এক নারীকে ধর্ষণ, অভিযুক্ত স্বামীসহ অর্ধশতাধিক পুরুষ
আন্তর্জাতিক ডেস্ক
প্রকাশ: ১১ ডিসেম্বর ২০২৪, ১০:৫০ পিএম
ফ্রান্সের দক্ষিণাঞ্চলীয় আদালতে একটি নজিরবিহীন মামলা চলছে। সেখানে গিসেল পেলিকোট (৭২) নামে এক নারীকে দিনের পর দিন ধর্ষণের দায়ে অভিযুক্ত হয়েছেন তার স্বামীসহ অর্ধশতাধিক পুরুষ।
গিসেলের স্বামী ডোমিনিক পেলিকোট (৭২) তার স্ত্রীকে এক দশক ধরে ওষুধ দিয়ে অজ্ঞান করে রেখেছিলেন এবং তার নির্দেশেই এই অপরাধ সংঘটিত হয়।
ডোমিনিক নিজেই এই অপরাধের সব দায় স্বীকার করেছেন এবং আদালতে বলেছেন, অভিযুক্ত সবাই দোষী। তিনি এই নৃশংস কাজের ভিডিও ধারণ করেছিলেন, যা এখন মামলার গুরুত্বপূর্ণ প্রমাণ।
অভিযুক্তদের প্রোফাইল
অভিযুক্তদের মধ্যে যেমন রয়েছে যুবক, বৃদ্ধ, বর্লি, পাতলা, কালো এবং সাদা। তেমনি রয়েছেন দমকলকর্মী, লরি চালক, সেনা, নিরাপত্তারক্ষী, সাংবাদিক এবং ডিজেও। তাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ প্রমাণিত হলে সম্মিলিতভাবে তারা ৬০০ বছরেরও বেশি কারাদণ্ডের মুখোমুখি হতে পারেন।
বিচারে অভিযোগ ও প্রতিরক্ষা
ফ্রান্সের ধর্ষণ আইন অনুযায়ী, যে কোনো যৌন কার্যকলাপ যেখানে ‘হিংসা, বাধ্য করা, হুমকি বা চমক’ জড়িত, তার সবই ধর্ষণ হিসাবে বিবেচিত হয়।
বেশিরভাগ অভিযুক্তের দাবি, তারা জানতেন না গিসেল তার সম্মতি দিতে সক্ষম ছিলেন না। এ বিষয়ে তাদের আইনজীবীরা বলেন, ‘যদি অপরাধের উদ্দেশ্য না থাকে, তাহলে তা অপরাধ নয়’।
এছাড়াও কিছু অভিযুক্ত তাদের এহেন কর্মকে অস্বীকার না করে বলেছেন, তারা ডোমিনিক পেলিকোট দ্বারা প্রতারিত বা প্ররোচিত হয়েছিলেন। অন্যরা দাবি করেছেন, তাদের ওপর মাদক প্রয়োগ করা হয়েছিল।
ভুক্তভোগীর বক্তব্য
এ বিষয়ে ভুক্তভোগী গিসেল পেলিকোট আদালতে স্পষ্টভাবে বলেছেন, ‘তারা আমাকে সম্পূর্ণ সচেতন অবস্থায় ধর্ষণ করেছেন। তাদেরকে বাধ্য করা হয়নি, সে সময় তাদের মাথায় কোনো বন্দুক বা অস্ত্র ধরা ছিল না’।
৭২ বছর বয়সি এই নারী আরও বলেন, ‘কেন তারা পুলিশের কাছে যায়নি? এমনকি একটি অজ্ঞাত কলও আমাকে বাঁচাতে পারত। কিন্তু কেউই তা করেনি’।
অভিযুক্তদের জীবনের প্রতিচ্ছবি
আদালতে অভিযুক্তদের ব্যক্তিগত ইতিহাস তুলে ধরা হয়েছে। যেখানে অনেকেই নিজেদের শৈশবের নির্যাতনের কথা উল্লেখ করেছেন। এদের কেউ কেউ শৈশবে যৌন নির্যাতনের শিকার হয়েছেন, কেউ আবার পরিবার ছাড়াই বেড়ে উঠেছেন।
অন্যদিকে অভিযুক্তদের পরিবারের সদস্যরা তো এ ঘটনায় হতবাক। তাদের অনেকেই এখনো বিশ্বাস করতে পারছেন না যে, তাদের কাছের মানুষটি এমন অপরাধে জড়িত হতে পারে।
রায়ের প্রত্যাশা
এই মামলার রায় আগামী সপ্তাহে ঘোষণা করা হবে। অভিযুক্তদের মধ্যে কেউ কম, কেউ বেশি সাজা পেতে পারেন। তবে এই ঘটনা ফ্রান্সজুড়ে আলোড়ন সৃষ্টি করেছে, যা ফরাসী সমাজে নারীদের নিরাপত্তা এবং বিচার ব্যবস্থার ভূমিকা নিয়েও নতুন করে প্রশ্ন তুলছে। সূত্র: বিবিসি