কে এই ব্রিগেডিয়ার জেনারেল ইয়াহিয়া সারি?
প্রকাশ: ০২ জানুয়ারি ২০২৫, ০৯:৫৮ পিএম
ব্রিগেডিয়ার জেনারেল ‘ইয়াহিয়া সারি’ সাম্প্রতিক সময়ে সংবাদ জগতের খুবই জনপ্রিয় ব্যক্তিত্ব। তিনি ইয়েমেনের সশস্ত্র বাহিনীর মুখপাত্র। ২০১৮ সালে এই পদে তার নিয়োগের পর থেকে ইয়েমেনি জনগণের প্রতিরোধ এবং ফিলিস্তিনি জনগণের প্রতি তাদের সমর্থনে বিবৃতি দেওয়ার মধ্য দিয়ে বিশ্বব্যাপী জনদৃষ্টি আকর্ষণ করতে সক্ষম হয়েছেন।
ইয়াহিয়া সারির একটি ভিডিও সম্প্রতি সোশ্যাল নেটওয়ার্কে ভাইরাল হয়েছে। ওই ভিডিওতে তিনি শিষ্টাচারের বিশেষ ভাষায় ইয়েমেনকে টার্গেট করার জন্য আমেরিকা এবং ইসরাইলি সরকারকে সতর্ক করে বিবৃতি দিয়েছেন।
ওই ভিডিওতে ব্রিগেডিয়ার জেনারেল ইয়াহিয়া সারি আমেরিকা এবং ইসরাইলকে সতর্ক করে দিয়ে বলেছেন, শত্রুদের যদি রেডলাইন থেকেও থাকে, আমাদের সেই রেডলাইন নেই। আমরা এমনসব লক্ষ্যবস্তুতে আঘাত করব, যা শত্রু তো দূরের কথা, স্বয়ং ইয়েমেনি জাতি এমনকি অন্যান্য দেশেরও চিন্তার বাইরে।
সোশ্যাল মিডিয়া ব্যবহারকারীরা সুন্দর কণ্ঠের অধিকারী এই ইয়াহিয়া সারিকে, শত্রুরা যাকে ভয় পায়, তাকে নিয়ে ব্যাপক লেখালেখি করছেন।
ইয়াহিয়া সারির বিবৃতির স্বর ও ধরনের কথা উল্লেখ করে ‘সালওয়া ওমর’ নামের এক এক্স ব্যবহারকারী একটি টুইট করেছেন। তিনি লিখেছেন, এই ভয়েসটি নজিরবিহীন ও অনন্য।
বেদুইন (Bedouine) এক্স সোশ্যাল নেটওয়ার্কের আরেক ব্যাবহারকারী ইয়াহিয়া সারিকে নিয়ে শত্রুদের ভয়ভীতি সম্পর্কে এক টুইটে লিখেছেন, আমেরিকা এবং ইসরাইল ইয়াহিয়া সারিকে ভয় পায়।
সাইয়্যেদ মোহাম্মদ নকিব নামের আরেক ব্যবহারকারী এক টুইট বার্তায় লিখেছেন, শত্রুদের সঙ্গে যুদ্ধক্ষেত্র থেকে ইয়াহিয়া সারি যেসব বার্তা দেন, সেখানে তিনি আধিপত্যবাদী শক্তগুলোর বিরুদ্ধে প্রতিরোধ অব্যাহত রাখার ওপর ব্যাপক জোর দেন। সেই বার্তায় নকিব আরও বলেছেন, আপনি একজন ইয়েমেনি বীর, আল্লাহ আপনাকে রক্ষা করুন।
কে এই ইয়াহিয়া সারি?
ইয়াহিয়া সারি ১৯৭০ সালে ইয়েমেনের সা'দা শহরে জন্মগ্রহণ করেন। তার শৈশব কেটেছে খুবই সাধারণ একটা পরিবেশে। অথচ অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক দিক থেকে তা ছিল খুবই চ্যালেঞ্জিং।
তিনি রাষ্ট্রবিজ্ঞানে স্নাতক এবং স্নাতকোত্তর ডিগ্রি অর্জন করেছেন। সমর বিজ্ঞানের প্রতি তার ছিল ভীষণ আগ্রহ। ওই আগ্রহের কারণে এক সময় তিনি অল্প বয়সেই ইয়েমেনের একটি সামরিক প্রতিষ্ঠানে যোগদান করেন। এ সময় ইয়াহিয়া সারি সামরিক ও ব্যবস্থাপনার ক্ষেত্রে ব্যাপক প্রশিক্ষণ গ্রহণ করেন। তিনি তার মেধা ও দক্ষতা দিয়ে ধীরে ধীরে ইয়েমেনি সেনাবাহিনীতে উচ্চ পদ লাভ করেন। এই অভিজ্ঞতাগুলো কৌশলগত অভিযান এবং মিডিয়ার সঙ্গে সম্পর্কের ক্ষেত্রে পরবর্তীকালে তার সাফল্যের ভিত্তি হয়ে ওঠে।
ইয়েমেনে যুদ্ধ শুরুর ঘটনায় ২০১৫ সালে সংঘাতের তীব্রতা যখন বৃদ্ধি পায়। ইয়াহিয়া সারি তখন দ্রুত ইয়েমেনি সশস্ত্র বাহিনীতে যোগদান করেন। অতি দ্রুতই তিনি দেশটির সেনাবাহিনীর একজন বিশিষ্ট পদমর্যাদার কর্মকর্তা হয়ে ওঠেন। ২০১৭ সালে কর্নেল পদে উন্নীত হয়ে ইয়েমেনি সশস্ত্র বাহিনীর মনস্তাত্ত্বিক যুদ্ধ বিভাগের প্রধান হিসেবে নিযুক্ত হন। ২০১৮ সালের মাঝামাঝি তিনি সশস্ত্র বাহিনীর নৈতিকতা বিষয়ক বিভাগীয় প্রধান নিযুক্ত হন এবং ব্রিগেডিয়ার জেনারেল পদে উন্নীত হন।
আনসারুল্লাহ বাহিনীর মধ্যেও তার একটি বিশেষ অবস্থান রয়েছে। ২০১৮ সালে ইয়েমেনের সুপ্রিম পলিটিক্যাল কাউন্সিল তাকে সশস্ত্র বাহিনীর সরকারি মুখপাত্র হিসেবে নিয়োগ দিয়েছে। ইয়েমেনের ইতিহাসের সবচেয়ে সংবেদনশীল সময়ে এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছিল। ওই সময় দেশটি সৌদি জোটের ভয়াবহ হামলার শিকার হয়েছিল।
ওই পদের জন্য ইয়াহিয়া সারিকে নির্বাচন করার মানে হলো- তার সামরিক ও ব্যবস্থাপনাগত ক্ষমতা ও দক্ষতার ওপর সুপ্রিম পলিটিক্যাল কাউন্সিলের পরিপূর্ণ আস্থা রয়েছে।
ইয়াহিয়া সারিকে ইয়েমেনি সশস্ত্র বাহিনীর সরকারি মুখপাত্র হিসেবে নিয়োগের পর থেকে তিনি গণমাধ্যমের তথ্য ও সমন্বয়ের ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন। ইয়াহিয়া সারি ইয়েমেনি মিডিয়া, যেমন আল-মাসিরা টিভি, টেলিগ্রাম চ্যানেল এবং তার টুইটার অ্যাকাউন্ট ইত্যাদির মাধ্যমে সরকারি বক্তব্য ও বিবৃতি প্রচার করে ইয়েমেনি সশস্ত্র বাহিনীর মতামত ও অবস্থান বিশ্ব জনমতের কাছে পৌঁছে দিতে সক্ষম হয়েছেন।
বিদেশি হুমকির বিরুদ্ধে প্রতিশোধমূলক অভিযান পরিচালনা করা তার সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ কাজগুলোর একটি। বিশেষ করে লোহিত সাগরে ইসরাইলি বাণিজ্যিক জাহাজে হামলা চালানো এবং আমেরিকার আগ্রাসী ড্রোনগুলোকে লক্ষ্যবস্তু করা তার কৌশলগত অভিযানের অংশ। এই অভিযানগুলো ইয়েমেনের শত্রুদের বিরুদ্ধে এক ধরনের প্রতিরোধ গড়ে তুলতে সাহায্য করেছে।
সেই সঙ্গে এটাও প্রমাণ করেছে যে, ইয়েমেনি বাহিনী বিদেশীদের জটিল হুমকি মোকাবিলা করার ক্ষমতা রাখে। সূত্র: তাসনিম নিউজ