এবার ট্রাম্পের কোপানলে মার্কিন শীর্ষ ৬ জেনারেল

আন্তর্জাতিক ডেস্ক
প্রকাশ: ২২ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ০৬:৫৭ পিএম

মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প শুক্রবার চেয়ারম্যান অব দ্য জয়েন্ট চিফস অব স্টাফ এয়ার ফোর্স জেনারেল চার্লস ‘সিকিউ’ ব্রাউনকে বরখাস্ত করেছেন। একইসঙ্গে তিনি আরও পাঁচজন শীর্ষ জেনারেল ও অ্যাডমিরালকে অপসারণ করেছেন। যা মার্কিন সামরিক নেতৃত্বে নজিরবিহীন এক রদবদল।
ট্রাম্প ট্রুথ সোশ্যাল প্ল্যাটফর্মে এক পোস্টে ঘোষণা দিয়ে বলেন, তিনি সাবেক লেফটেন্যান্ট জেনারেল ড্যান ‘রেজিন’ কেইনকে নতুন চেয়ারম্যান হিসেবে মনোনীত করবেন। এর ফলে প্রথমবারের মতো অবসরপ্রাপ্ত কোনো সামরিক কর্মকর্তাকে এই শীর্ষ পদে বসানো হচ্ছে।
পেন্টাগনের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, ট্রাম্প মার্কিন নৌবাহিনীর প্রধান অ্যাডমিরাল লিসা ফ্রাঞ্চেত্তিকেও সরিয়ে দিচ্ছেন। যিনি মার্কিন ইতিহাসে প্রথম নারী সামরিক প্রধান ছিলেন।
এছাড়াও তিনি বিমানবাহিনীর ভাইস চিফ অব স্টাফ এবং সেনা, নৌ ও বিমানবাহিনীর বিচারপতি (জাজ অ্যাডভোকেট জেনারেল) পদ থেকেও কর্মকর্তাদের অপসারণ করছেন।
নজিরবিহীন সামরিক পরিবর্তন
ট্রাম্পের এই সিদ্ধান্ত মার্কিন প্রতিরক্ষা বিভাগে বড় ধরনের পরিবর্তন বয়ে আনছে। অবশ্য এর আগে থেকেই পেন্টাগন ব্যাপক পরিবর্তনের প্রস্তুতি নিচ্ছিল।
ট্রাম্প প্রশাসন ব্যাপকভাবে বেসামরিক কর্মকর্তা বরখাস্তের পাশাপাশি প্রতিরক্ষা বাজেটে বড় রদবদল এবং সামরিক বাহিনী মোতায়েন নীতিতে পরিবর্তন আনার পরিকল্পনা করছিল।
সাধারণত প্রতিরক্ষা বিভাগের বেসামরিক নেতৃত্ব প্রশাসনের পরিবর্তনের সঙ্গে সঙ্গে বদল হয়। তবে সামরিক বাহিনীর শীর্ষ সদস্যরা রাজনৈতিকভাবে নিরপেক্ষ থেকে যে কোনো সরকারের নির্দেশ বাস্তবায়ন করেন।
জেনারেল ব্রাউন মূলত দ্বিতীয় কৃষ্ণাঙ্গ কর্মকর্তা হিসেবে এই শীর্ষ পদে ছিলেন। তিনি চার বছরের মেয়াদে নিয়োগ পেয়েছিলেন। যা ২০২৭ সালের সেপ্টেম্বরে শেষ হবার কথা ছিল। কিন্তু ট্রাম্প প্রশাসন তাকে আগেভাগেই বরখাস্তের সিদ্ধান্ত নিয়েছে, এমনকি তার উত্তরসূরি অনুমোদিত হওয়ার আগেই।
সমালোচনা ও প্রতিক্রিয়া
ট্রাম্পের এই সিদ্ধান্তের কড়া ভাষায় নিন্দা করেছেন ডেমোক্রেট আইনপ্রণেতারা।
সিনেটের সশস্ত্র পরিষেবা কমিটির শীর্ষ ডেমোক্র্যাট সেনেটর জ্যাক রিড বলেছেন, রাজনৈতিক আনুগত্যের পরীক্ষা হিসেবে সামরিক নেতাদের বরখাস্ত করা কিংবা জাতি ও লিঙ্গের ভিত্তিতে সিদ্ধান্ত নেওয়া আমাদের সেনাবাহিনীর পেশাদারিত্ব ও নিরপেক্ষতা ধ্বংস করবে।
প্রতিনিধি পরিষদের সদস্য সেথ মলটন বলেছেন, এটি আমেরিকার জন্য অপ্রত্যাশিত, দেশপ্রেমবিরোধী এবং আমাদের জাতীয় নিরাপত্তার জন্য বিপজ্জনক।
‘দুর্বল’ জেনারেলদের বরখাস্তের অঙ্গীকার
ট্রাম্প তার ২০২৪ সালের নির্বাচনী প্রচারণার সময়েই বলেছিলেন, তিনি ‘উইক’ (দুর্বল) জেনারেলদের বরখাস্ত করবেন। তবে শুক্রবারের বরখাস্তের পেছনে বিশেষ কোনো ব্যাখ্যা দেননি তিনি।
এক বিবৃতিতে ট্রাম্প বলেন, ‘আমি জেনারেল চার্লস ‘সিকিউ’ ব্রাউনের প্রতি তার ৪০ বছরের সেবার জন্য কৃতজ্ঞ। তিনি একজন দক্ষ নেতা এবং তার জন্য আমি শুভ কামনা জানাই’।
নারী সামরিক নেতাদের অপসারণ
ব্রাউনের পাশাপাশি ট্রাম্প অ্যাডমিরাল লিসা ফ্রাঞ্চেত্তিকেও অপসারণ করেছেন। যিনি ২০২৩ সালে মার্কিন নৌবাহিনীর ইতিহাসে প্রথম নারী প্রধান হিসেবে নিযুক্ত হয়েছিলেন।
এর আগে ট্রাম্প শপথ নেওয়ার প্রথম দিনেই কোস্ট গার্ড প্রধান অ্যাডমিরাল লিন্ডা ফাগানকে বরখাস্ত করেন। যিনি ওই পদে প্রথম নারী ছিলেন।
সাবেক সেনাপ্রধানদের বিরোধিতা
এদিকে গত মাসে ট্রাম্প প্রশাসন মার্ক মিলির নিরাপত্তা পরিষেবা ও ক্লিয়ারেন্স বাতিল করে এবং পেন্টাগন থেকে তার ছবি সরিয়ে দেয়।
মিলি অবশ্য ট্রাম্পের প্রথম মেয়াদে যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক বাহিনীর প্রধান ছিলেন। যিনি তার অবসরের পর ট্রাম্পের কড়া সমালোচক হয়ে ওঠেন।
নতুন সামরিক নীতির ইঙ্গিত?
ট্রাম্প প্রশাসনের এই পদক্ষেপ সামরিক বাহিনীর গঠন ও ভূমিকার ক্ষেত্রে বড় পরিবর্তনের ইঙ্গিত দিচ্ছে। মার্কিন প্রেসিডেন্ট ইতোমধ্যেই সামরিক বাহিনীর বহিরাগত তৎপরতা সীমিত করার এবং ‘আমেরিকা ফার্স্ট’ নীতির অধীনে প্রতিরক্ষা বাজেটে ব্যাপক কাটছাঁট করার পরিকল্পনা করেছেন।
তার এই নাটকীয় পরিবর্তনগুলো মার্কিন সামরিক বাহিনীর কার্যক্রম ও বৈশ্বিক ভূমিকার ক্ষেত্রে কীভাবে এবং কতখানি প্রভাবিত করবে, সেটাই এখন দেখার বিষয়। সূত্র: রয়টার্স