Logo
Logo
×

আন্তর্জাতিক

গাজার যুদ্ধবিরতি চুক্তি নিয়ে যে সতর্কবার্তা দিলেন বিশ্লেষকরা

নাজমুশ শাহাদাৎ

নাজমুশ শাহাদাৎ

প্রকাশ: ১৭ জানুয়ারি ২০২৫, ১০:৫০ পিএম

গাজার যুদ্ধবিরতি চুক্তি নিয়ে যে সতর্কবার্তা দিলেন বিশ্লেষকরা

অবরুদ্ধ গাজা উপত্যকায় দীর্ঘ ১৫ মাসের যুদ্ধের পর ইসরাইল এবং হামাসের মধ্যে যুদ্ধবিরতির চুক্তি কিছুটা আশাবাদ জাগিয়েছে। এই চুক্তি ইসরাইলি বন্দিদের মুক্তি এবং ফিলিস্তিনি বন্দিদের মুক্তির সম্ভাবনা তৈরি করেছে। 

তবে এই চুক্তি নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন বেশ কিছু বিশ্লেষক। তাদের আশঙ্কা, চুক্তিটি পরিকল্পনা অনুযায়ী কার্যকর হবে কিনা, তা নিয়ে সন্দেহ রয়েছে।

বিশ্লেষকদের মতে, যুদ্ধবিরতির চুক্তিটি তিনটি পর্যায়ে বিভক্ত করা হয়েছে। এই বিভাজনটিই মূলত চুক্তির শর্ত ভঙ্গ বা বিশেষ করে, চুক্তি থেকে ইসরাইলের পিছিয়ে যাওয়ার সম্ভাবনাকে উস্কে দিতে পারে। 

এই চুক্তির প্রথম পর্যায়ে ৪২ দিন ধরে কারাগারে বন্দি ও জিম্মিদের মুক্তি, ইসরাইলি সৈন্যদের জনবহুল এলাকা থেকে সরিয়ে নেওয়া এবং মানবিক সহায়তার পরিমাণ বাড়ানোর কথা বলা হয়েছে। পরবর্তী পর্যায়ে আরও কিছু সংখ্যক বন্দি বিনিময়, গাজা থেকে ইসরাইলি বাহিনীর সম্পূর্ণ প্রত্যাহার এবং একটি স্থায়ী যুদ্ধবিরতির ব্যবস্থা করা হবে।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ইসরাইলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু গত কয়েক মাস ধরেই এই যুদ্ধবিরতির বিরোধিতা করে আসছেন। এমনকি হামাসের সঙ্গে মীমাংসা করার পরিবর্তে তাদের ধ্বংস করতে চেয়েছেন। যে কারণে তিনি বন্দিদের মুক্তির পর হয়তো হামাসের বিরুদ্ধে পুনরায় আক্রমণ শুরু করতে পারেন। 

এছাড়া সাম্প্রতিক এই পদক্ষেপটি তার রাজনৈতিক অবস্থানকে শক্তিশালী করার জন্য হতে পারে। কারণ নেতানিয়াহুর জন্য একাধিক চ্যালেঞ্জ রয়েছে।

রাজনৈতিক চাপ এবং নেতানিয়াহুর অবস্থান

বিশ্লেষকরা মনে করছেন, নেতানিয়াহু এবং তার সরকার যুদ্ধবিরতি বিরোধী পদক্ষেপ নিতে পারে। কারণ তার রাজনৈতিক অবস্থান দুর্বল হতে পারে এবং ইসরাইলের ইহুদিবাদী মন্ত্রীরা, বিশেষ করে অর্থমন্ত্রী বেজালেল স্মোটরিচ এবং জাতীয় নিরাপত্তা মন্ত্রী ইতামার বেন গাভির এই যুদ্ধবিরতির বিরোধিতা করেছেন। তারা নেতানিয়াহুকে যুদ্ধবিরতির ব্যাপারে সম্মত না হতে চাপ দিচ্ছেন। যার ফলে ইসরাইলে সরকার ভেঙে যেতে পারে এবং নতুন নির্বাচন হতে পারে।

যুদ্ধবিরতির শর্তে অস্পষ্টতা

এদিকে বিশেষজ্ঞরা এই চুক্তির বিষয়টিকে ‘একটি তাত্ক্ষণিক বিরতি’ হিসেবে দেখছেন, যা দীর্ঘমেয়াদী শান্তি প্রতিষ্ঠায় বাধা সৃষ্টি করতে পারে। 

ফিলিস্তিনি আইনজীবী ডায়ানা বুটু বলেছেন, চুক্তির শর্তাবলী খুবই অস্পষ্ট, বিশেষ করে গাজা থেকে ইসরাইলের সেনা প্রত্যাহার প্রসঙ্গে। একটি শর্তে বলা হয়েছে, ইসরাইল গাজার সীমান্ত থেকে ৩০০ মিটার দূরে সরে যাবে। কিন্তু এটি ১৯৬৭ সালের সীমান্তে ফিরে যাবে কিনা, তা পরিষ্কার করা হয়নি। এ ধরনের অস্পষ্ট ভাষা ইসরাইলকে যুদ্ধবিরতি থেকে বেরিয়ে যাওয়ার সুযোগ দেবে।

ইহুদিবাদী মন্ত্রীদের প্রভাব এবং ইসরাইলের রাজনৈতিক অস্থিরতা

নেতানিয়াহুর সরকারের মধ্যে রাজনৈতিক অস্থিরতা দেখা যাচ্ছে। বিশেষ করে অর্থমন্ত্রী বেজালেল স্মোটরিচ এবং জাতীয় নিরাপত্তা মন্ত্রী ইতামার বেন গাভিরের মতো অতি ইহুদিবাদী মন্ত্রীরা ইসরাইলের যুদ্ধ চালিয়ে যাওয়ার পক্ষে মত দিয়ে যাচ্ছেন। তাদের এই অবস্থান ইসরাইলের অভ্যন্তরীণ রাজনীতিতে অনেক গুরুত্বপূর্ণ এবং তারা আবারও যুদ্ধবিরতির বিরুদ্ধে হুমকি দিচ্ছেন। 

এর ফলে, নেতানিয়াহু তার রাজনৈতিক স্থিতি রক্ষা করতে হয়তো যুদ্ধবিরতির চুক্তি বাতিল করতে বাধ্য হতে পারেন।

গাজার ভবিষ্যৎ এবং একক রাষ্ট্রের ধারণা

এই চুক্তির ফলে গাজার সার্বিক পরিস্থিতি কতটা পরিবর্তিত হবে, তা নিয়ে অনেকেই উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। গাজার ওপর ইসরাইলের নিয়ন্ত্রণ থাকলে হামাস তাদের ক্ষমতা পুনর্গঠন করতে পারে। আর ইসরাইলও যেকোনো পরিস্থিতিতেই গাজার নিরাপত্তা নিয়ন্ত্রণ ধরে রাখতে চাইবে। 

যেমনটা নেতানিয়াহু আগেই বলেছিলেন যে, ইসরাইলকে গাজা উপত্যকায় ‘সর্বাত্মক নিরাপত্তা নিয়ন্ত্রণ’ রাখতে হবে। আর এটাই ভবিষ্যতে রাজনৈতিক সমাধানকে বাধাগ্রস্ত করবে।

মার্কিন পরিকল্পনা ও ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষের (পিএ) ভূমিকা

এই যুদ্ধবিরতি চুক্তির প্রেক্ষাপটে যুক্তরাষ্ট্র ফাতাহ তথা ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষকে (পিএ) গাজায় ফিরিয়ে আনার পক্ষে কথা বলছে। যা গাজার পুনর্গঠন এবং রাজনৈতিক পুনঃসংযুক্তির দিকে একটি পদক্ষেপ হতে পারে। 

তবে ইসরাইল এই পদক্ষেপের বিরোধিতা করছে। কারণ এই পরিকল্পনা ফিলিস্তিনি রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার দিকে এগিয়ে নিয়ে যেতে পারে, যা নেতানিয়াহু চান না। দখলদার ইসরাইল মনে করে, যদি ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষ বা ফাতাহ আবার গাজায় ফিরে আসে, তাহলে তারা রাজনৈতিকভাবে শক্তিশালী হবে। যা ইসরাইলের জন্য চাপ সৃষ্টি করবে।

স্থায়ী শান্তির জন্য

বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, গাজায় একটি স্থায়ী শান্তির জন্য একটি রাজনৈতিক কাঠামোর প্রয়োজন। যা বর্তমান যুদ্ধবিরতির চুক্তি পূর্ণ করতে সাহায্য করবে। তাদের মতে, স্থায়ী শান্তি প্রতিষ্ঠার জন্য একতরফা যুদ্ধবিরতির চেয়ে অনেক বেশি কিছু প্রয়োজন। যেমন– রাজনৈতিক সমাধান এবং দীর্ঘমেয়াদী নিরাপত্তা ব্যবস্থা। সূত্র: আল-জাজিরা

ঘটনাপ্রবাহ: হামাস ইসরাইল যুদ্ধ


আরও পড়ুন

Jamuna Electronics

Logo

সম্পাদক : আবদুল হাই শিকদার

প্রকাশক : সালমা ইসলাম