Logo
Logo
×

আন্তর্জাতিক

কেজরিওয়ালকে একহাত নিলেন আন্না হাজারে

Icon

আন্তর্জাতিক ডেস্ক

প্রকাশ: ০৮ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ০৭:৩০ পিএম

কেজরিওয়ালকে একহাত নিলেন আন্না হাজারে

অরবিন্দ কেজরিওয়ালের পরিচিতি লাভ যার ছত্রচ্ছায়ায়, সেই প্রবীণ গান্ধীবাদী আন্না হাজারে আজ একহাত নিলেন তার। তিনি বলেছেন, চিন্তাভাবনায় শুদ্ধতার বদলে অরবিন্দ কেজরিওয়াল ধনদৌলতের মধ্যে আচ্ছন্ন হয়ে পড়েছিলেন। আমার কথা তার মনে ছিল না।

দিল্লি নির্বাচনে আম আদমি পার্টির (আপ) পরাজয় নিশ্চিত হওয়ার পর আন্না হাজারে তার প্রতিক্রিয়া জানাতে গিয়ে আজ সংবাদমাধ্যমকে বলেছেন, আমি বারবার বলেছি, মানুষের দরবারে ভোট ভিক্ষার সময় প্রার্থীর চালচলন, আচরণ ও চিন্তাভাবনা শুদ্ধ থাকা দরকার। জীবন হওয়া উচিত নিষ্কলঙ্ক। জীবনে ত্যাগ থাকলে ভোটারের আস্থা ও বিশ্বাস জন্মায়। কেজরিওয়াল এসব কথার গুরুত্ব দেননি। তিনি ধনদৌলতে আচ্ছন্ন হয়ে পড়েছিলেন।

আন্না হাজারের দুর্নীতিবিরোধী আন্দোলনই কেজরিওয়ালকে পরিচিতি দিয়েছিল। দিল্লিতে ২০১১–১২ সালের সেই আন্দোলন কাঁপিয়ে দিয়েছিল তৎকালীন কংগ্রেস নেতৃত্বাধীন ইউপিএ সরকারকে। আন্না চাননি আন্দোলনের পর রাজনৈতিক দল গড়তে। ভিন্নমত ছিল কেজরিওয়ালের। আন্দোলনে শামিল অন্যদের নিয়ে গড়ে তুলেছিলেন আম আদমি পার্টি। তার যুক্তি ছিল, সিস্টেম বা ব্যবস্থার মধ্যে থেকে ব্যবস্থার বদল ঘটাতে হবে। তা করতে গিয়ে তিনি নিজেই ব্যবস্থার অঙ্গ হয়ে গেলেন। বিজেপির কাছে হার স্বীকারে বাধ্য হলেন।

নির্বাচন কমিশনের সর্বশেষ হিসাব অনুযায়ী দিল্লি বিধানসভার ৭০ আসনের মধ্যে ৪৭টি জিতে বিজেপি ২৭ বছর পর দিল্লিতে ক্ষমতাসীন হচ্ছে। জয় সুনিশ্চিত হওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি জানিয়েছেন, দিল্লির উন্নয়নই হবে তার দলের সরকারের পাখির চোখ। আপ পেতে চলেছে ২৩টি আসন। কংগ্রেস এবারেও শূন্য।

দিল্লি বিধানসভায় কংগ্রেস যে হারের হ্যাটট্রিক করবে, সে বিষয়ে কারও মনে বিন্দুমাত্র সন্দেহ ছিল না। কিন্তু ২০১৫ ও ২০২০ সালের মতো এবারও যে তারা একটি আসনও জিততে পারবে না, তা ভাবা হয়নি। ভোটের আগে ও পরে কংগ্রেসের শীর্ষ নেতাদের ধারণা ছিল, এবার অন্তত তারা দুই কি তিনটি আসন জিতবে। কিন্তু দেখা গেল, এবারও তাদের ঝুলি শূন্য। অন্ধ্র প্রদেশ ও সিকিম বিধানসভায় শূন্য আসনপ্রাপ্তির হ্যাটট্রিকের নজির কংগ্রেসের আছে। এবার তার সঙ্গে যুক্ত হলো দিল্লি।

কংগ্রেস ভেবেছিল, তাদের প্রাপ্ত ভোটের হার ১০ শতাংশের বেশি হবে। ২০২০ সালে তারা পেয়েছিল ৪ দশমিক ৬২ শতাংশ ভোট। কিন্তু নির্বাচন কমিশনের হিসাবে দেখা যাচ্ছে, বেলা তিনটা পর্যন্ত তাদের পাওয়া ভোটের হার সাড়ে ৬ শতাংশের মতো। অর্থাৎ পাঁচ বছর আগের তুলনায় এবার কংগ্রেসের ভোটের হার ২ শতাংশ বেড়েছে। সংখ্যায় তা নগণ্য হলেও বেশ কিছু আসনে কংগ্রেস হয়ে দাঁড়িয়েছেন আপ প্রার্থীদের পরাজয়ের কারণ।

যেমন নিউ দিল্লি কেন্দ্রে অরবিন্দ কেজরিওয়াল। সাবেক মুখ্যমন্ত্রী ভোট পেয়েছেন ২৫ হাজার ৯২৫টি। তাকে হারিয়েছেন বিজেপির প্রভেশ সিং ভার্মা ৩০ হাজার ২৪ ভোট পেয়ে। অর্থাৎ জয়ের ব্যবধান ৪ হাজার ৯৯ ভোট। এই কেন্দ্রে কংগ্রেস প্রার্থী ছিলেন সাবেক মুখ্যমন্ত্রী শীলা দীক্ষিতের ছেলে সন্দীপ দীক্ষিত। তিনি পেয়েছেন ৪ হাজার ৫০৪ ভোট। কংগ্রেস ও আপ জোটবদ্ধ থাকলে ও এই ভোট কেজরিওয়াল পেলে বিজেপিকে হারিয়ে তিনি জিততে পারতেন ৪০৫ ভোটে। কেজরিওয়ালের সাবেক উপমুখ্যমন্ত্রী মনীশ সিসোদিয়া হেরেছেন ৬০০ ভোটের ব্যবধানে। সেখানেও কংগ্রেস প্রার্থী এর বেশি ভোট পেয়েছেন। একই ছবি দেখা গেছে বাদলি, নাংলোই জাট, মাদিপুর, রোহিনী ও দ্বারকা বিধানসভা কেন্দ্রেও। আপ ও কংগ্রেসের প্রাপ্ত ভোট বিজেপি প্রার্থীদের জয়ের ব্যবধানের চেয়ে বেশি।

বিজেপিবিরোধী ‘ইন্ডিয়া’ জোটের শরিক হয়েও দিল্লিতে কংগ্রেস ও আপ যুযুধান হওয়ায় জোটের কোনো কোনো শরিক কংগ্রেসকে দোষী করছে। জম্মু–কাশ্মীরের শরিক ওমর আবদুল্লাহ সামাজিক মাধ্যমে লিখেছেন, ‘নিজেদের মধ্যে আরও লড়ুন।

সমাজবাদী পার্টির নেতা রামগোপাল যাদব বলেছেন, কংগ্রেস ভোট কেটে বিজেপির জয়ের পথ প্রশস্ত করেছে। এই ভোটে সমাজবাদী পার্টি ও তৃণমূল কংগ্রেস আপের হয়ে প্রচার করেছে। ঝাড়খন্ড মুক্তি মোর্চা আবার কংগ্রেসের পক্ষে প্রচার করেছে। সব মিলিয়ে দিল্লির ভোট ইন্ডিয়া জোটকে আরও নড়বড়ে করে তুলল।

তবে কংগ্রেস তার ভূমিকায় মোটেই লজ্জিত নয়। বরং তারা বলেছে, আপ হেরেছে তাদের কৃতকর্মের দোষে। কংগ্রেস মুখপাত্র সুপ্রিয়া শ্রীনাতে বলেছেন, আপকে জেতানোর দায় ও দায়িত্ব কংগ্রেসের নয়। দিল্লি এমনই একটা রাজ্য, যেখানে কংগ্রেস টানা ১৫ বছর শাসন করেছে। সেই রাজ্যে হারানো জমি কংগ্রেস অবশ্যই খুঁজবে। তিনি বলেন, আপকে জেতানো কংগ্রেসের কাজ নয়। কংগ্রেসের লক্ষ্য, সংগঠন শক্তিশালী করে হারানো সমর্থন ফিরে পাওয়া।

কংগ্রেসকে দুর্বল করেই দিল্লিতে আপের উত্থান। দলিত, অনগ্রসর, তফসিল জাতি, সংখ্যালঘু ও ঝুগ্গি–ঝোপড়িবাসীর মধ্যে একদা কংগ্রেসের যে সমর্থন ছিল, আপ সেখানেই ঘা মেরে মাথা তুলেছে।

সুপ্রিয়া শ্রীনাতে বলেছেন, যে যুক্তিতে কংগ্রেস আজ দিল্লিতে লড়াই করেছে, আপ নেতৃত্বও অতীতে সেই যুক্তিতেই লড়াই করেছিল গোয়া, হরিয়ানা, গুজরাট, উত্তরাখন্ডে। আজ যারা কংগ্রেসকে দায়ী করছেন, তখন তারা কিন্তু আপকে অপরাধীর কাঠগড়ায় তোলেননি।

Jamuna Electronics

Logo

সম্পাদক : আবদুল হাই শিকদার

প্রকাশক : সালমা ইসলাম