ইসরাইলি আটককেন্দ্রের নির্মম চিত্র
নির্যাতন, মারধর ও অভুক্ত রাখা হচ্ছে ফিলিস্তিনি চিকিৎসকদের

যুগান্তর ডেস্ক
প্রকাশ: ২৫ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ০৮:১৮ পিএম

গাজায় ইসরাইলি আটককেন্দ্রে এখনও আটক রয়েছে ১৬০ জনেরও বেশি স্বাস্থ্যকর্মী। তাদের মধ্যে ২০ জনের বেশি চিকিৎসক রয়েছেন। এ ছাড়াও সংঘাত শুরুর পর থেকে ২৪ জন নিখোঁজ রয়েছেন। আটক হওয়া বন্দিরা বিগত কয়েকমাস ধরে অমানবিক নির্যাতনের শিকার হচ্ছেন। শারীরিক নির্যাতন থেকে শুরু করে মারধর এমনকি অভুক্ত রাখা হচ্ছে তাদের।
যুদ্ধবিরতি চুক্তির পর মুক্তিপ্রাপ্ত কিছু বন্দি স্বাস্থ্যকর্মীদের মুখে উঠে এসেছে সেসব লোমহর্ষক বর্ণনা। ইতোমধ্যেই বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা তাদের সুস্থতা ও নিরাপত্তা নিয়ে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছে। মঙ্গলবার দ্য গার্ডিয়ানের প্রতিবেদনে উঠে এসেছে এসব তথ্য।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও) বলেছে, যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর থেকে গাজা থেকে ২৯৭ জন স্বাস্থ্যসেবা কর্মীকে ইসরাইলি সেনাবাহিনী আটক করেছে। তবে কতজনকে মুক্তি দেওয়া হয়েছে বা আটকে রাখা হয়েছে সে বিষয়ে সংস্থার কাছে কোনো আপডেট তথ্য নেই। ইসরাইলি কারাগারে সাত মাস ধরে আটক ছিলেন আল-শিফা হাসপাতালের পরিচালক ডক্টর মোহাম্মদ আবু সেলমিয়া। বিনা অভিযোগে ইসরাইলি বাহিনী আটক করে তাকে। সেলমিয়া জানান, বন্দি জীবনের অভিজ্ঞতা সম্পর্কে যতই কথা বলি না কেন বাস্তবচিত্র তার চেয়ে অনেক করুণ।
কারাগারের স্মৃতি স্মরণ করে সেলমিয়া বলেন, রাইফেলের বাট দিয়ে পিটিয়েছে তারা। শরীরের ওপর লেলিয়ে দিয়েছে কুকুর। সেখানে খুব অল্প পরিমাণে খাবার দেওয়া হতো। পরিচ্ছন্ন থাকার কোনো ব্যবস্থা ছিল না। সাবান, পানি, টয়লেট কোনোকিছুরই সুব্যবস্থা ছিলো না।
ইউএনওসিএইচ এর আগে বলেছিল ‘এটা পরিষ্কার’ যে ইসরাইলি সামরিক বাহিনী দ্বারা বিপুল সংখ্যক স্বাস্থ্যসেবা কর্মীদের আটক গাজার স্বাস্থ্যসেবা ব্যবস্থার পতনে অবদান রেখেছে। ইসরাইলের অমানবিক আচরণের তীব্র নিন্দা জানিয়েছে জাতিসংঘ।
জেনেভা কনভেনশনের অধীনে এবং আন্তর্জাতিক আইনের ডাক্তারদের ওপর এমন নির্মম আচরণ গ্রহণযোগ্য নয়। পাশাপাশি যুদ্ধরত দেশের সাধারণ জনগণের প্রয়োজনীয় চিকিৎসাসেবা নিশ্চিতে স্বাস্থ্যকর্মীদের ওপর কোনো ধরনের আক্রমণের এখতিয়ার নেই।
গার্ডিয়ানকে দেওয়া এক বিবৃতিতে, ডব্লিউএইচওর মহাপরিচালক ড. টেড্রোস আধানম গেব্রেইসাস, ইসরাইল কর্তৃক চিকিৎসা কর্মীদের চলমান আটকের নিন্দা করে বলেছেন। পাশাপাশি তাদের নিরাপত্তার জন্যও গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন।
টেড্রোস বলেছেন, স্বাস্থ্যকর্মীরা রোগীদের সেবা করে তাই কখনই তাদের হামলার লক্ষ্যবস্তু করা উচিত না। আন্তর্জাতিক মানবিক আইনের অধীনে, তাদের সক্রিয়ভাবে সুরক্ষা নিশ্চিত করা উচিত।
এরপর যুদ্ধে গাজার স্বাস্থ্য খাতে ক্ষতির কথা জানিয়ে টেড্রোস বলেন, গাজার সবচেয়ে সিনিয়র দুই ডাক্তার-ডক্টর ইয়াদ আল-রান্তিসি, কামাল আদওয়ান হাসপাতালের একজন পরামর্শক প্রসূতি এবং স্ত্রীরোগ বিশেষজ্ঞ এবং আল-শিফা হাসপাতালের অর্থোপেডিক বিভাগের প্রধান ডা. আদনান আল-বুরশ আটক অবস্থায় মারা গেছেন বলে জানা গেছে।
অন্যদিকে ইউএনওসিএইচ-এর অধিকৃত ফিলিস্তিনি ভূখণ্ডের অফিসের প্রধান অজিথ সুংহে বলেছেন, যারা আন্তর্জাতিক আইনের অধীনে অপরাধের জন্য দায়ী তাদের অবশ্যই জবাবদিহি করতে হবে।
জাতিসংঘের মানবাধিকার কার্যালয় (ইউএনওসিএইচ) বলেছে, ইসরাইলকে অবশ্যই অবিলম্বে নির্বিচারে আটক চিকিৎসা কর্মীদের মুক্তি দিতে হবে। এ ছাড়াও বলপূর্বক গুম, নির্যাতন এবং অন্যান্য দুর্ব্যবহার করার মতো সব অনুশীলন বন্ধ করতে হবে।