নবনির্বাচিত প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের প্রতি মার্কিন ধনকুবের জেফ বেজোসের আনুগত্যের একটি ব্যঙ্গচিত্র প্রকাশে অস্বীকৃতি জানানোয় ওয়াশিংটন পোস্ট থেকে পদত্যাগ করেছেন পুলিৎজার জয়ী কার্টুনিস্ট অ্যান টেলনেস।

টেলনেস তার কার্টুনে ওয়াশিংটন পোস্টের মালিক বেজোসসহ আরো কয়েকজন টেক জায়ান্টদের ব্যঙ্গচিত্র এঁকেছিলেন। সেখানে যুক্তরাষ্ট্রে সদ্য নির্বাচিত প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের মূর্তির সামনে হাঁটু গেড়ে বসে থাকতে দেখা যায় তাদের।

ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসির এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ওয়াশিংটন পোস্টে ওই কার্টুন ছাপতে রাজি না হওয়ার বিষয়টি ‘মুক্ত সাংবাদিকতার জন্য বিপজ্জনক’ বলে মন্তব্য করেছেন অ্যান টেলনেস। তার ভাষায়, এ ঘটনা সংবাদপত্রের পরিস্থিতি বদলে দেবে।

ওয়াশিংটন পোস্টের সম্পাদকীয় পাতার সম্পাদক ডেভিড শিপলি অবশ্য বলেছেন, মালিককে নিয়ে উপহাস করায় ওই কার্টুন ছাপা হয়নি–এমন ধারণা ঠিক না। তার দাবি, তিনি ওই কার্টুনটি না ছাপার সিদ্ধান্ত নেন পুনরাবৃত্তি এড়াতে।

ওই কার্টুনে জেফ বেজোস ছাড়াও মেটার প্রতিষ্ঠাতা মার্ক জাকারবার্গ এবং ওপেনএআই-এর স্যাম অল্টম্যানকে হাঁটু গেড়ে ট্রাম্পের মূর্তির সামনে বসে নৈবদ্য হিসেবে টাকার ব্যাগ তুলে ধরতে দেখা যায়।

এছাড়াও ওই কার্টুনে মিকি মাউসকেও উল্টে পড়ে থাকতে দেখা যায়। ডিজনির মালিকানাধীন এবিসি নিউজ গত মাসে মানহানির এক মামলায় আপস রফা করতে ট্রাম্পকে ১৫ মিলিয়ন ডলার দিতে সম্মত হয়।

শুক্রবার অনলাইনে পোস্ট করা পদত্যাগের ঘোষণায় অ্যান টেলনেস বলেন, তিনি ২০০৮ সাল থেকে ওয়াশিংটন পোস্টে কাজ করে আসছিলেন। এই সময়ের মধ্যে আমি আমার কলম দিয়ে যাদের এঁকেছি, তাদের কারো কারণে কখনো আমার কার্টুনকে হত্যা করতে হয়নি। 

তিনি বলেন, এবার যে কার্টুনকে হত্যা করা হল, সেখানে বিলিয়নেয়ার প্রযুক্তি এবং মিডিয়ার নির্বাহীদের সমালোচনা করা হয়েছে, যারা নবনির্বাচিত প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের সুনজরে আসার জন্য সম্ভব সবকিছু করে আসছেন।

অ্যান টেলনেস বলেন, তার ওই কার্টুনে সেই ব্যক্তিদের সমালোচনা করা হয়েছে, সরকারের সঙ্গে যাদের লোভনীয় চুক্তি রয়েছে এবং নিয়ম ভাঙতে পারলে যাদের লাভ হওয়ার সম্ভাবনা আছে।

অন্যদিকে ডেভিড শিপলি এক বিবৃতিতে বলেছেন, আমি অ্যান টেলনেস এবং তিনি ওয়াশিংটন পোস্টকে যা দিয়েছেন, তার প্রতি শ্রদ্ধাশীল। কিন্তু আমি অবশ্যই তার ব্যাখ্যার সঙ্গে একমত নই। সব সম্পাদকীয় সিদ্ধান্তই খারাপ কিছুর প্রতিফলন নয়।

তিনি বলেছেন, আমি সেটা না ছাপার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম কারণ, একই বিষয়ে আমরা মাত্রই একটা নিবন্ধ প্রকাশ করেছি এবং আরো একটি নিবন্ধ প্রকাশ করব বলে ঠিক করে রেখেছি, যেটা আসলে ব্যাঙ্গাত্মক লেখা।

ওয়াশিংটন পোস্ট থেকে অ্যান টেলনেসের কার্টুন বাদ পড়ার ঘটনা এটাই প্রথম নয়। এর আগে ২০১৫ সালে সংবাদপত্রটি তার একটি স্কেচ প্রত্যাহার করে, যেখানে টেক্সাসের সেনেটর টেড ক্রুজের মেয়েকে বানর হিসাবে চিত্রিত করা হয়েছিল।

ওয়াশিংটন পোস্ট তখন দাবি করেছিল, শিশুদের এসব থেকে বাইরে রাখাই তাদের সম্পাদকীয় নীতি। 

জেফ বেজোস গত মাসে ঘোষণা দিয়েছিলেন, ট্রাম্পের অভিষেক অনুষ্ঠানের তহবিলে এক মিলিয়ন ডলার দান করবে তার কোম্পানি অ্যামাজন; তার সঙ্গে এক মিলিয়ন ডলার অনুদানও তিনি দেবেন।

প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে ট্রাম্পের জয়ের ঘটনাকে ‘অসাধারণ রাজনৈতিক প্রত্যাবর্তন’ হিসেবে বর্ণনা করেছিলেন বেজোস। ফ্লোরিডায় ট্রাম্পের মার-এ-লাগোর বাড়িতে তার সঙ্গে ডিনারেও যোগ দিয়েছিলেন।

গত নভেম্বরের নির্বাচনে ডেমোক্র্যাট প্রার্থী কমলা হ্যারিসকে সমর্থন দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছিল ওয়াশিংটন পোস্টের সম্পাদকীয় পর্ষদ। কিন্তু বেজোসের হস্তক্ষেপে তা আটকে যায়। ওই ঘটনায় লিবারেলদের সমালোচনার মুখে পড়ে পত্রিকাটি। বেজোস সে সময় আত্মপক্ষ সমর্থন করলেও তার ওই সিদ্ধান্তের কারণে পত্রিকাটি ২ লাখ ৫০ হাজারের বেশি গ্রাহক হারায়।

অ্যান টেলনেসের বাদ পড়া ওই কার্টুনে লস এঞ্জেলেস টাইমসের মালিক প্যাট্রিক সুন-শিয়ংকেও চিত্রিত করা হয়েছে। লস এঞ্জেলেস টাইমসও নির্বাচনের সময় হ্যারিসকে সমর্থন দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়ে পরে মালিকের হস্তক্ষেপে পিছিয়ে যায়।