হামাসকে অপসারণ ও নিরস্ত্রীকরণের চিন্তা ‘নির্বোধ মনস্তাত্ত্বিক যুদ্ধ’

আন্তর্জাতিক ডেস্ক
প্রকাশ: ২০ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ১২:৩৬ পিএম

ছবি: সংগৃহীত
ফিলিস্তিনের স্বাধীনতাকামী সংগঠন হামাস জানিয়েছে, গাজা উপত্যকা থেকে তাদের নিরস্ত্রীকরণ বা অপসারণের যেকোনো প্রচেষ্টাকে তারা প্রত্যাখ্যান করে। সংগঠনটির নেতারা বলেছেন, গাজায় ভবিষ্যতের যেকোনো সিদ্ধান্ত অবশ্যই জাতীয় ফিলিস্তিনি ঐকমত্যের মাধ্যমে নিতে হবে।
মিডলইস্ট মনিটর জানিয়েছে, বুধবার রাতে হামাসের মুখপাত্র হাজেম কাসেম ইসরাইলকে উদ্দেশ করে বলেন, গাজা থেকে হামাসকে বিতাড়িত করার চিন্তা ‘নির্বোধ মনস্তাত্ত্বিক যুদ্ধ’।
তিনি বলেন, গাজা থেকে হামাসকে সরিয়ে দেওয়া বা নিরস্ত্রীকরণ অগ্রহণযোগ্য।
এর আগে গতকাল, ইসরাইলের পাবলিক ব্রডকাস্টার কান’র এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু যুদ্ধবিরতি এবং বন্দি বিনিময় চুক্তির দ্বিতীয় ধাপ নিয়ে আগামী সপ্তাহ থেকে আলোচনা শুরু করার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন, তবে সেটি গাজা থেকে হামাসকে অপসারণ এবং এই অঞ্চলটিকে বেসামরিকীকরণ করার শর্ত সাপেক্ষে।
কাসেম বলেন, শনিবার আমরা ফিলিস্তিনি জনগণের জন্য একটি বড় অর্জন দেখতে পাব। কেননা, ওইদিন ইসরাইলি কারাগার থেকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড এবং দীর্ঘমেয়াদি কারাদণ্ডপ্রাপ্ত ফিলিস্তিনি বন্দিরা মুক্তি পাবেন।
হামাস আরও ঘোষণা করেছে, তারা আগামীকাল চার ইসরাইলি বন্দির মৃতদেহ হস্তান্তর করবে এবং শনিবার ছয়জন জীবিত বন্দিকে ফিলিস্তিনিদের বিনিময়ে ইসরাইলের কাছে হস্তান্তর করার পরিকল্পনা করেছে।
কাসেম চুক্তির দ্বিতীয় ও তৃতীয় ধাপ এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার জন্য হামাসের প্রস্তুতির কথা নিশ্চিত করে বলেন, আমরা রাজনৈতিক ও মাঠ পর্যায়ে চুক্তির সমস্ত শর্ত বাস্তবায়নে প্রস্তুত।
তিনি আরও বলেন, আমরা এমন একটি দ্বিতীয় পর্যায়ের জন্য প্রস্তুত, যেখানে একসঙ্গে সব বন্দির বিনিময় হবে। তবে এটি তখনই সম্ভব, যখন একটি চূড়ান্ত চুক্তি হবে, যা স্থায়ী যুদ্ধবিরতি এবং গাজা থেকে ইসরাইলের সম্পূর্ণ সেনা প্রত্যাহারের নিশ্চয়তা দেবে।
এখন পর্যন্ত মোট ১ হাজার ১৩৫ জন ফিলিস্তিনিকে ইসরাইলি কারাগার থেকে মুক্তি দেওয়া হয়েছে। ইসরাইল এই সপ্তাহে আরও ৫০২ জনকে মুক্তি দেওয়ার আশ্বাস দিয়েছে।
গাজায় হামাস ও ইসরাইলের মধ্যে স্বাক্ষরিত যুদ্ধবিরতি চুক্তি গত ১৯ জানুয়ারি কার্যকর হয়। তিন পর্যায়ে বাস্তবায়নযোগ্য এই চুক্তির ৪২ দিনব্যাপী প্রথম পর্যায়ে ৩৩ ইসরাইলি জিম্মির বিনিময়ে প্রায় দুই হাজার ফিলিস্তিনি বন্দি ইসরাইলি কারাগারগুলো থেকে মুক্তি পাবেন।
সে অনুযায়ী এ পর্যন্ত ১৯ ইসরাইলি জিম্মিকে ছেড়ে দিয়ে অন্তত ১ হাজার ১০০ ফিলিস্তিনি বন্দির মুক্তি নিশ্চিত করেছে হামাস। বাকি যে ১৪ জনকে মুক্তি দেওয়া হবে, তাদের মধ্যে আটজন নিহত হয়েছেন বলে ইসরাইলি কর্মকর্তারা নিশ্চিত করেছেন।
চলমান প্রথম পর্যায়ের যুদ্ধবিরতি আগামী ১ মার্চ শেষ হওয়ার কথা রয়েছে। যদিও এর ২৬ দিন আগে দ্বিতীয় পর্যায়ের যুদ্ধবিরতি নিয়ে আলোচনা শুরু হওয়ার কথা ছিল। তবে ইহুদিবাদী ইসরাইলের গড়িমসির কারণে তা এখনো সম্ভব হয়নি।
উল্লেখ্য, ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর ইসরাইলে হামলা চালায় হামাস। এতে প্রায় ১ হাজার ২০০ জন নিহত হন। এছাড়া প্রায় ২৫০ জনকে জিম্মি করে গাজায় নিয়ে যায় হামাস যোদ্ধারা। সেদিন থেকেই গাজায় নির্বিচারে হামলা শুরু করে ইসরাইলি বাহিনী। এতে গত ১৯ জানুয়ারি পর্যন্ত উপত্যকাটিতে সব সূত্রের হিসাবে মতে ৬৫ হাজারের বেশি ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন। আহত হয়েছেন প্রায় দেড় লাখ।