Logo
Logo
×

আন্তর্জাতিক

ইতিহাসে যেভাবে নন্দিত ও নিন্দিত হয়ে থাকবেন জো বাইডেন

Icon

আন্তর্জাতিক ডেস্ক

প্রকাশ: ১৭ জানুয়ারি ২০২৫, ০৩:০৪ পিএম

ইতিহাসে যেভাবে নন্দিত ও নিন্দিত হয়ে থাকবেন জো বাইডেন

জো বাইডেন। ছবি: সংগৃহীত

আর মাত্র দিন দুই পর বিদায় নেবেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন। বাইডেন ইতিহাসের সেই ব্যক্তি হতে চেয়েছিলেন যিনি যুক্তরাষ্ট্রকে ট্রাম্পের হাত থেকে ‘রক্ষা’ করেছেন।  কিন্তু তার সেই ইচ্ছা আর পূরণ হলো না। বরং তিনি এখন ইতিহাসের সেই ব্যক্তি হয়ে থাকবেন যিনি ট্রাম্পের হাত থেকে ক্ষমতা নিয়ে পুনরায় তার হাতে ক্ষমতা হাস্তান্তর করে যাচ্ছেন। 

তবে ৮২ বছর বয়সি বাইডেনকে অন্যভাবেও মনে রাখা যেতে পারে। কেননা, ডেমোক্র্যাটরা কোভিড-১৯ মহামারী এবং ট্রাম্পের প্রথম চার বছরের বিশৃঙ্খলায় বিভক্ত অবস্থা থেকে দেশকে বের করে এনেছিল। 

আবার অনেকের কাছে ৪৬তম মার্কিন প্রেসিডেন্ট এমনভাবে সংজ্ঞায়িত হতে পারে যে, একজন ‘ভুতুড়ে চেহারা’র প্রেসিডেন্ট যিনি ট্রাম্পের বিরুদ্ধে বিপর্যয়কর বিতর্কে কথা বলতে পারেননি। যার কারণে তিনি নির্বাচন থেকে সরে যেতে বাধ্য হন আর তার স্থানে মনোনীত করেন ভাইস প্রেসিডেন্ট কমলা হ্যারিসকে। তবে ডেমোক্র্যাটিক প্রার্থী হিসেবে কমলা হ্যারিসের কাছে ট্রাম্পের প্রত্যাবর্তন ঠেকানো প্রায় অসম্ভব কাজ ছিল।

যদিও বাইডেন শেষ পর্যন্ত জোর দিয়ে বলেছেন, তিনি নির্বাচনে দাঁড়ালে ট্রাম্পকে পরাজিত করতে পারতেন।  কিন্তু তিনি এও স্বীকার করেছেন যে, তার খ্যাতি পুনরুদ্ধার করতে কিছুটা সময় লাগতে পারে।

বাইডেন তার বিদায়ী ভাষণে বলেন, ‘আমরা একসঙ্গে যা করেছি তার সম্পূর্ণ প্রভাব অনুভব করতে সময় লাগবে, কিন্তু বীজ রোপণ করা হয়েছে। ’

ঐতিহাসিক চ্যালেঞ্জ

২০২১ সালের জানুয়ারিতে বাইডেনের শপথ গ্রহণ ছিল একজন অবমূল্যায়িত রাজনীতিবিদের জন্য একটি অসাধারণ প্রত্যাবর্তন যিনি রাজনৈতিক প্রতিকূলতা এবং ব্যক্তিগত ‘ট্র্যাজেডি’ উভয়ের সঙ্গে লড়াই করে জীবন কাটিয়েছেন। 

২০২৪ সালে ট্রাম্পের নির্বাচনের আগ পর্যন্ত বাইডেন ছিলেন আমেরিকার সবচেয়ে বয়স্ক প্রেসিডেন্ট। তবে বারাক ওবামার ভাইস প্রেসিডেন্ট হওয়ার কারণে তিনি বেশি পরিচিতি পেয়েছিলেন। 

তিনি বেশ কিছু ঐতিহাসিক চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হন। তার মধ্যে অন্যতম ২০২১ সালের ৬ জানুয়ারি ক্যাপিটল হিলে ট্রাম্প সমর্থকদের হামলা।  একইসময়ে করোনার কারণে ভঙ্গুর মার্কিন অর্থনীতিরও হাল ধরতে হয় তাকে। 

তবে বাইডেন দ্রুতই কংগ্রেসের মাধ্যমে বিশাল মহামারী পুনরুদ্ধার প্রকল্প এবং বিশাল সবুজ বিনিয়োগ (গ্রিন ইনভেস্টমেন্ট) পরিকল্পনা জোরদার করেন।

তার আমলেই মার্কিন ইতিহাসে প্রথম কোনও কৃষ্ণাঙ্গ দক্ষিণ এশীয় ও নারী ভাইস প্রেসিডেন্ট হিসেবে কমলা হ্যারিস নিযুক্ত হন।

তবে সম্ভবত, বাইডেনের সবচেয়ে গর্বিত অর্জন ছিল ২০২২ সালে রাশিয়ার আক্রমণের বিরুদ্ধে ইউক্রেনকে সমর্থন এবং ২০২৩ সালে কিয়েভে তার গোপন সফর।

‘উঠে দাঁড়াও’

কিন্তু ২০২১ সালে আফগানিস্তান মার্কিন সেনা প্রত্যাহারের সঙ্গে সঙ্গে বাইডেনের জনপ্রিয়তা প্রাথমিকভাবে হ্রাস পায়।  সিএনএন-এর একটি জরিপে তার গ্রহণযোগ্যতা ছিল মাত্র ৩৬ শতাংশ।

তবে মহামারীর কারণে মুদ্রাস্ফীতি বেড়ে যাওয়ায় ছিল আমেরিকানদের কমলা হ্যারিসকে বাতিল করার অন্যতম কারণ।  এছাড়াও শিথিল সীমান্ত নীতির কারণে বাইডেনের আমলে রেকর্ড সংখ্যক অবৈধ অভিবাসী আমেরিকায় আসে আর এটিকে পুঁজি করে নির্বাচনী প্রচারণা চালিয়ে যায় ট্রাম্প। 

এছাড়াও গাজা যুদ্ধও ডেমোক্র্যাটদের পতনের অন্যতম কারণ। গাজায় গণহত্যা চালানো সত্ত্বেও ইসরাইলের প্রতি অটল সমর্থন থাকায় বাইডেনের ওপর ক্ষুব্ধ হয়েছিলেন অনেকেই। 

তবে এত কিছুর পরেও, বাইডেন বিশ্বাস করতেন যে তিনিই একমাত্র ব্যক্তি যিনি আবার ট্রাম্পকে হারাতে পারবেন।

২৯ বছর বয়সে মার্কিন সিনেটর নির্বাচিত হওয়ার কয়েকদিন পরেই ১৯৭২ সালে একটি গাড়ি দুর্ঘটনায় জো বাইডেনের স্ত্রী ও শিশু কন্যা নিহত হন।  পরে তিনি জিল বাইডেনকে বিয়ে করেন। 

এরপর ২০১৫ সালে মস্তিষ্কের ক্যান্সারে তার বড় ছেলে বিউর মৃত্যু এবং তার ছোট ছেলে হান্টারের মাদক ও আইনি জটিলতা- এসব নিয়ে ব্যক্তিগত জীবনে কখনোই স্বাচ্ছন্দ্যে ছিলেন না তিনি। 

তিনি প্রায়শই তার বাবার মন্ত্রটি উদ্ধৃত করতেন যা তার ব্যক্তিগত জীবনেও দেখা যায় ‘যখন তুমি পড়ে যাবে, তখন আবার উঠে দাঁড়াও। ‘

'আমেরিকার জাদু'

জীবনে বহু প্রতিকূলতা পার করে আসলেও বয়স এমন একটি যুদ্ধ ছিল যেখানে তিনি কখনো জিতততে পারেননি।  বয়সের কারণে নানা শারিরীক জটিলতা নিয়ে বারবার তিনি উপহাসের শিকার হয়েছেন।  তার প্রতিদ্বন্দ্বী জো বাইডেন তাকে ‘ঘুমন্ত জো’ বলে অভিহিত করেছেন বারবার। 

এয়ার ফোর্স ওয়ানের সিঁড়িতে ওর বাইক থেকে নেমে প্রতিটি হোঁচট খাওয়া -বারবার প্রচারিত হয়েছে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে। 

রিপাবলিকানদের আক্রমণ ও ডেমোক্র্যাটিকদের সন্দেহ সত্ত্বেও বাইডেন ২০২৩ সালে ঘোষণা দেন পুনরায় নির্বাচন করার। যদিও শেষ পর্যন্ত তিনি তার সিদ্ধান্ত থেকে সরে আসেন।  আর আগামী ২০ জানুয়ারি তিনি যুক্তরাষ্ট্রের দায়িত্ব ট্রাম্পের হাতে দিয়ে অবসর নেবেন। 

আর যদি বাইডেনের ৫০ বছরের রাজনৈতিক জীবন এখানেই শেষ হয়ে যায় তিনি হাজার হতাশার মধ্যেও উজ্জ্বল একটি দিক দেখতে পেয়েছিলেন। 

তার মতে, ‘শুধুমাত্র আমেরিকাতেই আমরা বিশ্বাস করি যে যেকোনো কিছু সম্ভব। যেমন একটি ছোট বাচ্চা যার জীবন শুরু হয় তোতলানো অবস্থায়... আর তিনি প্রেসিডেন্ট হিসেবে ওভাল অফিসে বসেন।’

তথ্যসূত্র: এনডিটিভি

Jamuna Electronics

Logo

সম্পাদক : আবদুল হাই শিকদার

প্রকাশক : সালমা ইসলাম