গাজার বিরুদ্ধে ট্রাম্পের অবস্থানের প্রতিবাদ
ঐতিহ্য ভেঙে সেন্ট প্যাট্রিক ডে’র অনুষ্ঠান বয়কট করবে আয়ারল্যান্ডের বিরোধী দল

আন্তর্জাতিক ডেস্ক
প্রকাশ: ২২ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ০৮:২৩ এএম

আয়ারল্যান্ডের প্রধান বিরোধী দল সিন ফেইন ঘোষণা করেছে, তারা এই বছরের সেন্ট প্যাট্রিক’স ডে উপলক্ষে হোয়াইট হাউজের অনুষ্ঠানে অংশ নেবে না। গাজা ইস্যুতে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের অবস্থানের প্রতিবাদেই তারা এই সিদ্ধান্ত নিয়েছে বলে শুক্রবার আনাদোলু সংবাদ সংস্থা জানিয়েছে।
উত্তর আয়ারল্যান্ডের ফার্স্ট মিনিস্টার ও স্টর্মন্টে সিন ফেইনের শীর্ষ প্রতিনিধি মিশেল ও’নিল এ বছর ঐতিহ্য ভেঙে ওয়াশিংটন ডিসিতে অনুষ্ঠানে অংশ নেবেন না।
সিন ফেইনের নেত্রী মেরি লু ম্যাকডোনাল্ড এক ভিডিও বার্তায় বলেছেন, তিনি গাজার বিষয়ে ট্রাম্পের মন্তব্য দেখে ‘গভীর উদ্বেগ’ অনুভব করছেন এবং ফিলিস্তিনিদের ‘গণহারে উচ্ছেদ’ ও ‘স্থায়ীভাবে তাদের ভূমি দখলের’ আহ্বান শুনে ‘ভীত’ হয়েছেন।
তিনি যুক্তরাষ্ট্রকে আয়ারল্যান্ডের ‘মূল্যবান বন্ধু’ ও উত্তর আয়ারল্যান্ড শান্তি প্রক্রিয়ায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখা দেশ হিসেবে স্বীকার করলেও বলেন, ফিলিস্তিন প্রশ্নে ট্রাম্প প্রশাসনের বর্তমান অবস্থান ‘ধ্বংসাত্মকভাবে ভুল’।
ম্যাকডোনাল্ড বলেন, ‘গাজার জনগণের গণহারে উচ্ছেদের আহ্বানের বিরুদ্ধে নৈতিক অবস্থান হিসেবে আমি এ বছর হোয়াইট হাউজের অনুষ্ঠানে না যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছি।
‘শান্তি ও নিরাপত্তার একমাত্র পথ হলো স্থায়ী যুদ্ধবিরতি এবং ন্যায়সঙ্গত ও টেকসই দুই রাষ্ট্রভিত্তিক সমাধান—এটাই যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থান হওয়া উচিত।’
তিনি আয়ারল্যান্ডের প্রধানমন্ত্রী (টাওইশেখ) মাইকেল মার্টিনকে সেন্ট প্যাট্রিক’স ডে সফরকে কাজে লাগিয়ে আয়ারল্যান্ডের জনগণের মনোভাব প্রতিফলিত করার এবং আন্তর্জাতিক আইনের আলোকে ফিলিস্তিনের পক্ষে সোচ্চার হওয়ার আহ্বান জানান।
গাজা নিয়ে ট্রাম্পের বিতর্কিত মন্তব্য
সিন ফেইনের এই বয়কট এমন সময়ে এলো, যখন ডোনাল্ড ট্রাম্প চলতি মাসের শুরুতে গাজা নিয়ে বিতর্কিত মন্তব্য করেন। তিনি বলেন, যুক্তরাষ্ট্র গাজা ‘নিয়ে নিতে’ পারে এবং সেখানকার ফিলিস্তিনিদের অন্যত্র পুনর্বাসিত করা যেতে পারে।
ইসরাইলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর সঙ্গে এক যৌথ সংবাদ সম্মেলনে ট্রাম্প প্রস্তাব দেন, ইসরাইল গাজার নিয়ন্ত্রণ যুক্তরাষ্ট্রের হাতে তুলে দিক। পরে তিনি বলেন, বাস্তুচ্যুত হওয়া ২০ লাখ ফিলিস্তিনিকে পার্শ্ববর্তী দেশগুলোতে পুনর্বাসন করা হবে, তবে তাদের নিজ ভূমিতে ফেরার অধিকার থাকবে না।
‘ট্রাম্পের মন্তব্য উপেক্ষা করা যায় না’
এ বিষয়ে উত্তর আয়ারল্যান্ডের ফার্স্ট মিনিস্টার মিশেল ও’নিল বলেন, ফিলিস্তিনিদের ‘জোরপূর্বক উচ্ছেদ’ নিয়ে ট্রাম্পের বক্তব্য উপেক্ষা করা যায় না।
‘ভবিষ্যতে, যখন আমাদের সন্তানরা জিজ্ঞেস করবে যে ফিলিস্তিনি জনগণ যখন অবর্ণনীয় দুর্ভোগ পোহাচ্ছিল, তখন আমরা কী করেছিলাম—আমি বলতে পারব, আমি মানবতার পক্ষে দাঁড়িয়েছিলাম,’ বলেন ও’নিল।
তিনি জানান, এই সিদ্ধান্ত নেওয়ার আগে তিনি ডেপুটি ফার্স্ট মিনিস্টার এমা লিটল-পেংগেলির সঙ্গে কথা বলেছেন এবং এই সফরে অংশ নেওয়া না নেওয়া সম্পূর্ণ তার ব্যক্তিগত সিদ্ধান্ত ছিল।
‘আমার জন্য এটি নৈতিক অবস্থানের বিষয়। এটি এক ঐতিহাসিক মুহূর্ত, যখন আমাদের সবাইকে ভাবতে হবে আমরা কী করব। ফিলিস্তিনি জনগণের পক্ষে দাঁড়ানোর এটি একটি সুযোগ।’
ও’নিল আরও জানান, তিনি মার্কিন সিনিয়র ব্যক্তিদের সঙ্গে শান্তি ও অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির বিষয়ে সংলাপ চালিয়ে যাবেন।
ডিইউপি’র সমালোচনা
এদিকে, উত্তর আয়ারল্যান্ডের ডেমোক্রেটিক ইউনিয়নিস্ট পার্টি (ডিইউপি)-এর নেতা গ্যাভিন রবিনসন সিন ফেইনের এই সিদ্ধান্তের সমালোচনা করে একে ‘দূরদৃষ্টিহীন ও প্রতিক্রিয়াশীল’ বলে অভিহিত করেছেন।
তিনি নিশ্চিত করেছেন, উত্তর আয়ারল্যান্ডের ফার্স্ট ও ডেপুটি ফার্স্ট মিনিস্টারদের ওয়াশিংটন সফরের দীর্ঘদিনের ঐতিহ্য বজায় রাখতে ডিইউপি এই বছরও অনুষ্ঠানে অংশ নেবে।
গাজার ভয়াবহ পরিস্থিতি
ইসরাইলের গণহত্যামূলক হামলায় এখন পর্যন্ত অন্তত ৪৮,৩০০ মানুষ নিহত হয়েছে, যাদের বেশিরভাগই নারী ও শিশু। পুরো উপত্যকাটি ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়েছে। বর্তমানে যুদ্ধবিরতি চললে গাজার মানবিক পরিস্থিতি শোচনীয়।
গত নভেম্বরে, আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালত (আইসিসি) গাজায় যুদ্ধাপরাধ ও মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে নেতানিয়াহু ও তার তৎকালীন প্রতিরক্ষামন্ত্রী ইয়োভ গ্যালান্টের বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করে।
এছাড়া, ইসরাইল জাতিসংঘের আন্তর্জাতিক বিচার আদালতে (আইসিজে) অবরুদ্ধ গাজার ওপর পরিচালিত যুদ্ধের জন্য গণহত্যার অভিযোগের মুখোমুখি হয়েছে।