বাশারের মসনদ নড়বড়ে করে দেওয়া কে এই আল-জোলানি?
আন্তর্জাতিক ডেস্ক
প্রকাশ: ০৬ ডিসেম্বর ২০২৪, ০৪:৩৪ পিএম
আবু মুহাম্মদ আল জোলামি। ছবি : সংগৃহীত
মাত্র তিন দিনের মাথায় সিরিয়ার আলেপ্পো দখলের পর এবার কৌশলগতভাবে গুরুত্বপূর্ণ শহর হামা দখলেরও দ্বারপ্রান্তে বিদ্রোহীরা। দুই যুগ ধরে মধ্যপ্রাচ্যের এই দেশটিকে শাসন করা আসা বাশার আল আসাদকে হঠাৎ কোণঠাসা করে আলোচনায় বিদ্রোহী গোষ্ঠী হায়াত তাহরির আল শাম। শুধু তাই নয়, এই অভিযানে বিশ্বজুড়ে ব্যাপক কৌতূহল তৈরি হয়ে গোষ্ঠীটির প্রধান আবু মুহাম্মদ আল জোলানি সম্পর্কে।
১৯৮২ সালে সৌদি আরবে জন্ম নেওয়া ৪২ বছর বয়সি আবু মুহাম্মদ আল জোলানির আসল নাম মুহাম্মদ আল সারা। মাত্র ৭ বছর বয়সে রিয়াদ থেকে পরিবারের সঙ্গে পাড়ি জমান সিরিয়ায়। দখলদার ইসরাইলের দখল করা গোলান মালভূমি ছিল তার পূর্ব-পুরুষদের আদিনিবাস।
২০০৩ সালে তিনি ইরাক চলে যান এবং আল-কায়েদা (ইরাক) সদস্য হিসেবে যুক্ত হন। সংগঠনটি ওই বছরের আমেরিকার আক্রমণের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তোলে।
২০০৬ সালে তাকে ইরাকে আমেরিকান বাহিনী আটক করে এবং পাঁচ বছর বন্দি রেখে পরবর্তীতে সিরিয়ায় আল-কায়েদার শাখা আল-নুসরা ফ্রন্ট প্রতিষ্ঠার কাজ দেয়। এই গোষ্ঠী সিরিয়ার বিরোধী অঞ্চলে বিশেষত ইদলিবে প্রভাব বিস্তার করে।
পরে ২০১১ সালে মুক্তি পান এই বিদ্রোহী নেতা। আর সেই সময়ই সিরিয়ায় আসাদ সরকারের পতনে চলছে তুমুল আন্দোলন। এই সুযোগে দেশটিতে বাগদাদি আল-কায়দার শাখা হিসাবে আল নুসরা ফ্রন্ট গড়ে তোলার দায়িত্ব দেন জোলানির হাতে। যা তাকে এনে দেয় ব্যাপক পরিচিতি এবং ক্ষমতা। আর এই সুযোগটি খুব ভালোভাবে ব্যবহার করেন জোলানি। সিরিয়ার ইদলিব অঞ্চলে তৈরি করেন তার বাহিনীর শক্ত অবস্থান।
যার ফলে আল-কায়দার সিরিয়া শাখা হিসাবে নুসরা ফ্রন্টকেও সন্ত্রাসী সংগঠনভুক্ত করে যুক্তরাষ্ট্র। একই সঙ্গে আল-জোলানির মাথার দাম ধার্য হয় ১ কোটি ডলার।
২০১৪ সালে আলজাজিরাকে একটি সাক্ষাৎকার দিয়েছিলেন আল-জোলানি। সেই সাক্ষাৎকারে জানিয়েছিলেন ইসলামি শরিয়া অনুযায়ী সিরিয়া শাসন করতে চান তিনি। তাই সেখানে আলাউত, শিয়া, ত্রুশ সম্প্রদায় এবং খ্রিস্টানদের কোনো জায়গা নেই।
এদিকে ২০১৬ সালে আলজোলানি নাটকীয়ভাবে এক ভিডিও বার্তায় হঠাৎ করেই ঘোষণা দেন আল-কায়দার সঙ্গে পুরোপুরিভাবে সম্পর্ক ছিন্ন করেছেন তিনি। এরপর এক বছরের মাথায়ই প্রতিষ্ঠা করেন হায়াত তাহরির আল-শাম। একই সঙ্গে পরিবর্তন করেন নিজের বেশভুসা এবং কথার ধরনও। পাশাপাশি ঘোষণা দেন তার শাসনে সংখ্যালঘুদের অধিকার নিশ্চিত করা হবে।
২০২১ সালে মার্কিন অনুসন্ধানমূলক প্রোগ্রাম ফ্রন্টলাইনকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে তিনি বলেছিলেন, যুদ্ধ পরিস্থিতি সামাল দিতে ‘আইএসআইএস’ এমন কিছু নীতি সংযোজন করেছিল যা বহু মানুষের মৃত্যু কারণ হয়ে দাঁড়িয়ে ছিল। তাই নিরীহ মানুষের মৃত্যুর কারণ তিনি হতে চান না বলেই তিনি সরে এসেছেন।
প্রসঙ্গত, সিরিয়ায় প্রায় ৭০ শতাংশ এলাকা নিয়ন্ত্রণ করে আসছিলেন প্রেসিডেন্ট আসাদ। তবে গত সপ্তাহে হায়াত তাহরির আল-শাম আলেপ্পো দখলের মধ্য দিয়ে আবারও জানান দেওয়া হলো গৃহযুদ্ধ শেষ হয়নি সিরিয়ায়।