
দেশজুড়ে রাজনৈতিক অস্থিরতার মধ্যেই কানাডার প্রধানমন্ত্রীর পদ ছাড়ার ঘোষণা দিয়েছেন জাস্টিন ট্রুডো। গত কয়েক সপ্তাহ চাপে থাকার পর শেষমেশ সোমবার মেয়াদ শেষ হওয়ার আগেই পদত্যাগের ঘোষণা দেন তিনি।
কয়েক বছর আগেও জনপ্রিয়তার শীর্ষে থাকা ট্রুডো ক্রমেই ভোটারদের আস্থা হারাতে থাকেন। দলের অভ্যন্তরেও বাড়তে থাকে চাপ। বিরোধী ও দলীয় নেতাদের ক্রমবর্ধমান অসন্তোষের মুখে দলের নেতৃত্ব ও প্রধানমন্ত্রিত্ব ছাড়তে বাধ্য হন ট্রুডো। মঙ্গলবার এ খবর জানিয়েছে ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসি।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, নিজ দল কানাডার লিবারেল পার্টির নেতৃত্ব থেকেও সরে দাঁড়াচ্ছেন ট্রুডো। এ ঘোষণার মধ্য দিয়ে ট্রুডোর রাজনৈতিক জীবনের দীর্ঘ এক অধ্যায়ের অবসান ঘটতে যাচ্ছে।
২০১৩ সালে এমন একসময় তিনি লিবারেল পার্টির দায়িত্ব নিয়েছিলেন, যখন দলটি গভীর সঙ্কটে নিমজ্জিত ছিল। সে সময় কানাডার হাউজ অব কমন্সে তৃতীয় অবস্থানে নেমে গিয়েছিল লিবারেল পার্টি। সেখান থেকে দলকে টেনে তুলে ২০১৫ সালে ক্ষমতায় বসেনট্রুডো।
এরপর থেকে টানা গত নয় বছর ধরে কানাডার প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করে আসছেন লিবারেল পার্টির এই নেতা। তবে হঠাৎই তার জনপ্রিয়তায় দস নামে। গত ডিসেম্বর মাসের জনমত সমীক্ষার ফলাফলে দেখা গেছে, কানাডার নাগরিকদের মধ্যে মাত্র ২২ শতাংশ ট্রুডোর নেতৃত্বে ভরসা রাখেন।
২০১৫ সালে তিনি প্রধানমন্ত্রী হওয়ার পর গত নয় বছরে জনসমর্থন এত কমে যাওয়ার ইঙ্গিত দেখা যায়নি। ফলে তিনি যদি লিবারেল পার্টির নেতৃত্বে থাকেন তাহলে দলটি আগামী নির্বাচনে হেরে যাওয়ার আশঙ্কা দেখা দেয়। যার জেরে বিষয়টি নিয়ে বিরোধীদের পাশাপাশি নিজ দলের ভেতরও বেশ চাপে ছিলেন ট্রুডো।
লিবারেল পার্টির সদস্যরা গত গ্রীষ্মকাল থেকেই প্রধানমন্ত্রীকে ইস্তফা দেওয়ার জন্য চাপ দিয়ে আসছিলেন। সংবাদ সম্মেলনেট্রুডো বলেছেন, নিজের পরিবার ও ঘনিষ্ঠজনদের সঙ্গে দীর্ঘ আলাপ-আলোচনা করার পর তিনি পদত্যাগের সিদ্ধান্ত নিয়েছেন।
তবে লিবারেল পার্টি নতুন একজন নেতা নির্বাচিত না করা পর্যন্ত তিনি নিজ পদে দায়িত্ব পালন করবেন।
এদিকে ট্রুডোর পদত্যাগের পরপরই সম্ভাব্য কয়েকজন প্রতিদ্বন্দ্বীর নাম আলোচনায় এসেছে। জাস্টিনট্রুডো বলেছেন, সদস্যদের ভোটে লিবারেল পার্টি তার উত্তরসূরি বাছাই করবে।
ক্রিস্টিয়া ফ্রিল্যান্ড
কানাডার সাবেক উপপ্রধানমন্ত্রী ও অর্থমন্ত্রী ক্রিস্টিয়া ফ্রিল্যান্ড। তিনি লিবারেল পার্টির নেতা হওয়ার জন্য প্রার্থিতা করবেন বলে ধারণা করা হচ্ছে।
মার্ক কার্নি
মার্ক কার্নি ছিলেন ব্যাংক অব কানাডার গভর্নর। ব্যাংক অব ইংল্যান্ডেরও নেতৃত্ব দিয়েছিলেন তিনি। ফ্রিল্যান্ডকে সরিয়ে অর্থ মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব দিতে গোপনে তার সঙ্গে যোগাযোগ করেছিলেন ট্রুডো।
মেলানি জলি
২০২১ সাল থেকে কানাডার শীর্ষ কূটনীতিক হিসাবে দায়িত্ব পালন করেছেন মেলানি জলি। কানাডার ইন্দো-প্যাসিফিক কৌশলের নেতৃত্বও দিয়েছিলেন তিনি।
ডমিনিক লেব্লাঙ্ক
ক্রিস্টিয়া ফ্রিল্যান্ড পদত্যাগ করার পর কানাডার অর্থমন্ত্রী হন ডমিনিক লেব্লাঙ্ক। তিনি জাস্টিনট্রুডোর দীর্ঘদিনের বন্ধু। অটোয়ায়ট্রুডো ও তার ভাইদের দেখাশোনা করতেন ডমিনিক।
অনিতা আনন্দ
কানাডার পরিবহণমন্ত্রী অনিতা আনন্দ। তাকে প্রায়ই লিবারেল ককাসের অন্যতম উচ্চাকাক্সক্ষী সদস্যা হিসাবে বিবেচনা করা হয়।
ফ্রাঁসোয়া-ফিলিপ শ্যাম্পেন
বিজ্ঞান ও শিল্পমন্ত্রী ফ্রাঁসোয়া-ফিলিপ শ্যাম্পেন দলের শীর্ষ পদে নজর রাখছেন বলে জানা গেছে। ব্যবসায়িক বুদ্ধিমত্তার কারণে বেশ সুনাম কুড়িয়েছেন তিনি।