ভারতের দিল্লির মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে শালিমার বাগের বিধায়ক রেখা গুপ্তকে বেছে নিয়েছে বিজেপির কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব। বৃহস্পতিবার রামলীলা ময়দানে মুখ্যমন্ত্রী রেখাসহ নতুন মন্ত্রিসভার সদস্যরা শপথ নিয়েছেন। 

ভারতীয় সংবাদমাধ্যম জানিয়েছে, এবারের বিধানসভা ভোটে চাঁদনি চক এলাকার শালিমার বাগ আসনে তিনবারের আম আদমি পার্টির বিধায়ক বন্দনা কুমারীকে সাড়ে ২৯ হাজারেরও বেশি ভোটে হারিয়েছেন রেখা। ২০১৫ এবং ২০২০ সালে এই আসনেই বন্দনার কাছে পরাজিত হয়েছিলেন তিনি।

প্রথমবার বিধায়ক হলেও দিল্লির পৌরসভা ভোটে টানা তিনবার জিতেছেন রেখা। শেষবার জিতেছেন ২০২২ সালের ডিসেম্বরে। কিন্তু তারপরই মেয়র নির্বাচন ঘিরে দেখা দেয় সমস্যা। 

তিনবার ব্যর্থ হওয়ার পর সুপ্রিম কোর্টের হস্তক্ষেপে ২০২৩ সালের ফেব্রুয়ারিতে মেয়র নির্বাচনে আম আদমি পার্টির (আপ) প্রার্থী শেলি ওবেরয় ৩৪ ভোটে হারিয়ে দিয়েছিলেন বিজেপির রেখাকে। তারই দুই বছর পর সেই ফেব্রুয়ারি মাসেই রেখা গুপ্ত পাচ্ছেন দিল্লির মুখ্যমন্ত্রিত্ব।

ব্যবসায়ী সম্প্রদায়ের প্রতিনিধি রেখা একসময় ভারতের কট্টর-উগ্র হিন্দু জাতীয়তাবাদী সংগঠন রাষ্ট্রীয় স্বয়ংসেবক সংঘের ছাত্র সংগঠন অখিল ভারতীয় বিদ্যার্থী পরিষদের (এবিভিপি) নেত্রী ছিলেন। দিল্লি বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র সংগঠনের সভাপতি পদের নির্বাচনেও জিতেছিলেন তিনি।  

নয়াদিল্লি আসনে আম আদমি পার্টির (আপ) প্রধান অরবিন্দ কেজরিওয়ালকে হারানো প্রবেশ বর্মা বুধবার পরিষদীয় দলের বৈঠকে রেখার নাম প্রস্তাব করেন। ঘটনাচক্রে ১৯৯৮ সালে দিল্লির ক্ষমতা হারানোর সময়ও বিজেপির মুখ্যমন্ত্রী পদে ছিলেন এক নারী নেত্রী, যার নাম সুষমা স্বরাজ। সুষমা, শীলা দীক্ষিত, আতিশী মার্লেনার পরে চতুর্থ নারী মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে দিল্লি পেল রেখাকে।

প্রথমবারের বিধায়ককেই যে মুখ্যমন্ত্রী নির্বাচন করা যায় পশ্চিমাঞ্চলীয় রাজ্য রাজস্থানে ১৪ মাসে আগেই তা করে দেখিয়েছিল নরেন্দ্র মোদি-অমিত শাহরা। বসুন্ধরা রাজে, সিপি জোশীর মতো হেভিওয়েটদের দূরে সরিয়ে তখন বেছে নেওয়া হয়েছিল ভজনলাল শর্মাকে। 

২৭ বছর পর ক্ষমতা দখলের পরে এবার দিল্লিতেও প্রথমবারের বিধায়ক রেখা গুপ্তের ওপরেই ভরসা রাখলেন তারা। এই রেখা গুপ্ত এখনও দিল্লি পৌরসভার কাউন্সিলর।

ভারতের হরিয়ানা রাজ্যের জুলানায় ১৯৭৪ সালে জন্মগ্রহণ করে রেখা। পড়াশোনা করেছেন দিল্লির দৌলতরাম কলেজ এবং উত্তরপ্রদেশের মেরঠের চরণ সিং বিশ্ববিদ্যালয়ে। ব্যবসায়ী সমাজের প্রতিনিধি রেখা গত শতকের নব্বইয়ের দশকে কট্টরপন্থি গোষ্ঠী আরএসএস পরিবারের ছাত্র সংগঠন এবিভিপির নেত্রী ছিলেন।

১৯৯৫ সালে দিল্লি বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র সংসদের নির্বাচনে সাধারণ সম্পাদক পদে জয়ীও হয়েছিলেন তিনি। সেবার সভাপতি নির্বাচনে জয়ী হয়েছিলেন এবারের বিধানসভা ভোটে জামানত হারানো কংগ্রেস নেত্রী অলকা লাম্বা। ১৯৯৬ সালে রেখা জেতেন সভাপতি নির্বাচনে।

এরপর ২০০৭ সালে প্রথমবার দিল্লির পৌরসভা ভোটে জিতেছিলেন। সেসময় যুব মোর্চার সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক হয়েছিলেন তিনি। আরএসএসের সদস্য রেখা বর্তমানে বিজেপির মহিলা মোর্চার অন্যতম সর্বভারতীয় সহ-সভাপতি।

২৭ বছর পরে আবার দিল্লির ক্ষমতায় ফিরেছে বিজেপি। দিল্লির ৭০টি বিধানসভা আসনের মধ্যে বিজেপি জয়ী হয়েছে ৪৮টি আসনে। অন্যদিকে টানা ১০ বছর ক্ষমতায় থাকার পর হেরে গেছে অরবিন্দ কেজরিওয়ালের আম আদমি পার্টি (আপ)।

দলটি পেয়েছে মাত্র ২২টি আসন। এমনকি কেজরিওয়াল তার নিজের নয়াদিল্লি আসনেই বিজেপি প্রার্থী প্রবেশ বর্মার কাছে পরাজিত হয়েছেন।