রুশ জ্বালানি খাতের ওপর মার্কিন প্রশাসনের নতুন নিষেধাজ্ঞা
আন্তর্জাতিক ডেস্ক
প্রকাশ: ১১ জানুয়ারি ২০২৫, ১০:০২ এএম
রাশিয়ার জ্বালানি খাত এবং এর তেলের ট্যাঙ্কারগুলোর ওপর নতুন নিষেধাজ্ঞা ঘোষণা করেছে যুক্তরার্ষ্ট্র। যা ইউক্রেনে মস্কোর যুদ্ধের প্রতিক্রিয়ায় রাশিয়ার অর্থনীতিকে দুর্বল করার জন্য বাইডেন প্রশাসনের চূড়ান্ত প্রচেষ্টা বলে মনে করা হচ্ছে।
শুক্রবার (১০ জানুয়ারি) নিউইয়র্ক টাইমস এক প্রতিবেদনে এ খবর দিয়েছে।
এতে বলা হয়েছে, প্রেসিডেন্ট বাইডেন রাশিয়ার জ্বালানি খাতের উপর নিষেধাজ্ঞা আরোপে সতর্ক ছিলেন, কারণ এর রপ্তানি বন্ধ করলে বিশ্বব্যাপী গ্যাসোলিনের দাম বেড়ে যেতে পারে।
তবে, মার্কিন কর্মকর্তারা বলেছেন বিশ্বজুড়ে তেলের সরবরাহ বৃদ্ধি এবং মুদ্রাস্ফীতি কমায় রাশিয়ার তেল শিল্পের উপর আরও চাপ প্রয়োগের সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে। বর্তমান ইউক্রেন যুদ্ধ চতুর্থ বছরে প্রবেশ করছে।
ইউক্রেনের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণার পর থেকে যুক্তরাষ্ট্র, ইউরোপসহ পশ্চিমের দেশগুলো রাশিয়ার ওপর কয়েক শ বাণিজ্যিক নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে। এসব নিষেধাজ্ঞার ধাক্কায় প্রাথমিকভাবে রাশিয়ার কিছুটা ক্ষতি হলেও পরবর্তীকালে তারা অনেকটা সামলে নেয়।
পশ্চিমা মিত্রদের সমন্বিত প্রচেষ্টা সত্ত্বেও রাশিয়ার অর্থনীতি পতন এড়িয়ে গেছে। যা অনেক সমালোচক পূর্বাভাস দিয়েছিলেন। নতুন এই নিষেধাজ্ঞায় মার্কিন মিত্ররা কতটুকু লাভবান হবে তা স্পষ্ট নয়। আর বাইডেন প্রশাসন এই পদক্ষেপগুলো ট্রাম্প প্রশাসনের উপর নিষেধাজ্ঞা বাস্তবায়নের দায়ভার চাপাবে।
বাইডেন প্রশাসনের সিনিয়র কর্মকর্তারা বলেছেন, তারা আশা করছেন এই পদক্ষেপগুলো পরবর্তী প্রশাসনকে রাশিয়ার সাথে যুদ্ধের অবসান নিয়ে আলোচনার জন্য অতিরিক্ত কূটনৈতিক ফায়দা দেবে।
ট্রেজারি সচিব জ্যানেট এল. ইয়েলেন এক বিবৃতিতে বলেছেন, যুক্তরাষ্ট্র ইউক্রেনের বিরুদ্ধে রাশিয়ার নির্মম এবং অবৈধ যুদ্ধের জন্য অর্থায়নের প্রধান উৎসের বিরুদ্ধে ব্যাপক পদক্ষেপ নিচ্ছে। আজকের (শুক্রবার) নিষেধাজ্ঞার মাধ্যমে আমরা রাশিয়ার তেলের বাণিজ্যের সাথে সম্পর্কিত ঝুঁকি বাড়াচ্ছি, যার মধ্যে রয়েছে শিপিং এবং আর্থিক সহায়তা যা রাশিয়ার তেল রপ্তানির সাথে সম্পর্কযুক্ত।
এই নিষেধাজ্ঞার আওতায় সংশ্লিষ্ট সংস্থাগুলোকে আগামী ১২ মার্চ পর্যন্ত তাদের জ্বালানি সংশ্লিষ্ট লেনদেন শেষ করার সময়সীমা দেওয়া হয়েছে।
নিউইয়র্ক টাইমস জানিয়েছে, নিষেধাজ্ঞার ঘোষণার আগে শুক্রবার বিশ্ববাজারে তেলের দাম বেড়ে যায়। কারণ নতুন নিষেধাজ্ঞা, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে চরম আবহাওয়া এবং ক্যালিফোর্নিয়ার দাবানল, বৈশ্বিক জ্বালানি সরবরাহকে সীমিত করতে পারে বলে উদ্বেগ দেখা দিয়েছে।
নতুন নিষেধাজ্ঞা রাশিয়ার ছায়া ট্যাঙ্কার বহরের ১৮০টিরও বেশি জাহাজকে লক্ষ্য করেছে, যা মস্কো বিদ্যমান তেলের নিষেধাজ্ঞাগুলো এড়াতে ব্যবহার করেছে। এতে গ্যাজপ্রম নেফট এবং সুরগুটনেফতেগাজসহ দুই প্রধান রুশ তেল উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান এবং তাদের সহযোগী প্রতিষ্ঠানগুলোকে কালো তালিকাভুক্ত করা হয়েছে।
এই নিষেধাজ্ঞার আওতায় রাশিয়ার তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাস প্রকল্প, রুশ জ্বালানি কর্মকর্তারা এবং দেশটির জ্বালানি শিল্পকে সমর্থনকারী পরিষেবা সরবরাহকারীদের অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে।
মার্কিন নিষেধাজ্ঞা কার্যত কোনো ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানকে পশ্চিমা আর্থিক ব্যবস্থা থেকে বিচ্ছিন্ন করতে পারে।
বাইডেন প্রশাসন বলেছে, এটি রাশিয়ার তেল আয়কে উল্লেখযোগ্যভাবে দুর্বল করবে এবং রুশ অর্থনীতিকে প্রতি মাসে কয়েক বিলিয়ন ডলার ক্ষতি করবে। প্রশাসনের চিন্তাভাবনা নিয়ে আলোচনা করতে গিয়ে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক সিনিয়র কর্মকর্তারা, এই নিষেধাজ্ঞার প্যাকেজটিকে রাশিয়ার জ্বালানি খাতে এখন পর্যন্ত সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বলে বর্ণনা করেছেন।