Logo
Logo
×

আন্তর্জাতিক

গ্রিনল্যান্ড আসলে কার? কেন এতো গুরুত্বপূর্ণ?

Icon

আন্তর্জাতিক ডেস্ক

প্রকাশ: ১০ জানুয়ারি ২০২৫, ০১:২৭ পিএম

গ্রিনল্যান্ড আসলে কার? কেন এতো গুরুত্বপূর্ণ?

ছবি: সংগৃহীত

গ্রিনল্যান্ড কিনতে মরিয়া হয়ে উঠেছেন নবনির্বাচিত মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। দ্বীপটি নিয়ে তিনি তার দৃষ্টিভঙ্গি স্পষ্ট করে জানিয়েছেন, তিনি গ্রিনল্যান্ড কিনতে চান।  এখন প্রশ্ন উঠেছে উত্তর আমেরিকা এবং রাশিয়ার মধ্যে এবং ইউরোপের উত্তর-পশ্চিমে অবস্থিত এই দ্বীপটি আসলে কার? এটি কেনার জন্য  ট্রাম্প কার সঙ্গে আলোচনা করছেন?

চলুন তাহলে জেনে নেওয়া যাক এসব প্রশ্নের উত্তর। 

১. ঐতিহাসিকভাবে, গ্রিনল্যান্ড বেশ কয়েকটি দেশের অংশ ছিল।  যদিও বহু শতাব্দী আগে আদি বসতি স্থাপনকারীরা এই দ্বীপে পৌঁছায়।  তবে মাত্র কয়েক শতাব্দী আগেই তারা এই অঞ্চলের ওপর নিজেদের মালিকানা দাবি করেন। 

২.  যখন ডেনমার্ক এবং নরওয়ে ডানো-নরওয়েজিয়ান রাজ্য (Det dansk-norske rige) নামে পরিচিত একটি দেশ ছিল তখন দেশটির অভিযাত্রী এবং বসতি স্থাপনকারীরা গ্রিনল্যান্ডে জাহাজে করে যেত, যা তখন ‘কালাল্লিট নুনাত’ নামে পরিচিত ছিল এবং এই অঞ্চলের উপর সার্বভৌমত্ব দাবি করত।  ১৮১৪ সালে যখন ডেনমার্ক এবং নরওয়ে আলাদা হয়ে যায়, তখন তাদের মধ্যে একমত হয় যে গ্রিনল্যান্ডের উপনিবেশ এখন থেকে ডেনিশ রাজার কাছে হস্তান্তর করা হবে।

৩.  ডেনমার্ক নাৎসি জার্মানির দখলে আসার আগ পর্যন্ত গ্রিনল্যান্ড প্রায় ১৪০ বছর ধরে ডেনিশ রাজার অধীনে ছিল।  'অপারেশন ওয়েসেরুবাং’ নামে নাৎসিরা ১৯৪০ সালের ৯ এপ্রিল ডেনমার্ক এবং নরওয়ে আক্রমণ করে।  একদিনের মধ্যেই ডেনমার্ক আত্মসমর্পণ করে এবং নাৎসিরা তা দখল করে নেয়। এ সময়ে গ্রিনল্যান্ড কিছু সময়ের জন্য হিটলারের ভূখণ্ডের অংশ হয়ে যায়। কিন্তু গ্রিনল্যান্ডের কৌশলগত অবস্থান জেনে, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র দ্রুত পদক্ষেপ নেয় এবং হিটলারের বাহিনী মাটিতে নামার আগেই গ্রিনল্যান্ডের নিয়ন্ত্রণ নেয়।

৪. গ্রিনল্যান্ড মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের অংশ হয়ে ওঠার পর ১৯৪০ থেকে ১৯৪৫- এই পাঁচ বছর দেশটির নিয়ন্ত্রণে ছিল। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের শেষে হিটলারের মৃত্যুর পাঁচ দিন পর ১৯৪৫ সালের ৫ মে ডেনমার্ক জার্মান দখল থেকে মুক্ত হয়।  কয়েক মাস পর যুক্তরাষ্ট্র গ্রিনল্যান্ডকে ডেনমার্কে ফিরিয়ে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেয়।   এরপর ১৯৫৩ সালে, ডেনমার্ক আনুষ্ঠানিকভাবে গ্রিনল্যান্ডকে তার দেশের অংশ হিসেবে অন্তর্ভুক্ত করে। এর ফলে গ্রিনল্যান্ডের জনগণ ডেনমার্কের নাগরিক হয়ে ওঠে।

৫. কিন্তু ডেনমার্ক থেকে প্রায় তিন হাজার কিলোমিটার দূরে নরওয়েজিয়ান সাগরে (আটলান্টিক মহাসাগর) অবস্থিত প্রশাসন সমস্যা হয়ে দাঁড়ায়।  গ্রিনল্যান্ডের মানুষ এতে খুশি ছিল না।  ১৯৭৯ সালের ১ মে  ডেনমার্ক গ্রিনল্যান্ডের বাসিন্দাদের কাছে শাসনভার অনেকটাই হস্তান্তর করার সিদ্ধান্ত নেয়, যাতে তারা 'স্বরাষ্ট্র শাসন' করতে পারে।  কিন্তু ডেনমার্ক বৈদেশিক বিষয় এবং নিরাপত্তার সমস্ত বিষয় নিজের কাছেই রাখে - যা আজও অব্যাহত রয়েছে।

৬. তবে গ্রিনল্যান্ডের নিজস্ব সংসদ ‘ইনাতসিসার্টুট’ ডেনিশ সংসদ ‘ফোলকেটিং’-এ তাদের  দুজন সংসদ সদস্য পাঠায়।  সময়ের সঙ্গে সঙ্গে  গ্রিনল্যান্ডবাসী সম্পূর্ণ স্বাধীনতার দাবি করতে শুরু করে। রাশিয়ার সঙ্গে শীতল যুদ্ধ যখন তুঙ্গে তখন ডেনমার্ক আমেরিকার সাথে চুক্তি করার পর ব্যাপক ক্ষোভের সৃষ্টি হয় যাতে আমেরিকাকে গ্রিনল্যান্ডে তার সামরিক ঘাঁটি 'পিটুফিক' এবং ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র কমান্ড এবং প্রাথমিক সতর্কতা ব্যবস্থা স্থাপনের অনুমতি দেওয়া হয়।  আমেরিকা গ্রিনল্যান্ডে তার পারমাণবিক অস্ত্রের মজুদের বিশাল পরিমাণ মজুদ করতে শুরু করে এবং ১৯৬৮ সালে চারটি হাইড্রোজেন বোমাসহ একটি মার্কিন সামরিক জেট গ্রিনল্যান্ডে বিধ্বস্ত হয়।

৭. গ্রিনল্যান্ড এবং ডেনমার্কের মধ্যে সম্পর্ক স্বরাষ্ট্র শাসন কার্যকর হওয়ার আগেই খারাপ হয়ে গিয়েছিল যখন ১৯৬০ও ৭০ এর দশকে দেশজুড়ে একটি গণ-গর্ভনিরোধক কেলেঙ্কারি ছড়িয়ে পড়ে।  এর জন্য গ্রিনল্যান্ডের প্রধানমন্ত্রী ডেনমার্ককে দোষারোপ করেছিলেন এটিকে 'গণহত্যা' বলে অভিহিত করেছিলেন।

৮. আজও গ্রিনল্যান্ড ঔপনিবেশিক শাসন থেকে সম্পূর্ণ মুক্ত নয় কারণ ডেনমার্ক দ্বীপটির নিরাপত্তা এবং পররাষ্ট্র নীতি নিয়ন্ত্রণ করে। এর অর্থ হল ডোনাল্ড ট্রাম্পের সাথে যেকোনো সম্ভাব্য আলোচনা ডেনমার্কের মাধ্যমে পরিচালিত হবে, সরাসরি গ্রিনল্যান্ডে নয়। 

ডোনাল্ড ট্রাম্প স্পষ্টভাবে বলেছেন যে গ্রিনল্যান্ডের উপর যুক্তরাষ্ট্রের পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ প্রয়োজন এবং দ্বীপটির মালিকানা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের জন্য ‘অতীব প্রয়োজনীয়’ বলে বর্ণনা করেছেন ট্রাম্প।  তবে গ্রিনল্যান্ডের দিকে ট্রাম্পের নজর এবারই প্রথম নয়।  এর আগে ২০১৯ সালেও তিনি তার ঘনিষ্ঠ উপদেষ্টাদের গ্রিনল্যান্ড সম্পূর্ণরূপে কেনার উপায় সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করেছিলেন।  তিনি সেসময় এটিকে ‘মূলত একটি বৃহৎ রিয়েল এস্টেট চুক্তি’ বলে অভিহিত করেছিলেন।

গ্রিনল্যান্ড একটি অত্যন্ত সম্পদসমৃদ্ধ দ্বীপ।  এটি তেল ও গ্যাসের মজুদে সমৃদ্ধ। এখানে সবুজ প্রযুক্তির (গ্রিন টেকনোলজি) জন্য প্রয়োজনীয় বিরল মাটির উপকরণ এবং কাঁচামালের বিশাল সরবরাহ রয়েছে।  চীন গ্রিনল্যান্ডে তার উপস্থিতি বাড়াতেও চাইছে।  বেইজিং বিশ্বের গুরুত্বপূর্ণ কাঁচামালের রপ্তানির বেশিরভাগ অংশ নিয়ন্ত্রণ করছে এবং রপ্তানিতে নিষেধাজ্ঞা আরোপের হুমকি দিচ্ছে।  তবে, ওয়াশিংটন এ পরিস্থিতি এড়াতে চায়। ট্রাম্প মনে করেন, গ্রিনল্যান্ড কিনলে তিনি প্রযুক্তি এবং বিরল উপকরণের দিক থেকে বিশ্বে চীনের আধিপত্য বিস্তার বন্ধ করতে পারবেন। 

সূত্র: এনডিটিভি

Jamuna Electronics

Logo

সম্পাদক : আবদুল হাই শিকদার

প্রকাশক : সালমা ইসলাম