Logo
Logo
×

আন্তর্জাতিক

জার্মানির নির্বাচনে রক্ষণশীলদের বিজয়, নতুন চ্যান্সেলর হচ্ছেন ফ্রিডরিখ মের্ৎস

Icon

আন্তর্জাতিক ডেস্ক

প্রকাশ: ২৪ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ০৮:৫৭ এএম

জার্মানির নির্বাচনে রক্ষণশীলদের বিজয়, নতুন চ্যান্সেলর হচ্ছেন ফ্রিডরিখ মের্ৎস

জার্মানির কেন্দ্র-ডানপন্থি খ্রিস্টিয়ান ডেমোক্র্যাটিক ইউনিয়ন (সিডিইউ) নির্বাচনে বিজয়ী হতে চলেছে, আর কট্টর ডানপন্থি অল্টারনেটিভ ফর জার্মানি (আএফডি) দ্বিতীয় বৃহত্তম দল হতে যাচ্ছে, রোববারের আগাম নির্বাচনের পর প্রকাশিত প্রাথমিক ফলাফলে এই তথ্য উঠে এসেছে। যেখানে অভিবাসন, অর্থনীতি এবং ডোনাল্ড ট্রাম্পের প্রত্যাবর্তন নিয়ে উদ্বেগই নির্বাচনে প্রধান ইস্যু ছিল।  

রোববার সন্ধ্যায় প্রাথমিক ফলাফল প্রকাশের পর সিডিইউ-এর প্রধান কার্যালয়ে উচ্ছ্বাস ও করতালির ধ্বনি ওঠে, যখন স্পষ্ট হয় বিরোধী দলটি নির্বাচনে সবচেয়ে বড় দল হয়ে উঠছে। তবে দলের নেতা ফ্রিডরিখ মের্ৎসের অভিবাসন নীতির বিরুদ্ধে দলীয় কার্যালয়ের বাইরে একটি ছোট বিক্ষোভও দেখা যায়।  

বার্লিনের কেন্দ্রস্থলে বিজয় ঘোষণা করে মের্ৎস বলেন, ‘চলো, উদযাপন শুরু করি’, যা তার দ্রুত জোট গঠনের ইচ্ছার ইঙ্গিত দেয়।  

প্রাথমিক ফলাফলে দেখা গেছে, সিডিইউ ভোটের ২৮.৮% পেয়েছে, যার ফলে মের্ৎস—যিনি এর আগে কখনও সরকারি দায়িত্বে ছিলেন না—জার্মানির নতুন চ্যান্সেলর হতে যাচ্ছেন।  

আএফডি ২০.২% ভোট পেয়ে দ্বিতীয় অবস্থানে উঠে এসেছে, যা দলের জন্য এক ঐতিহাসিক সাফল্য। একসময় চরমপন্থার সন্দেহে থাকা দলটি এখন বড় রাজনৈতিক শক্তিতে পরিণত হলেও সরকার গঠনের ক্ষেত্রে ‘ফায়ারওয়াল’ নীতির কারণে অন্য দলগুলো তাদের সঙ্গে জোট গঠন করবে না।  

আএফডি-এর নির্বাচনী কার্যালয়ে উচ্ছ্বাসের পরিবেশ ছিল, যেখানে সমর্থকরা জার্মানির পতাকা উড়িয়ে আনন্দ উদযাপন করেন। দলের সহ-নেতা অ্যালিস ভাইডেল সমর্থকদের উদ্দেশ্যে বলেন, ‘আএফডি কখনো এত শক্তিশালী ছিল না।’ 

চ্যান্সেলর ওলাফ শলৎজের মধ্য-বামপন্থি সোশ্যাল ডেমোক্রেটিক পার্টি (এসপিডি) ১৬.২% ভোট পেয়ে তৃতীয় অবস্থানে রয়েছে, যা ২০২১ সালের নির্বাচনে পাওয়া ২৫.৭% ভোটের তুলনায় বড় পতনের ইঙ্গিত দেয়।  

এছাড়া, সমাজতান্ত্রিক দল ডি লিঙ্কে ৮.৫% ভোট পেয়েছে, যা পার্লামেন্টে প্রবেশের জন্য প্রয়োজনীয় ৫% সীমার অনেক ওপরে।  

শলৎজের নেতৃত্বাধীন ‘ট্রাফিক লাইট’ জোট বিভক্ত রাজনৈতিক অবস্থানের কারণে দীর্ঘদিন ধরে টিকে থাকলেও শেষ পর্যন্ত ভেঙে পড়ে, যার ফলে রোববারের আগাম নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। জার্মানির মতো স্থিতিশীল রাজনৈতিক ব্যবস্থায় এটি একটি বিরল ঘটনা।  

নির্বাচনে ভোট দেওয়ার সুযোগ ছিল প্রায় ৬ কোটি ভোটারের।  

এই নির্বাচন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সরাসরি হস্তক্ষেপের কারণে বিশেষভাবে আলোচিত হয়েছে এবং জার্মানির অভিবাসন নীতির উপর নতুন করে বিতর্ক উসকে দিয়েছে।  

এদিকে, ইউক্রেন যুদ্ধ নিয়ে কিয়েভ ও ইউরোপীয় নেতাদের বাদ রেখে রাশিয়ার সঙ্গে ট্রাম্পের শান্তি আলোচনার সিদ্ধান্ত ইউরোপ জুড়ে আলোড়ন তুলেছে।  

মের্ৎস এই বিষয়ে রোববার বলেন, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র থেকে ‘স্বাধীনতা’ অর্জন তার প্রধান লক্ষ্য। তিনি বলেন, ‘আমার সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার হবে ইউরোপকে দ্রুত শক্তিশালী করা, যেন আমরা ধাপে ধাপে সত্যিকারের স্বাধীনতা অর্জন করতে পারি।’  

তিনি আরও বলেন, ‘আমি কখনো ভাবিনি যে টেলিভিশনে আমাকে এমন কিছু বলতে হবে। কিন্তু ডোনাল্ড ট্রাম্পের সাম্প্রতিক বক্তব্যের পর এটা স্পষ্ট যে, অন্তত এই প্রশাসনের একটি অংশ ইউরোপের ভবিষ্যৎ নিয়ে উদাসীন।’  

মের্ৎস আলোচনায় ইলন মাস্কের নির্বাচনি হস্তক্ষেপের কথাও উল্লেখ করেন।  তিনি বলেন, ‘ওয়াশিংটনের হস্তক্ষেপ মস্কোর হস্তক্ষেপের চেয়ে কোনো অংশে কম ছিল না। আমরা এমন এক চাপে আছি যে আমার সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার হবে ইউরোপের ঐক্য নিশ্চিত করা’।

বড় চ্যালেঞ্জের মুখে মের্ৎস

নাজি যুগের পর জার্মানির পুনর্গঠন হয়েছিল যুক্তরাষ্ট্রের নেতৃত্বাধীন ন্যাটো নিরাপত্তা জোটের আওতায়, আর দেশটির অর্থনৈতিক সমৃদ্ধি সম্ভব হয়েছিল সস্তা রুশ জ্বালানি ও চীনের সঙ্গে বাণিজ্যের ওপর ভর করে।  

তবে এক সময় যা নিশ্চিত ছিল, তা এখন ভেঙে পড়েছে। মের্ৎস যদি সত্যিই চ্যান্সেলর হন—যিনি ডানপন্থি অবস্থান আরও শক্ত করার এবং ইউরোপে নেতৃত্ব দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন—তাহলে তার সামনে বিশাল এক চ্যালেঞ্জ অপেক্ষা করছে।  

রোববারের ভোটের আগে দেশটিতে দুইটি প্রাণঘাতী হামলা ঘটে। একটি ম্যাগডেবার্গে বড়দিনের আগে এবং আরেকটি গত সপ্তাহে মিউনিখে। দুই হামলাই ভিন্ন উদ্দেশ্যপ্রণোদিত অভিবাসীরা চালায়, যা নির্বাচনের আগে বিভক্তি আরও বাড়িয়ে তোলে।  

আএফডি, যে দলটিকে অভিবাসীদের ‘বলির পাঁঠা’ বানানোর অভিযোগ রয়েছে, এসব হামলার সুযোগ নিয়ে রাজনৈতিক ফায়দা তুলেছে। তারা ‘রিমাইগ্রেশন’—অর্থাৎ অভিবাসীদের নির্বিশেষে বহিষ্কারের দাবি তোলে, এমনকি তাদের জার্মান নাগরিকত্ব থাকলেও।  

সাম্প্রতিক হামলার পর অনিয়মিত অভিবাসন ও অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তার বিষয়ে সিডিইউ এবং এসপিডি-ও কঠোর প্রতিশ্রুতি দিয়েছে। ফলে আএফডি যদি সরকারে আসতে না-ও পারে, তবুও তারা ইতোমধ্যেই রাজনৈতিক বিতর্কের ধারা নির্ধারণ করে ফেলেছে।

Jamuna Electronics

Logo

সম্পাদক : আবদুল হাই শিকদার

প্রকাশক : সালমা ইসলাম