দ্য টাইমসের প্রতিবেদন
আলোকচিত্রে পুতিন-হাসিনার সঙ্গে টিউলিপ, তোপের মুখে স্টারমার
আন্তর্জাতিক ডেস্ক
প্রকাশ: ১৫ জানুয়ারি ২০২৫, ১০:২৮ পিএম
টিউলিপ সিদ্দিকের আর্থিক দুর্নীতির অভিযোগ তদন্ত করেছেন মন্ত্রিসভার সদস্যদের মানদণ্ডবিষয়ক ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রীর উপদষ্টো স্যার লরি ম্যাগনাস। সময় স্বল্পতা ও প্রয়োজনীয় কাগজপত্রের অভাবে তিনি কোনো সিদ্ধান্তে উপনীত হতে ব্যর্থ হয়েছেন।
প্রধানমন্ত্রীর কাছে দেওয়া চিঠিতে লরি বলেছেন, টিউলিপের বিরুদ্ধে মন্ত্রিত্বের মানদণ্ড লঙ্ঘন করার কোনো প্রমাণ মেলেনি। তবে তিনি (টিউলিপ) একেবারে নির্দোষ এ কথাও বলা যাচ্ছে না।
মূলত এ কারণেই যুক্তরাজ্যের অর্থ মন্ত্রণালয়ের অর্থনীতিবিষয়ক মন্ত্রীর পদ ছাড়তে হয়েছে টিউলিপকে। তদন্তে সম্পূর্ণ অব্যাহতি পেলে হয়তো তার মন্ত্রিত্ব টিকে যেত। এক প্রতিবেদনে এমন তথ্যই দিয়েছে দ্য টাইমস।
এদিকে দ্য গার্ডিয়ানের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, টিউলিপ পদত্যাগ করার পর এবার নিজ দলের সদস্যদের তোপের মুখে পড়েছেন প্রধানমন্ত্রী স্টারমার। তিনি টিউলিপের খুব কাছের বন্ধু হিসাবে পরিচিত। লেবার এক এমপি বলেছেন, টিউলিপকে মন্ত্রী বানানোর সদ্ধিান্ত ছিল আত্মঘাতী।
অন্যদিকে বিরোধীদলীয় নেত্রী কেমি বাডেনোচ প্রধানমন্ত্রীকে দুর্বল হিসাবে অভিহিত করেছেন। তিনি প্রশ্ন তুলেছেন, টিউলিপের সঙ্গে ব্যক্তিগত বন্ধুত্ব থাকায় তিনি তার পদত্যাগের বিষয়টি বিলম্বিত করেছেন কি না।
তবে দেশটির ট্রেজারির প্রধান সেক্রেটারি ড্যারেন জোনস টাইমস রেডিওকে বলেন, আমি মনে করি না প্রধানমন্ত্রীর বিবেচনা নিয়ে কোনো প্রশ্ন আছে।
দ্য টাইমসের প্রতিবেদনে আরও বলা হয়েছে, স্যার লরি বলেছেন, বাংলাদেশের শাসনকাঠামোর সঙ্গে পরিবারের সদস্যদের সম্পৃক্ততা যে টিউলিপের ও লেবার সরকারের সুনামের জন্য ঝুঁকির কারণ হতে পারে, সে বিষয়ে তিনি পর্যাপ্ত সতর্ক ছিলেন না।
লরি আরও বলেন, টিউলিপের বিরুদ্ধে যেসব দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছে, তার সপক্ষে টেকসই কোনো প্রমাণ পাওয়া যায়নি। তার বিরুদ্ধে আনা অভিযোগগুলোর মূলে রয়েছে- তিনি এমন ব্যক্তিদের কাছ থেকে একাধিক সম্পত্তি পেয়েছেন, যাদের সঙ্গে তার খালার রাজনৈতিক দল আওয়ামী লীগের সরাসরি সম্পর্ক রয়েছে।
লন্ডনের কিংস ক্রস এলাকায় টিউলিপ সিদ্দিককে একটি ফ্ল্যাট বিনামূল্যে দেওয়া হয়েছিল। আরেকটি ফ্ল্যাট টিউলিপের বোন উপহার পেয়েছিলেন। হ্যাম্পস্টেড এলাকার ওই ফ্ল্যাটে এক সময় টিউলিপ নিজেও বসবাস করতেন। পরে ফিঞ্চলে এলাকায় ২১ লাখ পাউন্ডের যেই বাড়িতে টিউলিপ থাকতেন, সেটাও তার খালার (শেখ হাসিনা) সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত বাংলাদেশি এক ব্যবসায়ীর মালিকানায় ছিল।
স্যার লরি বলেন, সম্পত্তিটি হাতবদলের ২০ বছর পেরিয়ে যাওয়ায় এটা নিশ্চিত করা যায়নি যে, ওই সময় এই প্রক্রিয়ায় সব আর্থিক ও করবিধি অনুসরণ করা হয়েছিল কিনা। এ বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়ার মতো সুনির্দষ্টি তথ্য পাওয়া যায়নি।
এদিকে ২০১৩ সালে তোলা একটি আলোকচিত্র নিয়ে ব্যাপক আলোচনা হচ্ছে। ওই আলোকচিত্রে রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন ও বাংলাদেশের সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা রয়েছেন। মা শেখ রেহানার সঙ্গে আছেন টিউলিপও। রাশিয়ার সঙ্গে বাংলাদেশের শতকোটি ডলারের অস্ত্র চুক্তি এবং পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণের চুক্তি সইয়ের সময় সেটি তোলা হয়েছিল।
রাশিয়ার সঙ্গে পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণের চুক্তির মধ্যস্থতায় টিউলিপ সিদ্দিক সহায়তা করেছিলেন কি না, সেটা তদন্ত করে দেখছে বাংলাদেশের কর্তৃপক্ষ। এই চুক্তির প্রেক্ষিতে টিউলিপের পরিবারের সদস্যদের প্রকল্পের অর্থ আত্মসাতের সম্ভাব্যতাও তদন্ত করা হচ্ছে।
যদিও টিউলিপ তদন্তকারী স্যার লরি ম্যাগনাসকে বলেছেন, তার ওই (রাশিয়া) সফরের উদ্দেশ্য ছিল পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে যোগ দেওয়া, আর শহরটির (মস্কো) পর্যটনকেন্দ্রগুলোকে ভ্রমণের মাধ্যমে উপভোগ করা।
তদন্তে লরি মূলত যুক্তরাজ্যের মন্ত্রীদের জন্য বেঁধে দেওয়া নিয়মশৃঙ্খলার ওপর জোর দিয়েছেন। তিনি যাচাই করার চষ্টো করেছেন, টিউলিপ আদতে মন্ত্রিত্বের মানদণ্ড লঙ্ঘন করেছেন কি না। কিংবা টিউলিপের কোনো কাজ এই মানদণ্ডের সঙ্গে সাংঘর্ষিক কি না। লরি এক্ষেত্রে কোনো ব্যত্যয় খুঁজে পাননি। তবে প্রকৃতিগতভাবে এই তদন্ত ছিল সীমিত।
মাত্র আট দিনে তদন্ত শেষ করতে হওয়ায় তিনি টিউলিপের সম্পত্তির কর ব্যবস্থাপনা এবং তহবিলের উত্স নিয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়ার মতো পর্যাপ্ত তথ্য-উপাত্ত পাননি।