দীর্ঘ সময় সিরিয়া শাসন করা স্বৈরশাসক বাশার আল-আসাদের অস্বিত্ব মুছে দিচ্ছে দেশটির বর্তমান প্রশাসন। এরই মধ্যে আসাদের রাজনৈতিক দল বাথ পার্টি বিলুপ্ত করার ঘোষণা দেওয়া হয়েছে। একইসঙ্গে সিরিয়ার সংবিধানও বাতিল করা হয়েছে।
এছাড়াও বিলুপ্ত করা হয়েছে সিরিয়ার সেনাবাহিনী। তালিকায় রয়েছে নিরাপত্তা বাহিনীসহ ছোট-বড় সব সশস্ত্র গোষ্ঠী। বৃহস্পতিবার অন্তর্বর্তী সরকারের প্রেসিডেন্ট আহমেদ আল-শারা জানিয়েছেন, গোটা দেশের সব ধরনের মানুষকে নিয়ে একটি ন্যাশনাল ডায়লগ কনফারেন্সের ব্যবস্থা করা হবে। তারপর সবাইকে নিয়ে একটি শক্তিশালী সরকার গঠন করা হবে। শুক্রবার এএফপির প্রতিবেদনে উঠে আসে এই তথ্য।
সিরিয়ার সাবেক স্বৈরশাসক বাশার আল-আসাদকে হটিয়ে গত বছরের ডিসেম্বরে ক্ষমতা দখল করে ইসলামপন্থি দল হায়াত তাহরির আল-শাম। বাশার আল-আসাদের উৎখাতের আগে ৬০ বছরেরও বেশি সময় ধরে সিরিয়া শাসন করেছিল বাথ পার্টি। ক্ষমতায় এসেই তার মূল লক্ষ্য ছিল ভঙ্গুর দেশটির অর্থনীতিকে আরও মজবুত করা। এছাড়া আসাদ আমলের নানা ধরনের কার্যকলাপেও পরিবর্তন আনছেন তারা। নতুন শাসকরা বর্তমান যেসব সরকারি চাকরিজীবী আছেন তাদের তিন ভাগের এক ভাগকে ছাঁটাই করার পরিকল্পনা করছেন। এছাড়া সরকারি প্রতিষ্ঠানগুলো বেসরকারি খাতে ছেড়ে দেওয়ারও ইচ্ছা আছে তাদের। সরকারি অর্থ অপচয় ও দুর্নীতি বন্ধে এমন উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে বলে দাবি দেশটির নতুন সরকারের। ইতোমধ্যে অনেকেকে ছাঁটাই করা হয়েছে। যারা চাকরি হারিয়েছেন তাদের বিক্ষোভও করতে দেখা গেছে।
আলজাজিরা বলছে, দামেস্কে একটি বৈঠকের সময় এই ঘোষণাগুলো দেওয়া হয়েছে। ৮ ডিসেম্বর বাশার আল-আসাদকে ক্ষমতা থেকে উৎখাতে আল-শারার এইচটিএসের সঙ্গে লড়াই করা সশস্ত্র গোষ্ঠীর কমান্ডাররা এই বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন। আলজাজিরার সংবাদদাতা ওসামা বিন জাভেদ বলেন, ‘(আল-শারা) তাদের আশ্বস্ত করার চেষ্টা করেছেন যে তারা শুধু প্রতিনিধিত্বই করবেন না বরং একটি নতুন সিরিয়ার অংশও হবেন তারা।’ অবশ্য সিরিয়ায় কবে নাগাদ নির্বাচন কবে হবে তা এখনো নিশ্চিত নয়। কারণ সিরিয়ার নির্বাচন অনুষ্ঠানের জন্য এখন পর্যন্ত কোনো সময়সূচি উল্লেখ করা হয়নি। আল-শারা এর আগে বলেছিলেন, যুদ্ধবিধ্বস্ত এই দেশটিতে নির্বাচন আয়োজন করতে চার বছরের মতো সময় লাগতে পারে।
এছাড়া গত বছরের ডিসেম্বরে সৌদি আরবের সম্প্রচারকারী আল আরাবিয়ার সঙ্গে আলাপকালে শারা বলেন, সম্ভবত চার বছর পর নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে কারণ দেশে যোগ্য ভোটারের সংখ্যা নির্দিষ্ট করার জন্য নতুন করে আদমশুমারি করা দরকার। যে কোনো অর্থবহ নির্বাচনের জন্য ব্যাপকভিত্তিক আদমশুমারি পরিচালনা করতে হবে বলেও সে সময় জানান তিনি। এর আগে সিরিয়ার ৪০ বছর বয়সি অর্থনীতিমন্ত্রী বাসিল আব্দেল হানান রয়টার্সকে বলেছেন, বর্তমানে তাদের রাষ্ট্রায়ত্ত ১০৭টি কোম্পানি রয়েছে। যেগুলোর প্রায় সবই লোকসান গুনছে। এগুলোর বেশিরভাগই বেসরকারি খাতে ছেড়ে দেওয়া হবে। তবে কোন কোন কোম্পানি বিক্রি করা হবে সেগুলোর নাম প্রকাশ করেননি তিনি। সিরিয়ার মূল রাষ্ট্রায়ত্ত কোম্পানিগুলোর মধ্যে তেল, সিমেন্ট এবং লোহার কারখানা রয়েছে।
অপরদিকে অর্থমন্ত্রী মোহাম্মদ আবাজিদ বলেছেন, কিছু কিছু সরকারি প্রতিষ্ঠান তৈরি করা হয়েছে শুধু সম্পদ আত্মসাৎ করার জন্য। এই প্রতিষ্ঠানগুলো বন্ধ করে দেওয়া হবে। তিনি জানান, তাদের ১৪ লাখ সরকারি চাকরিজীবী থাকলেও মাত্র ৯ লাখ কাজ করেন। আর বাকি ৪ লাখ কাজে আসেন না বা এগুলোর কোনো অস্তিত্ব নেই। এই চাকরিজীবীদের ছাঁটাই করা হবে বলে জানিয়েছেন তিনি। প্রশাসন উন্নয়নমন্ত্রী মোহাম্মদ আলসকাফ জানিয়েছেন, তাদের দেশ পরিচালনায় ৫ লাখ ৫০ হাজার থেকে ৬ লাখ সরকারি চাকরিজীবী প্রয়োজন। যার অর্থ এ মুহূর্তে যেসব চাকরিজীবী আছে তার অর্ধেককেই ছাঁটাই করা হতে পারে।