অভিশংসনের মুখে দ. কোরিয় প্রেসিডেন্ট ইউন
আন্তর্জাতিক ডেস্ক
প্রকাশ: ০৪ ডিসেম্বর ২০২৪, ০৯:৪৬ পিএম
দক্ষিণ কোরিয়ায় সম্প্রতি মার্শাল ল জারি করেন দেশটির প্রেসিডেন্ট ইউন সুক-ইওল। তবে কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই তা বাতিল করতে বাধ্য হন তিনি।
ইউনের এই পদক্ষেপে দেশটির পার্লামেন্ট এবং সেনাবাহিনীর মধ্যে বিশৃঙ্খলার সৃষ্টি হয়। এমনকি বিরোধী দলগুলো ইউনের বিরুদ্ধে অভিশংসনের প্রস্তাবও উত্থাপন করেছে।
প্রেসিডেন্ট ইউন মঙ্গলবার সন্ধ্যায় মার্শাল ল জারি করেন। তিনি ঘোষণা করেন, ‘উত্তর কোরিয়াপন্থি শক্তির হুমকি থেকে দেশকে রক্ষা ও সাংবিধানিক শৃঙ্খলা বজায় রাখতে’ মার্শাল ল জরুরি হয়ে উঠেছে।
তবে তার এই পদক্ষেপকে দেশটিতে রাজনৈতিক কার্যক্রম নিষিদ্ধ এবং গণমাধ্যমের ওপর নিয়ন্ত্রণ আরোপের চেষ্টা হিসেবে দেখা হয়।
ঘোষণার পরই সশস্ত্র সেনারা সিউলের জাতীয় সংসদ ভবনে প্রবেশের চেষ্টা করে। তবে সংসদ সদস্যদের প্রতিরোধ ও কর্মীদের ফায়ার এক্সটিংগুইশার ব্যবহার তাদের থামিয়ে দেয়।
এর পরই পার্লামেন্টে ১৯০ জন সদস্য উপস্থিত থাকাকালীন সর্বসম্মতভাবে মার্শাল ল বাতিলের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। প্রেসিডেন্ট ইউন তার ঘোষণার ছয় ঘণ্টার মধ্যেই মার্শাল ল প্রত্যাহার করেন।
অর্থনীতি ও বাজারে প্রতিক্রিয়া
মার্শাল ল ঘোষণার পর দক্ষিণ কোরিয়ার স্টক মার্কেট প্রায় ১.৩% পড়ে যায় এবং হুন্দাই মোটর এবং অন্যান্য প্রতিষ্ঠান তাদের কর্মীদের বাসা থেকে কাজ করার নির্দেশ দেয়।
অর্থমন্ত্রী চোই স্যাং-মক বলেন, বাজার স্থিতিশীল রাখতে সরকার সীমাহীন তরল অর্থ সরবরাহ করবে।
এদিকে বিরোধী পক্ষের ছয়টি দল বুধবার সংসদে প্রেসিডেন্টের বিরুদ্ধে অভিশংসনের প্রস্তাব উত্থাপন করে। ডেমোক্রেটিক পার্টির আইনপ্রণেতা কিম ইয়ং-মিন বলেন, ‘আমরা গণতন্ত্রকে ধ্বংস হতে দিতে পারি না’।
অভিশংসনের জন্য অবশ্য পার্লামেন্টে দুই-তৃতীয়াংশ ভোট প্রয়োজন। অভিশংসনের পর সাংবিধানিক আদালতে বিচার প্রেসিডেন্টের হবে, যেখানে ৯ জন বিচারকের মধ্যে ৬ জনের অনুমোদন লাগবে।
এদিকে বুধবার সন্ধ্যায় দেশটির নাগরিক এবং শ্রমিক সংগঠনগুলো মোমবাতি মিছিল করে প্রেসিডেন্টের পদত্যাগের দাবি জানায়।
মন্তব্য ও প্রতিক্রিয়া
মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিঙ্কেন ইউনের মার্শাল ল প্রত্যাহারের সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানিয়ে রাজনৈতিক মতভেদ শান্তিপূর্ণভাবে সমাধানের আশা প্রকাশ করেন।
এদিকে প্রেসিডেন্ট ইউনের জনপ্রিয়তা প্রায় ২০ শতাংশে নেমে এসেছে এবং তার বিরোধীদের সংখ্যাগরিষ্ঠতা রয়েছে। রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, এ ঘটনা দক্ষিণ কোরিয়ার গণতন্ত্রের ওপর বড় প্রভাব ফেলতে পারে।
একই সঙ্গে প্রেসিডেন্ট ইউন সুক-ইওলের নেতৃত্বের প্রতি আস্থা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। মার্শাল ল ঘোষণার মতো অপ্রত্যাশিত পদক্ষেপ গণতন্ত্রের ভবিষ্যৎ এবং দেশটির স্থিতিশীলতায় গভীর প্রভাব ফেলতে পারে। সূত্র: রয়টার্স