নিজের ধর্ষণের বর্ণনা শুনিয়ে মার্কিন হাউসকে হতবাক করলেন ন্যান্সি
![Icon](https://cdn.jugantor.com/uploads/settings/icon_2.jpg)
নোমান সাবিত, নিউ ইয়র্ক থেকে
প্রকাশ: ১২ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ০৫:৫৪ পিএম
![নিজের ধর্ষণের বর্ণনা শুনিয়ে মার্কিন হাউসকে হতবাক করলেন ন্যান্সি](https://cdn.jugantor.com/assets/news_photos/2025/02/12/Nancy-Mace-67ac8bdc2a27d.jpg)
যুক্তরাষ্ট্রের চেম্বার হাউসে নিজের ধর্ষিতা হওয়ার লোমহর্ষক বর্ণনা শুনিয়ে সবাইকে তাক লাগিয়ে দিলেন দক্ষিণ ক্যারোলিনার রিপাবলিকান প্রতিনিধি ন্যান্সি মেস। স্থানীয় সময় ১০ জানুয়ারি সন্ধ্যায় এক ব্যক্তিগত ও ব্যতিক্রমী বক্তৃতায় নিজের ও অন্যান্য নারীর ওপর যৌন নির্যাতন, ধর্ষণ ও গোপনে নজরদারি চালানোর অভিযোগ তুলে ধরেন।
২০২১ সাল থেকে হাউসে দায়িত্ব পালন করা ন্যান্সি মেস তার সেই নজিরবিহীন এক ঘণ্টাব্যাপী সেই বক্তৃতায় দক্ষিণ ক্যারোলিনার চারজন পুরুষকে ‘নির্যাতনকারী’ বলে অভিহিত করেন। হাউস ফ্লোরে তাদের নাম ও ছবিও পোস্টার বোর্ডে প্রদর্শন করেন তিনি।
মেস তার বক্তৃতার শিরোনাম দেন ‘লোহা লোহাকে শাণ দেয়’। তিনি বলেন, ‘তোমরা নরকের একমুখী টিকিট কিনে নিয়েছ। এটি সরাসরি, কোনো সংযোগ নেই। যাতে আমি ও তোমাদের সমস্ত শিকার নারীরা চিরকাল তোমাদের পচতে দেখতে পারি’।
তিনি এ সময় নির্দিষ্ট কিছু অভিযোগ করেন। যেমন- নারী ও অপ্রাপ্তবয়স্ক কিশোরীদের হাজারো গোপন ছবি ও ভিডিও পাওয়া, যা তাদের সম্মতি ছাড়াই ধারণ করা হয়।
মেস বলেন, এক রাতে অচেতন হয়ে পড়ার পর তিনি নিজেই ধর্ষণের শিকার হন। তিনি বিশ্বাস করেন যে, তাকে সেই রাতে ‘ইচ্ছাকৃতভাবে’ অচেতন করা হয়।
বক্তৃতার সময় মেস একাধিক প্রতীকী বস্তু প্রদর্শন করেন, যার মধ্যে ছিল হাতকড়া। এটি দেখিয়ে তিনি বলেন, ‘যদি কেউ আমাকে নারীদের পক্ষে দাঁড়ানোর কারণে গ্রেফতার করতে চায়, তাহলে এখানে আমার হাত।
সেই সঙ্গে তিনি একটি গ্লাস দিখিয়ে বলেন, এটা সেদিনের পানীয়ের পরিমাণ, যা তিনি সেই রাতে পান করেছিলেন। একটি ক্যামেরা তুলে ধরে তিনি দাবি করেন, অভিযুক্তরা এটা লুকিয়ে রেখে গোপন ছবি ও ভিডিও ধারণ করেছিল।
মেস আরও বিস্তারিত বর্ণনা দেন, তবে তার অভিযোগগুলো স্বাধীনভাবে যাচাই করা যায়নি। যদিও মেস বলেছেন, তার অভিযোগের সমর্থনে প্রমাণ রয়েছে। তিনি তা এখনো উপস্থাপন করেননি।
দক্ষিণ ক্যারোলিনার আইন প্রয়োগকারী বিভাগ (এসএলিডি) নিশ্চিত করেছে যে, তারা ২০২৩ সালের ডিসেম্বরের এক ঘটনায় অভিযুক্ত এক ব্যক্তির বিরুদ্ধে তদন্ত শুরু করেছে।
সংস্থাটি জানায়, এসএলিডি এই ঘটনার ওপর একাধিক সাক্ষাৎকার নিয়েছে। একাধিক সার্চ ওয়ারেন্ট কার্যকর করেছে এবং একটি সুসংহত কেস ফাইল প্রস্তুত করেছে, যা মামলা সমাপ্তির পর প্রকাশ করা হবে।
তবে এখন পর্যন্ত কোনো ফৌজদারি অভিযোগ আনা হয়নি। অভিযুক্তদের মধ্যে কয়েকজন দ্য হিল-কে দেওয়া বিবৃতিতে তাদের বিরুদ্ধে আনা অভিযোগ অস্বীকার করেছেন এবং আইনি পদক্ষেপ নেওয়ার কথা বলেছেন।
মেস তার বক্তৃতায় দক্ষিণ ক্যারোলিনার অ্যাটর্নি জেনারেল অ্যালান উইলসন (আর)-এর কঠোর সমালোচনা করেন। তিনি অভিযোগ করে বলেন, তিনি এই অপরাধগুলোর যথাযথ তদন্ত ও বিচার নিশ্চিত করেননি।
উল্লেখ্য, উভয়েই ২০২৬ সালে দক্ষিণ ক্যারোলিনার গভর্নর পদে লড়ার কথা বিবেচনা করছেন।
দক্ষিণ ক্যারোলিনার অ্যাটর্নি জেনারেলের কার্যালয় মেসের বক্তব্যকে ‘সম্পূর্ণ মিথ্যা’ দাবি করে জানায় যে, তারা এ বিষয়ে কোনো আনুষ্ঠানিক অভিযোগ বা তথ্য পায়নি। অ্যাটর্নি জেনারেলের কার্যালয় আরও জানায়, মেস হয় এ বিষয়ে অজ্ঞ, নয়তো ইচ্ছাকৃতভাবে বিষয়টি ভুলভাবে উপস্থাপন করছেন।
এদিকে ন্যান্সির এই বক্তৃতাটি হাউস চেম্বারে একটি ব্যতিক্রমী দৃশ্যের অবতারণা করে। যেখানে সাধারণত আইন প্রণয়ন, জনগণের সম্মাননা বা সাম্প্রতিক ঘটনাবলির ওপর আলোচনা করা হয়।
বক্তৃতার সময় মেস একটি ‘বেঁচে থাকা ভুক্তভোগী’ লেখা লাল স্টিকার তার বুকে লাগান। তিনি উপস্থিত কিছু সহকর্মী ও দর্শকদেরও এই স্টিকার দেন, যারা সেগুলো পরে গ্রহণ করেন।
মেস দীর্ঘদিন ধরেই ধর্ষণ ও যৌন নির্যাতনের বিরুদ্ধে সোচ্চার এবং তার ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতা শেয়ার করেছেন। তিনি কিশোরী বয়সে ধর্ষণের শিকার হয়েছিলেন বলে দাবি করেন এবং এর ভিত্তিতে গর্ভপাতবিরোধী আইনগুলোতে ব্যতিক্রমের পক্ষে কথা বলেছেন।
তবে সাম্প্রতিক মাসগুলোতে তিনি ট্রান্সজেন্ডার নারীদের শৌচাগারে প্রবেশের বিরোধিতা করে বক্তব্য দিয়ে আসছেন। বিশেষ করে প্রথম ট্রান্সজেন্ডার কংগ্রেস সদস্য সারাহ ম্যাকব্রাইড (ডি-ডেল)-এর বিরুদ্ধে মন্তব্য করেছেন।
সোমবারের বক্তৃতায় তিনি ট্রান্সজেন্ডার নারীদের বিরুদ্ধে আনা কয়েকটি বিল তার বক্তব্যে অন্তর্ভুক্ত করেন। তিনি বলেন, এসব বিল ‘নারী ও কিশোরীদের রক্ষা করার’ জন্য আনা হয়েছে।