Logo
Logo
×

আন্তর্জাতিক

ট্রাম্পের রাশিয়ার প্রতি ঝুঁকে পড়া নিয়ে চীনের শঙ্কা

Icon

অনলাইন ডেস্ক

প্রকাশ: ২৬ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ১২:০২ পিএম

ট্রাম্পের রাশিয়ার প্রতি ঝুঁকে পড়া নিয়ে চীনের শঙ্কা

ইউক্রেনে রাশিয়ার আগ্রাসনের তৃতীয় বছরে চীন যুদ্ধ বন্ধ করতে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের কৌশল নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণ করছে। বিশেষজ্ঞ এবং সাবেক কর্মকর্তাদের মতে, বেইজিং রাশিয়ার সঙ্গে সীমা-বিহীন পার্টনারশিপের পাশাপাশি ইউক্রেনকে কৌশলগত অংশীদার হিসেবে রাখার জন্য অবস্থান নেওয়ার পথ খুঁজছে।

গত ১৮ ফেব্রুয়ারি সৌদি রাজধানী রিয়াদে যুক্তরাষ্ট্রের এবং রাশিয়ার কর্মকর্তাদের বৈঠকের পর, চলতি সপ্তাহে ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী কির স্টারমার এবং ফরাসি প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাক্রোঁ ওয়াশিংটনে বৈঠক করছেন।

ম্যাক্রোঁ সোমবার সকালে হোয়াইট হাউসে ট্রাম্পের সঙ্গে সাক্ষাৎ করে দুই ঘণ্টা আলোচনা করেন। দুই নেতাই ইউক্রেন নিয়ে জি-৭ গ্রুপের সঙ্গে আলোচনায় ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে যোগ দেন।

এর আগে চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের সঙ্গে আলাপ করেন। পুতিন শি’কে রিয়াদ আলোচনা সম্পর্কে বিস্তারিত জানান এবং রাশিয়া আর চীনের মধ্যে ব্যাপক কৌশলগত অংশীদারিত্ব পুনরায় সমর্থন করেন। 

চীনের বিবৃতিতে বলা হয়, সঙ্কট নিরসনে রাশিয়া এবং সংশ্লিষ্ট সবার প্রচেষ্টাকে চীন স্বাগত জানায়।তিন বছর ধরে চীনা কর্মকর্তারা বলেছেন বেইজিং সঙ্কটের রাজনৈতিক সমাধানের জন্য গঠনমূলক ভূমিকা পালন করবে। তারা ২০২২ সালের ২৪ ফেব্রুয়ারি পর থেকে রাশিয়ার আগ্রাসনকে ইউক্রেন যুদ্ধ বলা থেকে বিরত থাকে।

বেইজিং যুক্তরাষ্ট্র এবং রাশিয়ার মধ্যে সাম্প্রতিক আলোচনার প্রশংসা করে। আলোচনায় ইউক্রেন উপস্থিত ছিল না।

ইউক্রেন এবং চীন ২০১১ সালে কৌশলগত অংশীদারিত্ব প্রতিষ্ঠা করে… সাম্প্রতিক বছরগুলোতে, চীন ইউক্রেনের সবচেয়ে বড় বাণিজ্য পার্টনার হিসেবে অবস্থান নিয়েছে, চীনের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ওয়াং ইয়ি ১৫ ফেব্রুয়ারি মিউনিখ নিরাপত্তা সম্মেলনের সময় ইউক্রেনের পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্দ্রি সিবিহাকে বলেন।

ওয়াং বলেন, ইউক্রেন সঙ্কটের বিষয় ... চীন সবসময়ই শান্তির পক্ষে কাজ করেছে এবং আলোচনার তাগাদা দিয়েছে। 

এখানে উল্লেখ্য, এই বৈঠক নিয়ে চীনের বিবৃতিতে ইউক্রেনের সার্বভৌমত্ব বা ভৌগলিক অখণ্ডতা নিয়ে কিছু বলা হয়নি।

রুশ-যুক্তরাষ্ট্র আলোচনার দুই দিন পর ২০ ফেব্রুয়ারি, ওয়াং দক্ষিণ আফ্রিকার জোহানেসবার্গে জি-২০ মন্ত্রী পর্যায়ের বৈঠকের সময় রাশিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রী সের্গে লাভরফের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন। লাভরভ তাকে রিয়াদ বৈঠক নিয়ে অবহিত করেন এবং ওয়াং চীনের সঙ্গে রাশিয়ার ব্যাপক কৌশলগত অংশীদারিত্ব পুনরায় সমর্থন করেন।

ওয়াং বলেন, রিয়াদে সম্প্রতি যুক্তরাষ্ট্র এবং রাশিয়ার মধ্যে অর্জিত ঐক্যমত্যসহ শান্তির উদ্দেশে নেওয়া সকল প্রচেষ্টা চীন সমর্থন করে।

যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিও বলেন, রিয়াদ আলোচনা – ওয়াশিংটন এবং মস্কোর মধ্যে অনেক বছরে প্রথম আলোচনা – ইউক্রেন নিয়ে কোনো চুক্তি করার জন্য দরকষাকষি ছিল না। ইউক্রেন আর ইউরোপিয়ান দেশগুলো উদ্বেগ প্রকাশ করে যে, তাদের পাশ কাটিয়ে আলোচনা হচ্ছে।

তিনি বলেন, আলোচনার উদ্দেশ্য ছিল, রাশিয়া যুদ্ধ শেষ করার বিষয়টা গুরুত্বের সাথে নিচ্ছে কি না, সেটা যাচাই করা।

রুবিও বলেন চার ঘণ্টার বেশি সময় ধরে চলা আলোচনা ছিল রাশিয়া এবং যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে দ্বিপাক্ষিক বিষয়ে যোগাযোগের মাধ্যম সৃষ্টি করার জন্য একটি পদক্ষেপ। এসব প্রচেষ্টার একটি লক্ষ্য হচ্ছে আমাদের দূতাবাসগুলোতে স্বাভাবিকত্ব এবং তাদের কাজ করার সক্ষমতা অর্জন করা।

কিছু বিশ্লেষক বলেন, যুক্তরাষ্ট্র আর রাশিয়ার সম্পর্ক নতুন করে শুরু হওয়ায় বেইজিং একটু নার্ভাস।

সাবেক প্রেসিডেন্ট জর্জ ডব্লিউ বুশের হোয়াইট হাউসে চীন বিষয়ক উপদেষ্টা ডেনিস ওয়াইল্ডার মনে করেন, যদিও বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক হয়তো পুরোপুরি প্রতিষ্ঠা হবে না, তারা নার্ভাস এই কারণে যে, ট্রাম্প যদি রাশিয়ার ওপর আরোপ করা নিষেধাজ্ঞা তুলে নেয়, তাহলে চীনের ওপর মস্কোর নির্ভরশীলতা কমে যাবে।

কিন্তু অন্যান্যরা সতর্ক করে বলেছেন, যুক্তরাষ্ট্র বিশ্বব্যাপী চীনের তথ্য প্রচারণাকে মদদ দেওয়ার ঝুঁকিতে আছে, কারণ বেইজিং ওয়াশিংটনকে একটি অনির্ভরযোগ্য মিত্র হিসেবে দেখাতে চায়।

ওয়াশিংটন-ভিত্তিক ফাউন্ডেশন ফর ডিফেন্স অব ডেমোক্রেসিসের (এফডিডি) প্রতিরক্ষা বিশেষজ্ঞ অবসরপ্রাপ্ত রিয়ার অ্যাডমিরাল মার্ক মন্টগোমারি বলেন, রাশিয়ার সঙ্গে তড়িঘড়ি করে আলোচনায় বসতে গিয়ে আমরা তাৎক্ষনিকভাবে আমাদের প্রভাব খাটানোর উপায় ছেড়ে দিলাম এবং আগ্রাসীকে ভুলভাবে চিহ্নিত করলাম।

সম্প্রতি এফডিডির এক ওয়েবিনারে মন্টগোমারি বলেন, চীন আকস্মিক এই সুসংবাদ পেয়েছে এবং তারা এর সুবিধা অবশ্যই পাবে।

এফডিডি’র সেন্টার ফর মিলিটারি অ্যান্ড পলিটিকাল পাওয়ার-এর পরিচালক ব্র্যাডলি বাওম্যান ওয়েবিনারে বলেন, আমার কোনো সন্দেহ নেই যে, বিশ্বব্যাপী চীনের কূটনীতিকরা লোকজনের কানে ফিস ফিস করে আমেরিকার অনির্ভরযোগ্যতার কথা বলছে এবং দুঃখের বিষয় এই প্রশাসন তাদের হাতে কথার খোরাক তুলে দিয়েছে।

সংঘাতের শেষে চীন ইউক্রেনে শান্তিরক্ষী বাহিনী পাঠানোর কথা বিবেচনা করবে কি না, সে বিষয়ে মন্তব্য করতে চীনের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র রাজী হননি।

বছরের পরের দিকে শি এবং পুতিনের মস্কো এবং বেইজিং সফর করার কথা রয়েছে। দুজন ২১ জানুয়ারি একটি ভার্চুয়াল বৈঠক করেন। শি ২৪ ফেব্রুয়ারি পুতিনের সঙ্গে টেলিফোনে কথা বলেন।

চীন সরকার আসলেই ইউক্রেনে রাশিয়ার যুদ্ধ করার লক্ষে কাজ করতে ইচ্ছুক কি না, তা নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের কিছু কর্মকর্তার সন্দেহ রয়েছে। তারা বিশ্বাস করে চীন হয়তো এই ইস্যুকে ট্রাম্পের সঙ্গে দরকষাকষির সময় তাদের হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করতে পারে।

তথ্যসূত্র: ভয়েস অব আমেরিকা

Jamuna Electronics

Logo

সম্পাদক : আবদুল হাই শিকদার

প্রকাশক : সালমা ইসলাম