির শিকার হয়নি এবং তারা স্বাধীনভাবে তাদের ইহুদি-জীবন-ধারা রক্ষা করছে। 

ইরানের সংবিধানে স্বীকৃত ধর্মীয় সংখ্যালঘু সম্প্রদায়গুলোর অধিকার রক্ষার কথা বলা হয়েছে। এমনকি ইরানের সংসদ মজলিসে তাদের প্রতিনিধিত্বও রয়েছে।

ইরানি ইহুদিদের সুদীর্ঘ ইতিহাস ও গভীর শেকড় 

ইরানের ইহুদিদের রয়েছে দীর্ঘ দিনের ইতিহাস, যা আড়াই হাজার বছরের চেয়েও বেশি পুরোনো। তাদের শেকড় বেশ গভীর। বিশ্বের সবচেয়ে প্রাচীন ইহুদি জনগোষ্ঠীগুলোর অন্যতম হলো ইরানি ইহুদি সমাজ। ইরানে বিভিন্ন সরকার বা রাজবংশের শাসনামলে ইহুদিরা দেশটির সমাজের অন্যতম অংশ হিসেবে গুরুত্ব পেয়েছে এবং তাদের অনেকেই ইরানের সামাজিক ও সাংস্কৃতিক ক্ষেত্রে বিশেষ অবস্থানের অধিকারী। 

ধর্মীয় স্বাধীনতা

ইরানের ইহুদিরা সব যুগে ও সব ধরনের সরকারের শাসনামলে দেশটির অন্যতম ধর্মীয় সম্প্রদায় হিসেবে স্বীকৃতি পেয়েছে এবং তাদের ধর্মীয় স্বাধীনতাও সুনিশ্চিত করা হয়েছে। 

ইরানের ইহুদিরা দেশটির অন্যান্য সম্প্রদায় ও সংস্কৃতির সঙ্গে লেনদেন বজায় রেখেছে। তারা ইরানের অর্থনৈতিক, সাংস্কৃতিক ও শিক্ষা ক্ষেত্রে ভূমিকা রেখেছে এবং এখনো ইরানি সমাজে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে।

ইরানের ইহুদিরা তাদের নিজস্ব সংস্কৃতি ও ধর্মীয় পরিচিতি রক্ষা করাকে বেশ গুরুত্ব দিয়ে আসছে এবং ইরানের বিভিন্ন অঞ্চলে তথা শহর ও গ্রামে তারা এইসব স্বাতন্ত্র্য বজায় রেখেছে। 

ইরানের রাজনৈতিক ও সামাজিক পরিবেশের কারণেই ইরানি ইহুদিদের অনেকেই দেশত্যাগ করছেন না বা মুহাজির হচ্ছেন না।

মোটকথা, ইরানের ইহুদিরা কোনো ধরনের বাধা-বিঘ্ন ছাড়াই ইরানে বসবাস করছে এবং তারা এই দেশটির ইতিহাস ও সংস্কৃতির অংশ হিসেবে বিবেচিত।

উল্লেখ্য, ইহুদি ধর্মের নাম ভাঙিয়ে ও এই ঐশী ধর্মর বিকৃত ব্যাখ্যার আলোকে ফিলিস্তিনে জবরদখলের মাধ্যমে ইহুদিবাদী ইসরাইল গড়ে তুলেছে ইহুদিবাদীরা। এ কাজে তাদেরকে সহায়তা দিয়েছে উপনিবেশবাদী পশ্চিমা শক্তিগুলো ও বিশ্ব-সাম্রাজ্যবাদী আর আধিপত্যকামী মহল। এই শাসকগোষ্ঠী বিশ্বের যে কোনো অঞ্চল থেকে ইহুদিদের ইসরাইলে আসতে উৎসাহ যোগায় এবং সেখানে তাদের ব্যাপক সুযোগ-সুবিধা দেওয়ার প্রলোভনও দেখায়। 

কিন্তু এসব প্রলোভন সত্ত্বেও ইহুদিদের মধ্যে অনেকেই উগ্র ইহুদিবাদ বা বর্ণবাদী এই মতবাদকে প্রত্যাখ্যান করেন। এছাড়াও সাম্প্রতিক বছরগুলোতে ফিলিস্তিনিদের ব্যাপক প্রতিরোধের কারণে ও নিরাপত্তাহীনতার কারণে ইহুদিবাদী ইসরাইল থেকে অনেকে ইহুদিই নিজ নিজ দেশে ফিরে যাচ্ছে, তথা বিপরীত অভিবাসন ক্রমেই বাড়ছে। সূত্র: ইরনা ও মেহের নিউজ

ঘটনাপ্রবাহ: ইরান ইসরাইল সংঘাত


আরও পড়ুন

Jamuna Electronics

Logo

সম্পাদক : আবদুল হাই শিকদার

প্রকাশক : সালমা ইসলাম